ভোট বঙ্গে বারবার ওঠে শিল্পায়ন ইস্যু! কিন্তু এই শিল্পাঞ্চলের ছবি কি চোখে পড়ে নেতাদের?
ভোট বঙ্গে বারবার ওঠে শিল্পায়ন ইস্যু! কিন্তু এই শিল্পাঞ্চলের ছবি কি চোখে পড়ে নেতাদের? কাল সেই শিল্পাঞ্চলে ভোট। এবারও সেই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভোটের ইস্যু কিন্তু বন্ধ শিল্প খোলার। কিন্তু কেন হল এই দশা? কেমন আছে সেই বিস্তীর্ণ শিল্পাঞ্চলের মানুষজন? দেখাব আজকের নিউজ সিরিজে। আজকের TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ‘মরা শিল্পে ভোটের ঘা!’
২০০১। নতুন শতকের গোড়ায় নতুন স্লোগানে ভর করে পথ হাঁটতে শুরু করলো বামেরা। রাজ্যে কর্মসংস্থানের বার্তা। বড় বড় শিল্পের স্বপ্ন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ডাক দিলেন শিল্পায়নের। বামেদের নতুন স্লোগান ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’। ২০০৬ সালে সেই স্লোগানকে হাতিয়ার করে বিপুল ভোটে জিতেছিল বামেরা। এই বাংলায় লাখ লাখ তরুনের চোখে সেদিন কাজের স্বপ্ন। সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো কারখানা। নন্দীগ্রামে কেমিকাল হাব। কত নাম নয়াচর, শালবনি! না সেই সবই স্বপ্ন থেকে গেছে। কাজ জোটেনি। জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে বামেরা। তারপর আর বড় শিল্প মুখ দেখেনি এই রাজ্যের। হ্যাঁ প্রতি ভোটের আগে আমরা এই আশার বাণী শুনি। কিন্তু দু দশকে বাংলায় কোনো বড় শিল্প হয়নি। আর বাংলার শিল্পাঞ্চল বলতে যে জায়গাকে আমরা চিন! ব্রিটিশ আমল থেকে যেখানে শিল্পের পথ চলা শুরু। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, আমি দুর্গাপুর, আসানসোল, রানিগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কথা বলছি। যেখানে প্রায় দুশো বছর ধরে গড়ে উঠেছে উঠেছিল কয়লা, ইস্পাত সহ নানা শিল্প। আজ বন্ধ হয়েছে একের পর এক কারখানা ভিড় সেখানে। পরিত্যক্ত একের পর এক কোল ফিল্ড। ভোট বঙ্গে বারবার ওঠে শিল্পায়ন ইস্যু! কিন্তু এই শিল্পাঞ্চলের ছবি কি চোখে পড়ে নেতাদের? কাল সেই শিল্পাঞ্চলে ভোট। এবারও সেই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভোটের ইস্যু কিন্তু বন্ধ শিল্প খোলার। কিন্তু কেন হল এই দশা? কেমন আছে সেই বিস্তীর্ণ শিল্পাঞ্চলের মানুষজন? দেখাব আজকের নিউজ সিরিজে। আজকের TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ‘মরা শিল্পে ভোটের ঘা!’
আজকের নিউজ সিরিজে রয়েছে চারটি পর্ব। শিল্প শ্মশান বার্নপুর, আজ চাকা বনধ, কালো সোনার অন্ধকারে, বন্ধ ‘হিন্দুস্থান’!।
শিল্প শ্মশান বার্নপুর
১৭৮১। যাত্রা শুরু বার্ন এন্ড কোম্পানির। ১৯২৭ সালে রাজেন মুখোপাধ্যায়ের মার্টিন এন্ড কোম্পানি অধিগ্রহণ করে নেয় বার্ন এন্ড কোম্পানির নির্মাণ ব্যবসা। তখন তার নাম হয় মার্টিন এন্ড বার্ন। ১৯৫০ সাল থেকে পুরোদমে রেলের সরঞ্জাম তৈরির কাজে হাত দেয় এই কারখানা। এই কোম্পানির জাতীয়করণ হয় ১৯৭৬ সালে। তখন ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ওয়াগন কোম্পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে এই সংস্থা বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি লিমিটেড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৯৫ সালে রেলের কাজ করা সত্ত্বেও রুগ্ন শিল্প বলে ঘোষণা করা হয় কারখানাটিকে । শেষমেশ ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল তালা ঝোলে কারখানার গেটে। সত্যি কার কলকাঠিতে এই বিশাল কারখানা বন্ধ হল? সত্যি কি এতো প্রাচীন কারখানাকে চাঙ্গা করার উদ্দেশ্য ছিল সরকারের? রাজনৈতিক দলগুলো ভোট ভিক্ষা করার আগে তো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই কারখানার গেট খোলার। কিন্তু ফল? ফল কী হয়েছে?
আজ চাকা বনধ
১৯৪৭। স্বাধীন হল দেশ। আজকের আত্মনির্ভর ভারতের মতই সেদিনও শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে দেশ গঠনের চরম উদ্দীপনা দেখা দিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৫২ সালে, আসানসোলে তৈরি হল সেন-র্যালের সাইকেল কারখানা। যেখানে বছরে প্রায় ২ লক্ষ সাইকেল তৈরি হত। কাজ করতেন প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মী। আজ সেই ফ্যাক্টরির দেয়ালগুলো পর্যন্ত গায়েব! সব লুট হয়ে গেছে। পড়ে আছে শুধু সেন-র্যালের সাইকেলের ঐতিহ্য। এটিও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সাইকেল কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া। পর পর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বন্ধ হয়েছে কিন্তু এই অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতাদের চোখেও পড়েনি এই কারখানা খোলার কথা?
কালো সোনার অন্ধকারে
কালো সোনার দেশ রানীগঞ্জ। কয়লা। একদিন কয়লাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল শিল্পাঞ্চল। কিন্তু মানুষের লোভ কীভাবে ধ্বংস করলো এই অঞ্চলকে? নেতা মন্ত্রী কেউ দেখতে পেলেন না? আজ সেখানকার মানুষগুলোর জীবনে শুধুই অন্ধকার। কেন?
বন্ধ ‘হিন্দুস্থান’!
হিন্দুস্থান কেব্ল্স। জয়যাত্রা শুরু ১৯৫২ সালে। ঠিক যখন বর্ণপুরে রেলের ওয়াগন তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। দেশের তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগের জন্য তার তৈরি করা ছিল হিন্দুস্থান কেবলের কাজ। ১৯৯৪ এর পর থেকেই লাভের মুখ দেখা বন্ধ আর BSNL বরাত তুলে নিতেই মনে হয় এই কারখানার কফিনে শেষ পেরেকটা পোঁতা হয়েছিল। ২০১৭ সালে বন্ধ হয় এই কারখান। এখন কেমন আছেন এখানকার মানুষজন?
আজ চার দিকে শুধুই শ্মশানের স্তব্ধতা। একই ছবি দেখেছে সিঙ্গুর- নন্দীগ্রাম। চলেছে দিনের পর দিন শুধু রাজনীতি। সিঙ্গুরে চাষও হয়নি। হয়নি শিল্পও। আজ বাংলায় বড় বিনিয়োগের আশায় আমরা সবাই। কিন্তু যে শিল্পাঞ্চল আমাদের ঐতিহ্য? তার হাল কী ফিরবে? নাকি ভোট মিটলে আবার নেমে আসবে অন্ধকার? কেউ কী মুখ তুলে তাকাবেন এই জীবিকা হারানো মানুষগুলোর দিকে?