দৈত্যাকার নক্ষত্রদের মৃত্যুর কথা আমরা অনেক সময়েই শুনে থাকি। কিন্তু কেমন ভাবে মৃত্যু হয় তাদের? শেষ মুহূর্তে কেমন দেখতে লাগলে ওইসব অতিকায় বৃহৎ নক্ষত্রদের? এইসব এতদিন দেখা যায়নি। তবে এবার এক নক্ষত্রের মৃত্যু চাক্ষুষ করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কীভাবে ধীরে ধীরে একটি দৈত্যাকার নক্ষত্র ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়, নক্ষত্রের মৃত্যুর শেষ পর্যায়ের দৃশ্য কেমন দেখতে হয়— এইসবই ধরা পড়েছে একটি গ্রাউন্ড বেসড টেলিস্কোপে। এই প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞানের দুনিয়ায় এমনটা ঘটেছে। গবেষকরা রিয়েল টাইমে বিস্ফোরণে ফলে কোনও দৈত্যাকার নক্ষত্রের মৃত্যুর মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছেন।
জানা গিয়েছে, যে জায়ান্ট স্টার বা দৈত্যাকার নক্ষত্রের মৃত্যু হয়েছে, সেটি পৃথিবী থেকে ১২০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ছিল। এই নক্ষত্রের অবস্থান ছিল NGC ৫৭৩১ গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের মধ্যে। নিজে নিজেই ধ্বংস হয়েছে এই অতিকায় বৃহৎ আকারের নক্ষত্র। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেছেন নক্ষত্র ধ্বংসের মুহূর্ত ছিল একেবারে নাটকীয়। ধ্বংসের পর টাইপ- ২ সুপারনোভাতে ভেঙে পড়েছে ওই দৈত্যাকার নক্ষত্র। জ্যোতির্বিজ্ঞানের দুনিয়ায় এই প্রথম কোনও নক্ষত্রের মৃত্যু এত বিস্তারিত ভাবে চাক্ষুষ করার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত গবেষকরা।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই নক্ষত্র আকার-আয়তনে সূর্যের থেকে প্রায় ১০ গুণ বড়। বিস্ফোরণের আগে এটাই ছিল ওই নক্ষত্রের আয়তন। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই নক্ষত্রের মধ্যে ছিল হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং কোর বা কেন্দ্রস্থলে ছিল অন্যান্য আরও উপাদান। সেই সমস্ত উপাদানের মধ্যে পুড়ে যাওয়ার পর প্রবল বিস্ফোরণ হয় ওই জায়ান্ট স্টার বা দৈত্যাকার নক্ষত্রের মধ্যে। এই প্রবল বিস্ফোরণের ঘটনার সাক্ষী থাকার আগে পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস ছিল যে এই সমস্ত লাল রঙের দৈত্যাকার নক্ষত্রগুলি সুপারনোভাতে ভেঙে যাওয়ার আগে তুলনামূলক ভাবে শান্ত হয়ে যায়। যদিও সাম্প্রতিক ঘটনা চাক্ষুষ করার পর বিজ্ঞানীদের ধারণায় আমূল পরিবর্তন এসেছে।
গত ৬ জানুয়ারি জায়ান্ট স্টারের মৃত্যু সম্পর্কিত এই গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গবেষণা নক্ষত্রের মৃত্যু সংক্রান্ত আলোচনার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক তৈরি করেছে। এতদিন পর্যন্ত নক্ষত্রের মৃত্যুকে কেবলমাত্র হিংসাত্মক বিস্ফোরণ বা ভায়োলেন্ট ইরাপশন বলে মনে করতেন বৈজ্ঞানিকরা। এই গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণের পুরোধা ছিলেন ওয়েন জ্যাকবসন গ্যালান। তাঁর কথায় সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এতদিন পর স্পষ্ট ভাবে বোঝা গিয়েছে যে বৃহৎ আকারের নক্ষত্রদের মৃত্যুর ঠিক আগের পর্যায়ে তাদের অবস্থা কেমন থাকে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জগতে এই আবিষ্কার নিঃসন্দেহে একটি দারুণ ব্যাপার।
আরও পড়ুন- Water On Moon: জল রয়েছে চাঁদের মাটিতে! জানাল চাঁদে পাঠানো চিনের মহাকাশযান Chang’e 5
আরও পড়ুন- Perseverance Rover: মার্স রোভার পারসিভের্যান্সের রোবোটিক আর্মে আটকে নুড়ি-পাথর, নমুনা সংগ্রহে সমস্যা