East Bengal: মেয়ে হয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলা? অতীত ভুলতে চান প্রথম মহিলা বিদেশি ফুটবলার!

Sanjida Akhter Exclusive: একটা মেয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলবে, এটাই অনেকের ভাবনার বাইরে। আমাদের এখানে আরও অনেক বেশি। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই খেলি। বাবা ছাড়া সেই অর্থে কেউই সমর্থন করেনি। বাবা বলেছিল, পড়শোনার সঙ্গে যদি খেলা চালিয়ে যেতে পারো অসুবিধে নেই। পাড়ার কয়েকজন মহিলা একসঙ্গে হলে জানেন তো কী ধরনের আলোচনা হতে পারে! আমাকে নিয়েও আলোচনা ছিল, অমুকের মেয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলে।

East Bengal: মেয়ে হয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলা? অতীত ভুলতে চান প্রথম মহিলা বিদেশি ফুটবলার!
Image Credit source: TV9 Bangla Graphics
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 17, 2024 | 3:22 PM

কলকাতা ময়দানে ইতিহাস। ইস্টবেঙ্গলে আসছেন বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলার সানজিদা আখতার। এর আগেও ভারতের ক্লাব থেকে প্রস্তাব ছিল তাঁর কাছে। তবে বসুন্ধরার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকায় আসতে পারেননি। এ বার ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব পেয়ে আর ফেরাননি সানজিদা। ক্লাবের ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছুই অজানা নয়। মুখের কথায় নয়, বিশ্বাস পারফরম্যান্সে। পরিষ্কার বার্তা- ফুটবল তো টিম গেম, দিচ্ছেন লিওনেল মেসি একা কি জেতাতে পারেন? দলের সকলকে নিয়েই জিততে চান। TV9Bangla Sports-কে ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকারে আরও নানা বিষয়েই কথা বললেন, কলকাতা ময়দানের প্রথম বিদেশি মহিলা ফুটবলার হিসেবে ইতিহাস গড়তে চলা সানজিদা আখতার।

ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব এবং সই করা নিয়ে কী বলবেন?

আচ্ছা প্রথমেই বলে রাখি, আমার নামের বানান সানজিদা। এ বার আপনার প্রশ্নে আসি, তারিখ মনে নেই। তবে মনে আছে, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে খেলা ছিল। সে সময়ই ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব আসে। আগেও ভারতের একটা ক্লাব থেকে প্রস্তাব এসেছিল। বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে চুক্তি থাকায় যাইনি। বসুন্ধরার হয়ে লিগ জয়ের হ্যাটট্রিক করেছি। ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাবটা ফেরাতে পারিনি। এটুকু জানি, ইস্টবেঙ্গল ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। অনেক পুরনো ক্লাবও। প্রচুর সমর্থন রয়েছে। আমাদের দেশের পুরুষ ফুটবলাররা অনেকেই কলকাতায় খেলেছেন। মেয়েদের মধ্যে আমিই প্রথম।

এমন একটা ক্লাবে সই করে লক্ষ্য কী?

আমার অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে সেরাটা দেওয়ার। আপাতত টিমে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। ফুটবল টিম গেম। লিওনেল মেসিও একা জেতাতে পারবে না। আমি অবশ্য টিমের বাকিদের সম্পর্কে খুব বেশি জানি না। ইস্টবেঙ্গলেও টিমের বাকিরা কেমন খেলছে, তার ওপরও সাফল্য নির্ভর করবে।

আপনি কি মেসির ফ্যান? উদাহরণটা টানলেন তাই জানতে চাইছি…

আমি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ফ্যান।

ফুটবল কেরিয়ারের শুরু কী ভাবে, সফরটাই বা কেমন ছিল?

সেই দিনগুলো যদিও পার করে এসেছি। আসলে, একটা মেয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলবে, এটাই অনেকের ভাবনার বাইরে। আমাদের এখানে আরও বেশি। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই খেলি। বাবা ছাড়া সেই অর্থে কেউই সমর্থন করেনি। বাবা বলেছিল, পড়শোনার সঙ্গে যদি খেলা চালিয়ে যেতে পারো অসুবিধে নেই। পাড়ার কয়েকজন মহিলা একসঙ্গে হলে জানেন তো কী ধরনের আলোচনা হতে পারে! আমাকে নিয়েও আলোচনা ছিল, অমুকের মেয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলে। এখন বলতে পারেন, সেই সব পর্ব পার করে এসেছি। গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে খেলাটা সহজ ছিল না। খুব ছোট্ট বয়সে একটা বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম, পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। খেলাধুলো এবং পড়া দুটোই একসঙ্গে চালিয়ে গিয়েছি। আমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি। এখন দেশের প্রধানমন্ত্রীও আমাদের গ্রামের নাম জানে। ফুটবলের মাধ্যমে পরিবর্তনটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।

ভারত, বাংলাদেশের মতো দেশে তো ক্রিকেট বেশি জনপ্রিয়, ফুটবলে আসার আগ্রহ কী থেকে?

কে বলেছে ক্রিকেট সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়? ক্রিকেট হয়তো আমার, আপনার দেশে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হতে পারে, ফুটবল সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। ক্রিকেটারদের কিন্তু সারা বিশ্ব চেনে না। ফুটবলারদের চেনে। আমার যেটুকু পরিচিতি ফুটবলের মাধ্যমেই। ইস্টবেঙ্গলে খেলতে যাচ্ছি জানার পর দেশের প্রাক্তন ফুটবলাররাও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কাগজে লেখালেখি হচ্ছে। নানা সংবাদমাধ্যম থেকেই ফোন আসছে, আমার সম্পর্কে জানতে চাইছে। সবই তো এই খেলাটার জন্যই!

ফুটবল কেরিয়ারে আপনার সেরা মুহূর্ত কোনটা?

এমন অনেক মুহূর্তই রয়েছে। এক বছর আগে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। সেটা একটা বলতে পারেন। তবে আমার কাছে অনূর্ধ্ব ১৬ স্তরে খেলার সময়ের একটা বিষয় এখনও আলাদা অনুভূতি দেয়। এএফসির প্রতিযোগিতা ছিল। সেই টুর্নামেন্টে বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে সেরা দশজনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। আমি সাত নম্বরে ছিলাম। তখন এত ছোট, বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারিনি। এখন বুঝতে পারি, সেটা কত বড় সাফল্য ছিল।

আর যদি জানতে চাই, কেরিয়ারের সেরা গোল?

আমার কাছে গোল করার চেয়ে গোল করানোতেই বেশি তৃপ্তির। লক্ষ্য থাকে, বল সাজিয়ে দেওয়ার। নিজে গোল করেছি ঠিকই, তবে গোল করানোর মধ্যে যে আনন্দটা পাই, সেটা নিজে করার মধ্যে থাকে না।