টানা ১০দিন ধরে ওনাম উৎসব পালিত হয় কেরালায়! প্রতিটি দিনের জন্য রয়েছে আলাদা তাৎপর্য
খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সাথে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান কেরালার এক ঐতিহাসিক সত্য।
কেরালারা সবচেয়ে বড় এবং সকলের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এক উৎসব। এই উৎসব সার্বজনীন ও ধর্ম নিরপেক্ষ। প্রতিবছর অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দশ দিনব্যাপী চলে এই ওনাম উৎসব। এই দশ দিন নানা আচার ও আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পালিত হয়। তবে উৎসবের প্রথম ও শেষ দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
১ম দিন: আত্তম
ওনামের দশদিন আগে হল ‘আত্তম’ নক্ষত্র। সকালে স্থানীয় মন্দিরে দেবতার কাছে প্রসাদ নিবেদন করে ওনাম উৎসবের আয়োজন শুরু হয়। সেদিন প্রত্যেক বাড়ির উঠোনে নানা বর্ণের ফুলের এক বৃত্ত এঁকে ওনাম উৎসবের সূচনা হয়। এই আল্পনাকে বলা হয় পোক্কালম। প্রতিদিন এই বৃত্তের সংখ্যা বাড়ে একটি করে। অর্থাৎ, ওনাম দিনের সকালে বৃত্তের সংখ্যা দাঁড়ায় দশটি।
২য় দিন: চিথিরা
উৎসবের দ্বিতীয় দিন সকলে তাদের বড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন। স্থানীয়রা উৎসব আবহে ঘর-বাড়িতে রং করে, আলোকসজ্জা দিয়ে বাড়ির চারপাশ সাজিয়ে তোলে। বাড়ির সদর দরজায় আলপনা আঁকেন মহিলারা।
৩য় দিন: চোধি
উৎসবের তৃতীয় দিন কেনাকাটার উৎসব।প্রত্যকেই নিজেদের সাধ্যমতো পরিবারের জন্য এবং আত্মীয়-স্বজনদনের জন্য উপহার সামগ্রী, উৎসবের পোশাক কিনে থাকেন।
৪র্থ দিন: ভিসাকাম
উৎসবের এই দিন দুপুরে আয়োজন করা হয় মহাভোজের। স্থানীয় মালয়ালম ভাষায় তাকে বলা হয় সাদ্য। কেরালার প্রতিটি বাড়িতেই তা বানানো হয়। একেবারে যাকে বলে পঞ্চব্যঞ্জন সহকারে রান্না। তিনরকম কলা ভাজা, পাঁপড়, থোরান, মেজহুক্কুপুরাত্তি, কালান, ওলান, আভিয়াল, সাম্বার, ভাত, ডাল, চার রকম আচার, দুই-তিন পদের পায়েস-সহ ২৬টির বেশি রান্নার পদ থাকে খাবারের তালিকায়।
৫ম দিন: আনিঝাম
ওনামে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হয়। কেরালা হল নদীনালা ও হ্রদের দেশ। সমুদ্রের সমান্তরালে যে লবণ হ্রদমালা রয়েছে, যাকে ব্যাক ওয়াটার বলা হয়ে তাকে, সেইসব এলাকা এই নৌকা বাইচের আদর্শ স্থান। উৎসবের পঞ্চম দিন সারা রাজ্য জুড়ে আয়োজিত হয়ে থাকে নৌকা বাইচ। এই প্রতিযোগিতায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশটি পর্যন্ত নৌকা থাকে, যা দেখার জন্য হ্রদ বা নদীর ধারে লোকেরা ভিড় করে নিজ নিজ গ্রামের দলকে উৎসাহ দেন।
৬ষ্ঠ দিন: থিরিকেটা
উৎসবের এই দিনে পোক্কলমের আকার বাড়তে থাকে। অনেকে এই দিনটিতে প্রিয়জন, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যান। অনেকে আবার পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানাতে তাদের ভিটেমাটি থেকে ঘুরে আসেন।
৭ম দিন: মুলাম
উৎসবের সপ্তম দিনে উৎসব যেন আরও জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই মেতে ওঠে উৎসবের আনন্দে। মন্দিরগুলোতে বিশেষ প্রসাদ সাদ্যর আয়োজন করা হয়। বাড়িতে, উৎসবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেয়েরা কেরালার বিখ্যাত লোকনৃত্য কায়কোট্টিকলির আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও থিরুভাতিরাকলি, পুলিকলি, থুম্বি থুল্লাল ও কথাকলির মতো নৃত্যকলা পেশ করা হয়।
৮ম দিন: পুরাদম
উৎসবের অষ্টম দিনে মহাবলী ও বামন দেবতার ছোট মূর্তি এনে ফুলের সাজানোর আল্পনার মাঝে স্থাপন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে মহাবলীকে রাজ্যবাসী তাদের বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানায়। পোক্কালমের কারুকাজ যেন আরও আকর্ষণীয় ও বর্ণিল হয়ে ওঠে।
৯ম দিন: উথরাদম
ওনাম সন্ধ্যে হিসেবে দিনটি পালিত হয়। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, উৎসবের শেষ চারদিন রাজা মহাবলী রাজ্য ভ্রমণে বের হয়ে প্রজাদের আশীর্বাদ করেন। তাই উৎসবের শেষ দিনগুলো শুভদিন হিসেবে মানা হয়।
১০ম দিন: থিরুভুনাম
ওনাম উৎসবের শেষ দিন হল থিরুভুনাম। সকালে স্নান সেরে নতুন কাপড় পরে ঘরবাড়িতে নতুন করে আলপনা দেওয়া হয়। সরকারিভাবে সারা রাজ্যে আলোকসজ্জা ও আতশবাজির ব্যবস্থা করা হয়। শহরজুড়ে বের হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। এসব শোভাযাত্রায় থাকে কেরালার ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও নৃত্য।
তথ্য সৌজন্যে : RoarMedia
আরও পড়ুন: Onam 2021: ঈশ্বরের আপন দেশকে রক্ষা করেন অসুররাজ মহাবলী! কারণ জানেন?