Kargil War: কার্গিলে তিনের বিরুদ্ধে একের লড়াই! ১৬ হাজার ফুট উপরে কীভাবে লড়াই?
৪৫৩ নয়, সংখ্যাটা অনেক অনেক বেশি। ১৯৯৯ সালে কার্গিলে ঢোকা আড়াই হাজার পাক সেনার আর দেশে ফেরা হয়নি। ৭৫ শতাংশ দেহ ফেরতই নেয়নি পাকিস্তান। কার্গিল যুদ্ধের ২৫ বছর পূর্তির দু-দিন আগে এই ইতিহাসে ডুব দিতেই হচ্ছে।
১৯৯৯ সালে কার্গিলে ঢোকা আড়াই হাজার পাক সেনার আর দেশে ফেরা হয়নি। ৭৫ শতাংশ দেহ ফেরতই নেয়নি পাকিস্তান। কার্গিল যুদ্ধের ২৫ বছর পূর্তির দু-দিন আগে এই ইতিহাসে ডুব দিতেই হচ্ছে। যুদ্ধের মাথা পারভেজ মুশারফ আজীবন দাবি করে গেছেন কার্গিলে নিহত পাক সেনার সংখ্যা তিনশোর আশেপাশে। পাক সেনার একটা অংশ আবার এতদিন বলে এসেছে, না। তা নয়। নিহতের সংখ্যা ছশোর বেশি। ২০১০ সালে পাক আর্মি অফিসিয়ালি জানিয়েছিল যে কার্গিলে তাদের ৪৫৩ জন সেনার মৃত্যু হয়। মেমোরিয়াল ওয়ালেও ওই ৪৫৩ জনের নামই রয়েছে। পাক সেনার টপ সিক্রেট নথি কিন্তু বলছে অন্য কথা।
যুদ্ধে হার যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন ফিল্ড থেকে হাইকমান্ডের কাছে কী বার্তা গিয়েছিল? পাক আর্মির অবসরপ্রাপ্ত দুই অফিসারের দাবি, কার্গিলে আড়াই হাজারের বেশি পাক সেনার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে দেখাতে যা, যা করা সম্ভব করা হয়েছিল। এমনকি সেনা আধিকারিকদের প্রবল চাপের মুখেও আটশোর বেশি নিহত সেনার দেহ ফেরাতে চাননি মুশারফ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ জেনারেলরা। এটা সত্যি হলে বলতে হয়, কার্গিল যতটা কঠিন বলে আমরা জানি, তার চেয়েও কয়েকগুণ কঠিন লড়াই লড়েছিলেন ভারতীয় জওয়ানরা। উঁচুতে বসে থাকা পাক সেনা গুলিবৃষ্টি করছিল। আর পাহাড়ের খাড়াই বেয়ে তাঁদের তিনজনের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন গড়ে একজন ভারতীয় সেনা। মনে রাখতে হবে, তাঁরা একহাতে দড়ি ধরে উঠছিলেন। অন্য হাতে গুলি চালাচ্ছিলেন। আর্মি সেন্টারে যে প্ল্যান হয়েছিল, বাস্তবের মাটিতে অনেক ক্ষেত্রেই তা খাটছিল না। বাধ্য হয়েই নতুন প্ল্যানিং করতে হয়।
কার্গিলে পাহাড়ে চড়তে চড়তে কৌশল বদলেই সাফল্য পেতে শুরু করে ভারতীয় সেনা। যেমন ধরুন, কার্গিল অভিযানের শেষ ধাপে টাইগার হিল পুনর্দখলের কথা ছিল। যদিও তার অনেকটা আগেই পয়লা জুলাই রাতে রুট বদলে টাইগার হিলে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কম্যান্ডার। ৩ জুলাই টাইগার হিলের দিকে ওঠা শুরু করে ভারতীয় সেনা। ৩ জুলাইয়ের রাত, অভিযানে অংশ নেওয়া সেনার ভাষায় কয়ামত কি রাত। কার্গিল যুদ্ধের সবচেয়ে কঠিন ও বিপদসঙ্কুল এই অভিযানে প্রাণহানি এড়ানো যায়নি। কমবেশি ৩৬ ঘণ্টার অভিযান। ৪ জুলাই সকালে টাইগার হিলের চূড়ায় জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা।
কামান ও আর্টিলারি ইউনিট নিয়ে ১৬ হাজার ফুট খাড়াই পাহাড়ে ওঠা। পাহাড়ে চড়তেই চড়তেই সেনা অফিসাররা বুঝে যান, দূর থেকে কামানের গোলা ছুঁড়ে পাক সেনাকে কাবু করা যাবে না। তাই কামান নিয়ে পাহাড়ে চড়ার সিদ্ধান্ত হয়। এতে একটা মারাত্মক ঝুঁকি ছিল। একটা কামানকে পাহাড়ে ওঠাতে অন্তত চারজন সেনার প্রয়োজন। ফলে পাক সেনার গুলির জবাব দিতে খুব বেশি সেনা থাকত না। তাই কখনও তিনের বিরুদ্ধে এক, কখনও চারের বিরুদ্ধে একের লড়াই। এছাড়াও, আমাদের মনে রাখতে হবে কার্গিলের নামে বিখ্যাত হলেও লড়াইটা শুধু কার্গিলে হয়নি। আখনুর, দ্রাস-সহ নিয়ন্ত্রণ রেখার সবকটি সেক্টরে লড়াই চলছিল। ভারতীয় সেনার ওপর কড়া নির্দেশ ছিল, কোনওভাবেই নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরোন যাবে না। অথচ ওই সমস্ত এলাকায় পরিস্থিতি এমনই যে এদিকে-ওদিকে দুটি পোস্টের মধ্যে দুরত্ব কোথাও ৬০ মিটার তো কোথাও ৮০ মিটার। সংঘর্ষ চলার সময় কি আর সীমান্তের লাইন মেপে এগোনো যায়? আমাদের সেনা সেজন্য প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই পোস্ট আঁকড়ে ছিল। পাকিস্তান গুলি চালালেও ভারতীয় সেনা একচুলও এগোয়নি। আর তাই জাল ছড়িয়েও ভারতের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলতে পারেনি পাকিস্তান।