জগদ্ধাত্রী পুজোর কথা বললেই প্রথম আমাদের মাথায় আসে চন্দননগরের কথা। আরেকটি যে জায়গার কথা মাথায় আসে তা হল কৃষ্ণনগর। শোনা যায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে তাঁর হাত ধরেই নাকি এই বঙ্গে শুরু হয়েছিল দেবীর হৈমন্তিকা। চন্দননগর-কৃষ্ণনগরের বুড়িমা, বড়মা, রানিমা’র পুজোর কথাও তাই ফেরে লোকের মুখে মুখে। তবে আপনি কি জানেন বর্ধমানের কালনাতেও কিন্তু আছে এক প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজো। যার কাহিনি হার মানাবে এই সব পুজোকে।
বর্ধমানের কালনার ধাত্রীগ্রাম। এখানেই দীর্ঘ ৩০০ বছর ধ্রে পূজিত হয়ে আসছেন দেবী জগদ্ধাত্রী। কথিত, ধাত্রীমাতা জগদ্ধাত্রীর নামেই এই জায়গার নাম হয়েছে ধাত্রীগ্রাম।
আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে নদীয়ায় ছিল ব্রহ্মশাসন নামে এক জনপদ। সেই জনপদের বাসিন্দা চন্দ্রপতি গোষ্ঠীর এক পণ্ডিত সপরিবার ধাত্রীগ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। নিজ হাতে সংস্কৃত শিক্ষার গুরুকুল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। নবদ্বীপ থেকে সেই সময়ে পণ্ডিতরা এই টোলে এসে শিক্ষা দান করতেন। শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সেই পণ্ডিত।
জনশ্রুতি সেই পরিবারের গৃহবধূ স্বপ্নাদেশ পান, বাড়ির কাছেই পুকুরে দেখা মেলে দেবী জগদ্ধাত্রীর। দেবীর ইচ্ছাতেই হোগলা পাতার মন্ডপ করে শুরু হয় দেবীর আরাধনা। তবে দেবী এখানে ধরা দেন ভিন্ন রূপে। দেবী আসীন নরসিংহ বাহনে। স্থানীয় মানুষ এই জগদ্ধাত্রীকে ধাত্রীদেবী হিসাবে পুজো করতে শুরু করেন তখন থেকেই।
৩০০ বছর আগে যে রীতি মেনে পুজোর শুরু হয়েছিল, আজও সেই রীতিই মেনেই চলে মাতৃ আরাধনা। নবমীতে এখানে মায়ের কাছে ভোগ হিসাবে অর্পণ করা হয় মাছের নানা পদ। ভোগ হিসাবে দেওয়া হয় বাসমতি চালের খিচুড়ি, তেরো রকমের ভাজা, তরকারি, পায়েস-সহ মাছের নানা পদ। পুজোর কয়েক দিন ধরে গ্রামজুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ।