সন্দেশখালি থেকে বগটুই, প্রশাসন ব্যর্থ, আদালতের প্রায়শ্চিত্ত! সব ইস্যুতে ড্যামেজ কন্ট্রোল কোর্টেই?

সন্দেশখালি থেকে বগটুই, প্রশাসন ব্যর্থ, আদালতের প্রায়শ্চিত্ত! সব ইস্যুতে ড্যামেজ কন্ট্রোল কোর্টেই?

TV9 Bangla Digital

| Edited By: Tapasi Dutta

Updated on: Sep 22, 2024 | 10:45 PM

বিচার দিতে বেহাল প্রশাসন। দায় পালনে ব্যর্থ সরকার। গুজরাত থেকে দিল্লি, শোষিতের শেষ ভরসা আদালতই। আদালতের দিকে তাকিয়ে তিলোত্তমাও। সওয়াল-জবাবে খুলবে রহস্যের জট? দেখুন TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ‘আদালত ও একটি মেয়ে’

উই ওয়ান্ট জাস্টিস। জাস্টিস চাইলেন যারা তাদের জাস্টিস দেবে কে? প্রশাসনের দিকেই তো অভিযোগের আঙ্গুল। সমাজের রক্ষকই যে আজ অভিযুক্ত! এই প্রশ্নই আরও উস্কে দিচ্ছিল স্লোগানের আওয়াজ, মিছিল-অবস্থান। তারপর? মাঠে নামলেন আদালত। এখনও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। তিলোত্তমার পরিবার, আন্দোলনকারী ছাত্র ছাত্রী, জনগণ যারাও তিলোত্তমার স্বজন তাদের সবার শেষ ভরসা সুপ্রিম কোর্ট। কতটা কঠিন আইনের রাস্তা? কবে মিলবে সুবিচার? কিভাবে যখনই প্রশাসন-শাসক ব্যর্থ হয়েছে হাল ধরেছে আদালতই? আদালতের কাঠগড়া, সওয়াল-জবাব, শুনানির শেষে হবে সত্যের জয়? দেখাব আজকের নিউজ সিরিজে। আজকের নিউজ সিরিজ আদালত ও একটি মেয়ে। আজকের নিউজ সিরিজে চারটি পর্ব রয়েছে। কাঠগড়ায় প্রশাসন, আশা সেই আদালত, বিচারের বাণী, বিচার পাক তিলোত্তমা। আজকের প্রথম পর্ব কাঠগড়ায় প্রশাসন।

সেগমেন্ট ১: কাঠগড়ায় প্রশাসন

কেটেছে প্রায় দেড় মাস। সিবিআই জোর কদমে তদন্তে। কে ঘটালো এই ঘটনা? প্রশ্ন এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে সবাইকে। জুনিওর ডাক্তার থেকে রাজ্যবাসী বিচারের দাবিতে আজও অনড়। রাজ্যের দিকে দিকে আজ চলছে আন্দোলন। সেই পরিস্থিতিতেই সুপ্রিম কোর্টে শুনানি। ১৭ সেপ্টেম্বর। চিফ জাস্টিস অফ ইন্ডিয়া ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় প্রশংসা করলেন সিবিআইয়ের। আদালতের প্রশ্নের মুখে পুলিশ, প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোথায় সিস্টেম? কোথায় স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিওর? ৯ তারিখ সকাল থেকেই পুলিশের ভূমিকায় পরতে পরতে রহস্য। প্রশ্নের তালিকা অনেক লম্বা। পুলিশ কি কাউকে আড়াল করছিল সেইদিন? পুলিশ কি সেদিন তদন্তকে থমকে দিতে চেয়েছিল? পুলিশের সামনেই হাসপাতালে হামলা দুর্বৃত্তদের। এতজনের হামলা এবং এতটাই আচমকা যে প্রাণ হাতে ছুটতে দেখা গেল পুলিশকেই। রাজপথ থেকে অলিগলি। ১৪ আগস্ট রাতের আরজি কর চত্ত্বর যেন যুদ্ধক্ষেত্র। আর চক্রব্যূহে যেন পুলিশ। কেন হাতের বাইরে চলে গেল পরিস্থিতি? প্রশাসনিক ব্যর্থতা থেকে প্রমাণ লোপাট। শাসকের অনীহা? নাকি অন্য কোন অভিসন্ধি? যদি প্রমাণ লোপাট আর প্রমাণের অভাব যাকে বলে ল্যাক অফ এভিডেন্স সত্যি হয়? লাল ফিতে আর ফাইলের চাপে দম আটকে আসবে কী দ্রুত সুবিচারের দাবি? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া কী কোন অপরাধেরই তদন্ত করা অসম্ভব?
স্বাস্থ্য দফতরে বাস্তুঘঘুর বাসা। একটা বিশাল সিন্ডিকেট। এতদিন ধরে যার মাশুল দিয়েছে ডাক্তার থেকে জনগণ। তিলোত্তমাকে যে সিস্টেম দিয়েছে যন্ত্রণার মৃত্যু। আজ সেই সিস্টেমের অনেকেই সিবিআই রেডারে। আদালতে মুখবন্ধ খামে কী জমা পড়েছে নাম না জানা আরো অনেক রাঘব বোয়ালের নাম? আন্দোলনের চাপে কিংবা তদন্তের ধাক্কায় বহিস্কৃত হয়েছেন অনেকেই। তবে, একটা প্রশ্নের উত্তরই এখনও নেই বিচার মিলবে কবে?

