Doctor’s Protest: ডাক্তারদের আন্দোলনের ১০৯ বছর! ধর্মঘটের এই ইতিহাস জানলে চমকে যাবেন
Doctor's Protest: জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনায় সেদিন বেরিয়েছিল সমাধানসূত্র। তবে ১৯৮৩ সালে তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী আলোচনা, কথাবার্তার ধার ধারেননি। সেবারও দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের চিকিত্সকরা। হাসপাতালে চিকিত্সা পরিষেবা অচল হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। মার্চে যে আন্দোলন শুরু হয় তা গড়িয়েছিল অক্টোবরে। অক্টোবরের এক রাতে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ঢুকে চিকিত্সকদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সেই ঘটনায় ২৮ জন চিকিত্সক আশঙ্কাজনকভাবে চোট পান বলে দাবি করেছিল চিকিত্সক সংগঠন।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে সমাধানসূত্র এখনও অধরা। গতকাল বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে নবান্নে গিয়েও ফিরে আসেন আন্দোলনকারীরা। আজও দিনভর কার্যত কিছুই হল না। এসব আপনারা সবটাই জানেন। শুরুতেই ফিরব, ১৯১৫ সালের একটা দিনে, ঠিক ১০৯ বছর আগের ঘটনা। আর কাকতালীয়ভাবে দিনটা ছিল আজকের দিন, ১৩ সেপ্টেম্বর। সেদিন এক অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী ছিল কলকাতা। সেদিন প্রথমবার একযোগে ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন কয়েকশো চিকিত্সক। বিশেষত কলকাতা ও আশপাশের জেলার মেডিক্যাল কলেজে চিকিত্সা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তখন পুরোদমে চলছে। ওয়ারফ্রন্ট থেকে এসে একের পর এক জাহাজ ভিড়ছে কলকাতা বন্দরে। গুরুতর আহত সৈন্যদের জাহাজে নিয়ে আসা হচ্ছে। অথচ চিকিত্সার ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই। হ্যাঁ, তখনও রোগীর পরিবারের হাতে ডাক্তারদের মার খাওয়ার ঘটনা ঘটত। ঘটেওছিল। অথচ ব্রিটিশ সরকার হাত-পা গুটিয়ে বসেছিল। সঙ্গে বেতনে চরম বৈষম্য। ভাতা ও সুযোগসুবিধা নিয়ে অভিযোগ। তাই ব্রিটিশ ভারতে সেই প্রথম ডাক্তার ধর্মঘট। সাতদিন চলেছিল সেই স্ট্রাইক। দ্য স্টেটসম্যান লিখেছিল, হেলথ সার্ভিস ইন রেস্ট। ধর্মঘটী ডাক্তাররা স্লোগান দিয়েছিলেন, গর্ভমেন্ট অন হলিডে ইন দ্য টাইম অফ ওয়ার। সেই ঘটনার ১০৮ বছর পর দেখুন। গত বছরের শুরুতেই ব্রিটেনে ধর্মঘটে গেলেন ২৫ হাজার চিকিত্সক। সঙ্গে লক্ষাধিক স্বাস্থ্যকর্মী। সেদেশ তো বটেই এমনকি দুনিয়ার ইতিহাসেও অন্যতম বড় চিকিত্সা ধর্মঘট। ব্রিটেনের বিখ্যাত ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বেশ কয়েকদিন অচল হয়ে ছিল। বেতন বৃদ্ধি সহ ৯ দফা দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হয়। তারপর গত দেড় বছরে আরও তিন-তিনবার চিকিত্সা ধর্মঘট হয়েছে। কিন্তু যেসব দাবি ঘিরে এতকিছু, এখনও তার সমাধান মেলেনি। আরজি করে চিকিত্সককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় কর্মবিরতি চালাচ্ছেন সারা রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। এই অবস্থায় শহর কলকাতা, ভারত ও গোটা দুনিয়ায় ডাক্তার ধর্মঘটের ইতিহাসটা দেখতে গিয়ে এইসব তথ্যগুলো পেলাম।
ডাক্তাররা এমার্জেন্সি সার্ভিসের অঙ্গ। মানুষের প্রাণ বাঁচানোর ভার তাঁদের উপর। কিন্তু তাও, অনেকসময়ই চিকিত্সক ধর্মঘটে নাজেহাল হতে হয় আমাদের। মোটামুটি যা হিসাব পেলাম, গত ১০ বছরে কমবেশি ২২ রাজ্যে ৩৬ বার কাজ বন্ধ করেছেন চিকিত্সকরা। সেটা কখনও একটা নির্দিষ্ট মেডিক্যাল কলেজে। কখনও গোটা দেশে। তবে যেখানেই যখন ধর্মঘট হয়েছে, এর্মাজেন্সি পরিষেবা বন্ধ হয়নি বলেই দাবি করেছেন চিকিত্সকরা। ২০১৯ সালে আমাদের রাজ্যে কী হয়েছিল তা নিশ্চই আপনাদের মনে আছে। এনআরএসে এক জুনিয়র ডাক্তারের উপরে হামলা করেছিল রোগীর পরিবার। মারধরে গুরুতর আহত হন ওই চিকিত্সক। প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করেন ওই হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই ঘটনার প্রতিবাদে দেশের নানা রাজ্যে দফায় দফায় কর্মবিরতি করেছিলেন চিকিত্সকরা। জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনায় সেদিন বেরিয়েছিল সমাধানসূত্র। তবে ১৯৮৩ সালে তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী আলোচনা, কথাবার্তার ধার ধারেননি। সেবারও দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের চিকিত্সকরা। হাসপাতালে চিকিত্সা পরিষেবা অচল হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। মার্চে যে আন্দোলন শুরু হয় তা গড়িয়েছিল অক্টোবরে। অক্টোবরের এক রাতে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ঢুকে চিকিত্সকদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সেই ঘটনায় ২৮ জন চিকিত্সক আশঙ্কাজনকভাবে চোট পান বলে দাবি করেছিল চিকিত্সক সংগঠন। ২০০১ সালে ফিনল্যান্ডে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলেছিল ডক্টরস স্ট্রাইক। সম্ভবত দুনিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা চিকিত্সা ধর্মঘট। শুধু ইতিহাস বলা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার উদ্দেশ্য, বিভিন্ন দেশে চিকিত্সক ধর্মঘটে কখন কী হয়েছিল। সরকার কীভাবে হস্তক্ষেপ করেছিল, কী ভূমিকা নিয়েছিল, সেটা বোঝা ও স্ট্রেট কাটে তুলে ধরা। আর এই সূত্রেই বলি, কোনও সরকারই ডাক্তারদের দাবিদাওয়াকে উপেক্ষা করতে পারেনি। একবার আলোচনায় বসলাম আর সমাধানসূত্র বেরিয়ে গেল, এমনটাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়নি। পরপর বেশ কয়েকটা আলোচনা হয়েছে। দু-পক্ষই নিজেদের জায়গা থেকে সরেছে। তারপরেই সব ঠিকঠাক হয়েছে।