মেদিনীপুর: অ্যাথলেটিকসে বাংলার দৈনদশা। প্যারিস অলিম্পিকে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টে বাংলা থেকে কোনও প্রতিযোগীই টিকিট পায়নি। অথচ বাংলারই এক মেয়ে অলিম্পিকে খেলতে যাবে। বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। আভা খাটুয়া। পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের কৃষক পরিবারের মেয়ে। অভাবের কারণে বাংলা ছেড়ে মহারাষ্ট্রে খেলতে যান বাংলার অ্যাথলিট। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি দফতরে দৌড়েও চাকরি জোটেনি। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে আভাকে। মিলেছে শুধুই ‘প্রতিশ্রুতি’। পরিবারকে বাঁচাতে চাকরির টানে অবশেষে মহারাষ্ট্রে পাড়ি দেন আভা। ওখানকার অ্যাসোসিয়েশনের হয়েই খেলেন বাংলার অ্যাথলিট। ভুবনেশ্বরে জাতীয় ফেডারেশন কাপে শটপাটে রেকর্ড গড়ে প্যারিসের টিকিট নিশ্চিত করেন আভা খাটুয়া। দেশ থেকে মোট ২৮ জন প্রতিযোগী ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে নীরজ চোপড়ার নেতৃত্বে অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ১৭ জন পুরুষ অ্যাথলিট আর ১১ জন মহিলা অ্যাথলিট। এই রাজ্য সংস্থার কোনও অ্যাথলিট ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড থেকে অলিম্পিকের টিকিট কনফার্ম করতে পারেননি। যিনি পেরেছেন, সেই আভা খাটুয়া রাজ্যে বঞ্চনার শিকারের পর অন্য রাজ্যে ছুটতে বাধ্য হন।
পারিবারিক কারণে বাড়িতে ফিরেছেন আভা। সেখান থেকেই ফোনে টিভি নাইন বাংলাকে আক্ষেপের সুরে আভা বললেন, ‘আমি বাংলার মেয়ে। বাংলায় ফিরতে চাই। এই রাজ্য মুখ ফিরিয়ে নেওয়াতেই চাকরির জন্য অন্য রাজ্যে খেলতে যেতে বাধ্য হই। সমস্ত ক্রাইটেরিয়া পূরণ করা সত্ত্বেও চাকরি জোটেনি। জুনিয়র পর্যায়ে জাতীয় স্তরে রেকর্ড রয়েছে। রাজ্যের হয়ে জাতীয় পর্যায়, আন্তর্জাতিক স্তরেও অনেক পদক জিতেছি। এমনকি সোনাও জিতেছি। তাও চাকরি জোটেনি। রাজ্যের বিভিন্ন দরবারে আবেদন করি। মেলে শুধুই প্রতিশ্রুতি। শুনেছি মুখ্যমন্ত্রী নাকি সবার কথা শোনেন। আমি ৫ মিনিটের জন্য ওনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমার সমস্যার কথা অবস্থা নিজের মুখে জানাতে চাই। আশা করি উনি খালি হাতে ফেরাবেন না।’
আভাকে নিয়ে রাজ্য বিজেপির একটি টুইট আচমকাই আলোড়ন ফেলে দেয়। রাজ্য বিজেপির টুইটে লেখা হয়, ‘প্যারিস অলিম্পিকে বাংলার মেয়ে আভা খাটুয়া অংশ নিচ্ছে। তবে মহারাষ্ট্রের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে সে। নিজেকে মেলে ধরার জন্য আরও এক প্রতিভাবান অ্যাথলিট রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলের আরও এক বিপর্যয়। এই মুহূর্তে শট পাটে জাতীয় রেকর্ড আভার দখলে। সাই, ক্রীড়ামন্ত্রককে অনেক ধন্যবাদ বাংলার মেয়ের জন্য এগিয়ে আসায়।’
রাজনৈতিক রং চড়েছে রাজ্য বিজেপির এই টুইটে। এ প্রসঙ্গে আভার উত্তর, ‘আমি রাজনীতির চক্করে পড়তে চাই না। খেলার জগতের মানুষ। বিজেপি আমাকে নিয়ে টুইট করায় তাদের ধন্যবাদ জানাই। যারাই আমাকে নিয়ে পজিটিভ বার্তা তুলে ধরবে তাদের সবাইকেই ধন্যবাদ জানাব।’ এত কিছুর পরও কি রাজ্যের তরফ থেকে কেউ যোগাযোগ করেছিল? অভিমান ভরা গলায় আভার উত্তর, ‘না। এমনকি আমার এলাকার বিধায়কও আমার খোঁজ নেননি।’ বাংলা থেকে এর আগেও অন্য রাজ্যে খেলতে চলে যান এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী অ্যাথলিট স্বপ্না বর্মন। এমনিতেই এই রাজ্য থেকে অ্যাথলিটরা উঠে আসছে না। বঞ্চনার শিকারে এভাবেই বাংলার উজ্জ্বল মুখরাও রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন…।