সেগমেন্ট ২: আশা সেই আদালত

আজ যখন সন্দীপ ঘোষ সিবিআই হেফাজতে। প্রথমে দুর্নীতি আর তারপর ধর্ষণ ও খুনের ষড়যন্ত্রের মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন সর্বেসর্বা। প্রশাসনের মুখ পুড়িয়ে গ্রেফতার টালা থানার প্রাক্তন ওসি। কিন্তু এতদিন প্রশাসন কি কিছুই জানতে পারল না? কলকাতা হাই কোর্টকে প্রশ্ন তুলতে হল সন্দীপের বিরুদ্ধে? সুপ্রিম কোর্টেও বারবার মুখ পুড়ছে রাজ্য প্রশাসনের। পুলিশ থেকে সরকার, দুর্নীতি থেকে খুনের ষড়যন্ত্র। আদালতে কোনঠাসা রাজ্যের আইনজীবীও। কোন পথে চলছে সওয়াল জবাব? ভারত রাষ্ট্রের প্রতীক ন্যায়ধর্ম ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর আইন। যার চোখ বাঁধা। যার হাতে দাঁড়িপাল্লা। সেই প্রতীক কোন ঐতিহাসিক আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে? সংবিধানের উপর আস্থা রেখেই যখন কোর্টের দিকে নজর সবার, তখনই সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতেও ধৈর্য ধরার কথাই বললেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। শেষ শুনানিতে ঠিক কী বলল আদালত? ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৯০ জন নারী নির্যাতিত। প্রায় ৩৪ হাজার মামলা রয়েছে দেশে, কত গুলো মামলার বিচার শেষ হয়েছে, কত জন অপরাধী ধরা পড়েছেন? কত জন শাস্তি পেয়েছেন? প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা। মনে পড়ছে আতঙ্কের সন্দেশখালি? কিভাবে একটা গ্রাম, একটা গোটা এলাকা সেদিন গর্জে উঠেছিল শাহজাহান বাহিনী ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে? সেদিনও পুলিশের ভূমিকায় উঠেছিল হাজারও প্রশ্ন। সন্দেশখালির বাঘ, সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান আজ জেলে। তবে সেদিনও যখন পুলিশ খুঁজে পাচ্ছিল না অভিযুক্ত শাহজাহানকে। মাঠে নেমেছিল কোর্ট। তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ ছিল সেদিনও। আজও যখন তদন্তে গাফিলতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে, আন্দোলনের চাপে কমিশনার পদ থেকে সরাতে হয়েছে বিনীত গোয়েলকে। তখনও আন্দোলনের পাশাপাশি মুখ্য ভূমিকা পালন করছে কোর্টই।

