জামাইষষ্ঠী কেন পালন করা হয়? এবছর ষষ্ঠীর দিনক্ষণ জেনে নিন

একে করোনা অতিমারি, তার উপর দিন দিন জিনিসপত্র, শাকসবজির যে হারে দাম বৃদ্ধি হচ্ছে, আর তার মধ্যেই পড়েছে জামাইষষ্ঠীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্রত-অনুষ্ঠান।

জামাইষষ্ঠী কেন পালন করা হয়? এবছর ষষ্ঠীর দিনক্ষণ জেনে নিন
ছবিটি প্রতীকী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 13, 2021 | 10:04 AM

সাধারণত, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে পালন করা হয় জামাইষষ্ঠী। এ বছর আগামী ১লা আষাঢ় অর্থাত ১৬জুন, বুধবার পালিত হবে এই শুভঅনুষ্ঠান। হিন্দু মতে, ষষ্ঠী হলেন সন্তানাদির দেবী। তিনি গর্ভবতী হওয়ার আশীর্বাদ দেন। জামাইষষ্ঠীর মুখ্য উদ্দেশ্য হল, মাতৃত্ব, বংশবৃদ্ধি । মেয়ে যাতে সুখে শান্তিতে দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারে, তার জন্য মঙ্গল কামনাতেই এই ষষ্ঠী পালন করা হয়। মেয়ের স্বামীকে পরম আদরে পঞ্জব্যঞ্জনে সাজিয়ে দেওয়া হয় জামাইয়ের পাত। আম-কাঁঠাল-দাম, ইলিশ মাছ, কচি পাঁঠার মাংস, রকমারি মিষ্টি, দই-সন্দেশ সহযোগে দুর্দান্ত ভুরিভোজ। আগেকার দিন নিয়ম ছিল, জামাই আদর না করলে মেয়ে সুখী দাম্পত্যজীবন কাটাতে পারে না। তাই জামাইকে আদর-যত্ন করার জন্য ও কন্যা যাতে দ্রুত গর্ভবতী হয়ে ওঠে, সেই লক্ষ্যেই জামাইষষ্ঠীর মতো রীতি চালু হয়ে আসছে।

জামাইষষ্ঠী কেন পালন করা হয়

দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একসময় রীতি বা প্রথা ছিল যে যতনদিন না কন্যার কোনও সন্তান হচ্ছে, ততদিন বাপের বাড়ি থেকে কেউ অর্থাত বাবা-মা কন্যার শ্বশুড়িবাড়িতে পা দেবেন না। এদিকে, আগেকার দিনে অল্পবয়সে গর্ভবতী হয়ে যাওয়াতে নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিত, অপুষ্টির কারণে সন্তানধারণে সমস্যা ও সন্তানের মৃত্যুর ফলে বাড়ির মেয়ের আর বাড়িতে আসা হত না। এদিকে মেয়ের চিন্তাতে ঘুম উড়ে যেত বাবা-মায়ের। দীর্ঘদিনের অপেক্ষাতে মন বসত না মেয়ের বাবা-মায়ের। তাই মেয়ের মুখ দেখতে জামাই আদরের পরিকল্পনা করা হলে জ্যৈষ্ঠামাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে জামাইষষ্ঠী হিসেবে পালন করা হয়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারগুলির ভোল বদলেছে। কন্যার মুখ দেখার জন্য এই নিয়ম পালিত হলেও. বর্তমান দিনে সংস্কারের মূল্য বিশেষ গুরুত্ব পায় না। তবে মেয়ে-জামাইকে নিমন্ত্রণ করে বিশাল আয়োজন করে পালন করা হয় এই ষষ্ঠী।

আরও পড়ুন: সারাবছর শনি দেবকে তুষ্ট রাখতে কী করবেন? কী করবেন না?

বৈদিক যুগ থেকেই জামাইষষ্ঠীর রীতি চলে আসছে। জামাইষষ্ঠী হল একটি লোকায়ত ব্রত। ষষ্ঠী দেবীকে তুষ্ট করার জন্যই এই ব্রত-নিয়মগুলি পালন করা হয়। এইদিন ঘটা করে শাশুড়িরা যষ্ঠীর পুজো করেন। জামাইকে নেমন্তন্ন করে জামাইপুজো করেন শাশুড়িরা। পুজোর সময় প্রথমে কপালে চন্দন ও দইয়ের ফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ করেন। এরপর দীর্ঘায়ুর কামনায় তাঁকে তেল-হলুদের ফোঁটা বা সুতো হাতের কবজিতে বেঁধে দেওয়া হয়।

কথিত আছে, বেড়াল হল ষষ্ঠীর বাহন। একটি পরিবারে দুটি বউ ছিল। লোভী ছোট বউ বাড়িতে যেদিন যেদিন মাছ ও ভাল ভাল খাবার রান্না করা হত, সেদিন সে লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়ে নিত আর দোষ দিত বাড়ির বিড়ালের উপর। এমন অভিযোগ শোনামাত্রই দেবী ষষ্ঠী রেগে যান। যার কারণে ছোট বউয়ের সাত পুত্র ও এক কন্যার প্রাণ হরণ করেছিলেন দেবী। জঘন্য অপরাধের জেরে তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে মনের দুঃখে ছোট বউ কাঁদতে থাকে। ষষ্ঠী এক বৃদ্ধার বেশে তাঁর কাছে গেলে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে ও তাঁর পূর্বের আচরণের কথা স্মরণ করিয়ে নিজের রূপ ধারণ করেন দেবী ষষ্ঠী। ক্ষমা চাইলে তাঁকে ক্রমে ক্রমে সন্তান ফিরিয়ে দেন তিনি। এর পর থেকেই ষষ্ঠী পুজোর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে।