Antibiotic Side-Effects: অ্যান্টিবায়োটিক বেলাইন, প্রেসক্রিপশনে গাইডলাইন

Antibiotic Side-Effects: অ্যান্টিবায়োটিক বেলাইন, প্রেসক্রিপশনে গাইডলাইন

আসাদ মল্লিক

|

Updated on: Sep 20, 2024 | 10:20 PM

Antibiotics Side-Effects: ৩০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে চেপেছে কঠোর বিধিনিষেধ। বলা হয়েছে, এইসব ওষুধ দেওয়ার সময় প্রেসক্রিপশনে কারণ বলতে হবে। তখনই সম্ভব না হলে পরে তা প্রেসক্রিপশনে লেখা বাধ্যতামূলক। ২০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সকের কমিটি এই নির্দেশিকা তৈরি করেছে। সমীক্ষায় ধরা পড়েছিল বেশকিছু চিকিত্‍সক অকারণে রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিচ্ছেন। আমরাও ইচ্ছেমত তা খেয়ে চলেছি।

ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে জব্দ করতে অন্যতম ভরসা অ্যান্টিবায়োটিক তার ধার হারাচ্ছে। ওষুধ আর আগের মতো অসুখ ডেকে আনা ব্যাকটেরিয়াকে কাবু করতে পারছে না। ডাক্তাররা বলছেন এটা এখন সারা দুনিয়ার সমস্যা। যখন-তখন আমরা সেল্ফ প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে নিচ্ছি। অনেক সময়ে তেমন দরকার না হলেও ডাক্তারবাবুরা অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিচ্ছেন। বহুক্ষেত্রে ওষুধ শুরু করে আমরা কোর্স কমপ্লিট করছি না। আর এসবের নিট ফল এই ওষুধগুলো পরে আর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করছে না। শরীরে বাসা বাঁধছে বিপজ্জনক ড্রাগ রেজিট্যান্স ব্যাকটেরিয়ার দল। যাদেরকে বলা হয় সুপারবাগ। মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে সম্প্রতি এ নিয়ে একটা রিপোর্ট বেরিয়েছে যা সারা দুনিয়ার চিকিত্‍সক মহলকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। কারণ, ডাক্তারবাবুর নিজেরই যদি এমন অবস্থা হয় যে তিনি বুঝতে পারছেন না তাঁর লেখা ওষুধে রোগ সারবে কি সারবে না।

গবেষকেরা সারা বিশ্বে ২০৪টি দেশে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে, অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করায় আগামী ২৫ বছরের মধ্যে সারা দুনিয়ায় ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে। এক্ষেত্রে, শিশু ও বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি। আর কত মানুষ যে বেঁচে থাকলেও জীবনে আর সুস্থ হবেন না, তার তো ইয়ত্তা নেই। কলকাতা শহরের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট চিকিত্‍সকের সঙ্গে কথা বললাম। তাঁরা বললেন, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে জীবাণুরা তাদের কোষের বাইরে লাইপোপলিস্যাকারাইড বা এলপিএস নামে এক ধরনের আবরণ তৈরি করে ফেলে। পরবর্তীকালে ওষুধ আর সেই আবরণ ভেদ করে জীবাণুকে মারতে পারে না। ডাক্তারদের কথায় প্রতিবছর ভারতেই ড্রাগ রেজিট্যান্স ব্যাকটেরিয়ার কবলে পড়ে বহু শিশু, বহু মানুষের মৃত্যু হয়। এর কোনও রেকর্ড সেভাবে না থাকায় আমরা এখনও পরিস্থিতির গুরুত্ব সেভাবে বুঝতে পারছি না। ওষুধের দোকানে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয়। সেখানে লাগাম দিতে না পারায় বিপদ ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে। এই চিন্তাজনক পরিস্থিতির মধ্যেই একটা ভালো প্রচেষ্টার খবর আপনাদের জানাতে পারি।

কিছুদিন আগেই অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত নির্দেশ দিয়েছে আমাদের রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। ৯০ পাতার গাইডলাইনে সব অ্যান্টিবায়োটিককে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটা ভাগ নিয়ে আলাদা নির্দেশিকা রয়েছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট যদি বলি। বহুল ব্যবহৃত ৫০টি অ্যান্টিবায়োটিক যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা যাবে না। কখন-কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা লিখিতভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। আরও ৩০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে চেপেছে কঠোর বিধিনিষেধ। বলা হয়েছে, এইসব ওষুধ দেওয়ার সময় প্রেসক্রিপশনে কারণ বলতে হবে। তখনই সম্ভব না হলে পরে তা প্রেসক্রিপশনে লেখা বাধ্যতামূলক। ২০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সকের কমিটি এই নির্দেশিকা তৈরি করেছে। সমীক্ষায় ধরা পড়েছিল বেশকিছু চিকিত্‍সক অকারণে রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিচ্ছেন। আমরাও ইচ্ছেমত তা খেয়ে চলেছি। ফলে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের শরীরে রেজিট্যান্স তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তখন অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না। সম্প্রতি হাসপাতালে ভর্তি ৩২ হাজার রোগীর উপর সমীক্ষায় আশঙ্কাজনক এই তথ্য উঠে আসে। সমীক্ষায় এও ধরা পড়ে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে প্রথম সারিতেই আছে আমাদের রাজ্য। এরপরই তত্‍পর হয় স্বাস্থ্য দফতর। বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সকদের নিয়ে কমিটি গড়া হয়। তাই এবার থেকে মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার আগে দুবার নয়। দশ বার ভাবুন। ডাক্তারের কাছেও জানতে চান কেন তিনি অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করছেন। দেখুন তথ্য বলছে পথ দুর্ঘটনা ও ক্যান্সার মিলিয়ে দুনিয়ায় যত মানুষের মৃত্যু হয়। তার চেয়ে অনেক বেশি মৃত্যু হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স জীবাণুর কারণে।