সেগমেন্ট ৩: বিচারের বাণী

তিলোত্তমা। শুধু কি একটা নাম? শুধু কি একটা শব্দ? তিলোত্তমা আমার আপনার মত হাজারো মানুষের ঘরের মেয়েটা। পাশের বাড়ির মেয়েটা। যে প্রতিদিন লড়াই করছে নিজের জন্য। মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য। কিন্তু কখনও তার সম্মান ধুলোয় মেশে কলকাতার রাজপথে ন্যায্য চাকরির দাবিতে মাথা মুড়িয়ে, কখনও দিল্লির সড়কে বা কামদুনিতে গণধর্ষণের শিকার হয়ে ধুলোয় পড়ে থেকে আবার কখনও বগটুইতে গোটা পরিবারের সঙ্গে রাজনৈতিক হিংসায় পুড়ে ছারখার হয়ে। রয়ে যায় তাদের বিচারের দাবিগুলো। রয়ে যায় তাদের জন্য গলা ফাটানো চিৎকারগুলো। ২২ এপ্রিল, ২০২৪। প্রশাসন, শিক্ষা দফতর বা স্কুল সার্ভিস কমিশন কেউই বেছে দেয়নি কারা দোষী। কারা দিল কোটি কোটি টাকা ঘুষ! কোর্টের নির্দেশে সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হল এসএসসি ও এসএলএসটি-র। প্রায় ২৪০০০ চাকরি বাতিল। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের জন্য যাতে যোগ্যরা চাকরি না হারায়, তাই সেই রায়েও স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের রায়েই চাকরি হারিয়েছেন খোদ মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়েও। আদালতই পাশে দাঁড়িয়েছে যোগ্যদের। সংবিধানের অধিকার। কোর্টের রাস্তা সবার জন্য খোলা। তবে গত কয়েক বছরে শুধু দুর্নীতি নয়, হাড়হিম করা অনেক ঘটনায় আদালতের সামনে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য প্রশাসন। এমনই একটা ঘটনার সাক্ষী বীরভূমের একটি ছোট্ট গ্রাম। সেদিনও ঢিলছোড়া দূরত্বে থানা থাকা সত্ত্বেও জ্যান্ত পুড়ে গিয়েছিল তরতাজা অতগুলো প্রাণ। আর আরজি কর কাণ্ডে, তদন্তে গাফিলতি থেকে শুরু করে পুলিশের সামনেই দুষ্কৃতী তান্ডব। প্রশাসনের মুখ পুড়েছে বারবার। সেদিনও মধ্যস্থতা থেকে তদন্ত পরিচালনায় নামতে হয়েছিল আদালতকেই। আজও সেই ছবিটা একটুও পাল্টালো না।

সেগমেন্ট ৪: বিচার পাক তিলোত্তমা

একটাই দাবি, বিচার। কিন্তু বিচার মিলবে কবে? এর আগে দিল্লি হোক বা গুজরাত। সুবিচার সুনিশ্চিত করেছিল আদালতই। কোন পথে হয়েছিল সেই বিচার? বিচারব্যবস্থা দ্রুত হয় তখনই যখন তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনও ফাঁক থাকে না। নির্ভয়া কান্ড। বিচার প্রক্রিয়ায় দশটা বছর সময় লাগলেও শাস্তি পেয়েছিলেন অপরাধীরা। প্রমানের অভাবে সেদিন কিন্তু ছাড়া পায়নি কোনও অপরাধী। সেদিন নির্ভয়া বিচার পেয়েছিল। আজ কি তিলোত্তমা বিচার পাবে? সেই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে দিকে দিকে। আরজি কর কাণ্ডের পর রাজ্যের সরকারও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট থেকে নারী নিরাপত্তায় অপরাজিতা বিল একাধিক পদক্ষেপের কথা বলেছে। শাসকদলের সেকন্ড ইন কমান্ডও অপরাধীদের কঠিন শাস্তি ও দ্রুত বিচার চেয়েছেন। তিলোত্তমার জন্য বিচারের আশায় সবাই তাকিয়ে আদালতের দিকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সর্বশেষ শুনানির দিনটা কবে? নির্ভয়ার মত দশ বছর কেটে যাবে সুবিচার পেতে? নাকি প্রমান লোপাটের মত গুরুতর অভিযোগ সত্যি হলে কামদুনির মত হারিয়ে যাবে বিচার? সুপ্রিম কোর্টের পরপর হস্তক্ষেপে যে আশার আলো জাগছে সবার মনে, সেই আলো যেন হারিয়ে না যায়। ওই মেয়েটা তাকিয়ে লেডি অফ জাস্টিস্ট আর তাঁর হাতে রাখা বিচারের তুলাদণ্ডের দিকে।