বাংলার দিকে দিকে গণপিটুনির ঘটনা, কেন মানুষ আইন তুলে নিচ্ছে নিজের হাতে?

চারদিনে পাঁচ মৃত্যু! বাংলার দিকে দিকে গণপিটুনির ঘটনা। পাশাপাশি ভয় ধরাচ্ছে চোপড়া-আড়িয়াদহর ঘটনা। আতঙ্কে গোটা রাজ্য। কেন মানুষ আইন তুলে নিচ্ছে নিজের হাতে? TV9 বাংলার অন্তর্তদন্ত।

বাংলার দিকে দিকে গণপিটুনির ঘটনা, কেন মানুষ আইন তুলে নিচ্ছে নিজের হাতে?
| Edited By: | Updated on: Jul 11, 2024 | 9:14 AM

এই বাংলা শেষ কয়েকদিনে দিনে দেখেছে পর পর গণপিটুনির মর্মান্তিক ছবি। কোথাও পিটিয়ে খুন, আবার কোথাও সালিশি সভা ডেকে দুশো জনের সামনে বেধড়ক মার। চার দিনে পাঁচ মৃত্যু । কিন্তু কেন চারদিকে পর পর ঘটছে এই ঘটনা? কেন মানুষ আইন তুলে নিচ্ছেন নিজের হাতে? কেন মানুষ হয়ে উঠছেন হিংস্র? আর এরকমই যদি চলে তাহলে তথাকথিত সভ্য সমাজের লেবেল ধরে রাখা কী সম্ভব হবে? কতটা মদত আছে রাজনীতির? বাঁচার পথ কী? তারই উত্তর খুঁজবো আজকের নিউজ সিরিজে। আজকের TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ‘জনরোষে গণপিটুনি?’।

আজকের নিউজ সিরিজে চারটি পর্ব রয়েছে। শিয়ালদহ থেকে বৌবাজার, হিংসার বীজ, দিকে দিকে হিংসা!, কবে ফিরবে ‘সভ্যতা’?।

শিয়ালদহ থেকে বৌবাজার

আলোর গতিবেগ কত? সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার।গুজবের গতিবেগ কত? গুজব। বারবার শহর আর শহরতলিতে রটে এই ছেলেধরার গুজব। ২৬ জুন বারাসতে এক মহিলাকে ছেলেধরা সন্ধে গণপিটুনি দেয় লোকাল ট্রেনের সহযাত্রীকে। পরে জানা যায় সেই মহিলা শিশুটির মা। ২৬ জুনের এই গুজবে যদিও ওই ছোট্ট একরত্তির মাকে প্রাণ হারাতে হয়নি। কিন্তু তার দুদিন দিন পরেই তো খাস কলকাতায় এই গুজবের জেরে প্রাণ দিতে হল একজনকে। সত্যি মানুষের জীবন বড় সস্তা! একটা মোবাইলের জন্য তাকে প্রাণ দিতে হল। কিছু ছেলে তাকে ঘিরে ধরল ঠিক যেমন রক্তের গন্ধ পাওয়া হায়নার ঝাঁক ঘিরে ধরে কোনও হরিণকে। বৌবাজারের ঘটনা। লালবাজার থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। কিন্তু কেউ এল না তাকে বাঁচাতে। একই ছবি সল্টলেকে। এই বউবাজার আর সল্টলেকের ঘটনায় মনে করলো, দশ বছর আগের এক স্মৃতি। বৌবাজার গণপিটুনি আর খুনের সঙ্গে যেন এই ঘটনার সব কিছু মিলে যায়! ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর। চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল কোরপান শাহকে। নীল রতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের হস্টেলে। খুনের অভিযোগ ওঠে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে হোস্টেলের ৯৯ নং ঘরের সামনে বেধড়ক মারধর করা হয় কোরপান কে। সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে। আজও বিচার পায়নি কোরপান শাহের পরিবার।

হিংসার বীজ

গণপিটুনি। এই গণপিটুনি আর খুনের ঘটনার ছবি বার বার উঠে এসেছে আমাদের সামনে। উত্তরপ্রদেশ। মহম্মদ আখলাককে গোমাংস পাচারের গুজবে পিটিয়ে খুন করা হয়। অনেকে মনে করেছিলেন, এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক মদত আছে। মদত আছে রাজনৈতিক অসিষ্ণুতার। কিন্তু সে তো ২০১৫ সালের ঘটনা! কিন্তু তার বহু আগে বাংলাতেই তো ঘটে গেছে গণপিটুনির এক নক্কারজনক ঘটনা। যে গণপিটুনিতে খুন হতে হয়েছে ১৭ জনকে বিজন সেতুতে। দিনের আলোয়। আবার ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনি ও পরে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে এক স্বাস্থ্যকর্মীকে। ৩৪ বছরে বারবার হয়েছে এই ঘটনা।

দিকে দিকে হিংসা!

রাজনীতি। রাজনীতি রঙে কত মানুষ নেতা আজ বাহুবলি। আর তাঁরাই এখন আইন, সংবিধান, সমাজ প্রচারণার ধারক ও বাহক! তাঁদের অঙ্গুলিহেলন ছাড়া এলাকায় চলাফেরা করা মুশকিল। তাঁরাই এখন হত্তা কত্তা বিধাতা। তাঁরা নানা বেশে, নানা নামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাংলার দিকে দিকে, কারও নাম জেসিবি আবার কারও নাম জয়ন্ত। কিন্তু সবার মোডাস অপারেন্ডি এক। এলাকার মানুষকে তাঁরা বা তাঁদের দলবল চাইলে বেঁধে ধরে মারতে পারেন, আর শয়ে শয়ে মানুষ, সেই মারের তামাশা দেখেন। গ্ল্যাডিয়েটর সবটা শুনেছেন তো? একসময় রোমে ক্রীতদাসদের প্রাণ বাঁচাতে লড়তে হত যোদ্ধা বা বাঘ সিংহের সঙ্গে। হাজার হাজার মানুষ কলোসিয়ামে সেই যুদ্ধের আনন্দ নিতেন। কিংবা আমাদের প্রতিবেশী আফগান মুকুলেও এরকমটা হয়েই থাকে। মোড়লরা বিচার করেন মানুষের। বাংলা কি সেই পথেই হাঁটছে?

কবে ফিরবে ‘সভ্যতা’?

রাজ্যের দিকে দিকে গণপিটুনির ঘটনা একটা কথা উস্কে দিয়েছে। গণপিটুনির সাজা কতটা কঠিন এই রাজ্যে? গণপিটুনি নিয়ে ২০১৯ সালে আসা বিল নিয়ে জটিলতারও অন্ত নেই, একটু পিছনে তাকালেই বোঝা যাবে, বিলের চ্যাপ্টার ৪-এ প্রথমে ‘With Death Sentence’ শব্দটা ছিল না। সেই বিল বিধানসভায় পেশের জন্য রাজ্যপালের সম্মতি নেওয়া হয়েছিল। তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল। কিন্তু, বিধানসভায় যখন বিলটা পেশ হল। সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে পাশও হয়ে গেল, সেই সময়ে দেখা গেল চ্যাপ্টার ৪-এ ‘With Death Sentence’ শব্দটা যুক্ত করা হয়। সেই কারণে রাজ্যপাল সই করেননি। হঠাৎ মৃত্যু দণ্ড কথাটা যোগ করা হল কেন? আর যখন বিল আটকেই গেছে তখন আইন কী? আর আইন প্রণয়ন করে কি মিটবে সমস্যা? মানুষ নিজের হাতে তুলে নেবেন না আইন?

Follow Us: