Puri Jagannath Mandir: ৩৯ বছর পর খোলা হবে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের দরজা—কী আছে এই রত্ন ভাণ্ডারে?

Puri Jagannath Mandir: ৩৯ বছর পর খোলা হবে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের দরজা—কী আছে এই রত্ন ভাণ্ডারে?

আসাদ মল্লিক

|

Updated on: Jul 12, 2024 | 7:52 PM

Puri: সাবেক বিশ্বাস, অন্ধকার কুঠুরিতে সাপখোপের রাজত্ব। অজস্র সাপ জগন্নাথ দেবের অলঙ্কার পাহারা দেয়। কেউ সেখানে ঢুকলেই সাপের হিসহিস শব্দ শুনতে পান। ১৯৮৪ সালে যখন রত্নভাণ্ডার শেষবার পরিদর্শন করা হয় তখনও নাকি পরিদর্শকরা সেই আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালে পরিদর্শন কমিটির সঙ্গে তাই সাপ-তাড়ানোর ওঝা ছিল। কী দেখেছিলেন সরকারি কর্তারা? শপথ নিয়ে ভাণ্ডারে ঢোকায় তা তাঁরা জানাতে রাজি হননি। তবে অনেকেরই অনুমান, পুরীর রত্নভাণ্ডারে যা রাখা আছে, তার সম্পত্তি দক্ষিণে যেকোনও মন্দিরকে হার মানাবে। সেই সম্পত্তি কত? কয়েকশো কোটি, হাজার কোটি না লক্ষ কোটি। তা জানতেই ব্যাকুল ভক্তকুল।

পুরীর জগন্নাথ মন্দির নিয়ে এমনিতেই অনেক প্রচিলত কথা আছে। এই মন্দির নাকি অনেক অনেক রহস্যে মোড়া। যুগ যুগ ধরে দেশ বিদেশের জনতা ছুটে আসেন বঙ্গোপসাগরের তিরের এই পূণ্য তীর্থে। রথের দিন প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ মেতে ওঠেন জগন্নাথ দেবের আরাধনা। কিছু দিন আগে রথ যাত্রা হল। তবে অন্যবারের থেকে এবারের রথযাত্রার আকর্ষণ একটু বেশি। কারণ উল্টো রথের দিন খোলা হবে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের দরজা, ৩৯ বছর পর। কী আছে এই রত্ন ভাণ্ডারে? ইতিহাস বলে, মূল মন্দিরের গর্ভগৃহের কাছেই রয়েছে রত্নভাণ্ডার। দুটি ভাগে বিভক্ত এই রত্ন ভাণ্ডার, বাহির ভাণ্ডার ও ভিতর ভাণ্ডার। বাহির ভাণ্ডারের দরজা প্রায়ই খোলা হয়। বিভিন্ন উত্‍সবের সময় জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা মূর্তি যে অলঙ্কারে সাজিয়ে তোলা হয়, তা থাকে বাহির ভাণ্ডারে। ভিতর ভাণ্ডারে থাকে মূল্যবান গয়না, মোহর, রত্ন
১৯৮৫ সালে শেষবার খোলা হয়েছিল ভিতর ভাণ্ডারের দরজা। শোনা যায়, পুরীর রাজারা রাজ্য বিস্তারের পর যে যে রাজ্য জয় করতেন, সেই রাজ্য গুলির রাজার মুকুট এনে রাখতেন জগন্নাথ দেবের চরণে। সেই মুকুট গুলিও নাকি আছে ভিতর ভাণ্ডারে। শোনা যায় প্রাচীর কাল থেকেই দেশের অনেক রাজার আস্থার কেন্দ্র ছিল জগন্নাথ দেবের এই মন্দির। তাঁরাও নাকি বিভিন্ন সময়ে মন্দিরে প্রচুর সামগ্রী ধান সম্পদ উহপার হিসেবে পাঠাতেন মন্দিরে। শোনা যায় মহারাজা রনজিত্‍ সিং উপহার হিসেবে অনেক সোনা দানা উপহার দিয়েছিলেন পুরীর মন্দিরে। একটি তথ্য বলে রনজিত্‍ সিং তাঁর উইলে কোহিনুর হীরেও জগন্নাথ মন্দিরে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ইংরেজরা নাকি সেটা হতে দেয়নি। কথিত গল্প যাই থাক না কেন, রত্ন ভাণ্ডারের ভেতরে ঢুকলে যে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। রথের সময় সোনার গয়নায় সেজে লক্ষ লক্ষ ভক্তদের দর্শন দেন। প্রভু জগন্নাথের সেই রূপ দেখে জীবন সার্থক হয় পুণ্যার্থীদের। বলা হয়, পুরীর রত্নভাণ্ডারে যে বিপুল অলঙ্কার রয়েছে তার মাত্র ১০ শতাংশ প্রভু জগন্নাথকে পরানো হয়। তাহলে বাকিটা কত? দ্বাদশ শতকের প্রাচীন এই মন্দিরের অন্দরে থাকা রত্নভাণ্ডার নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুরীর রাজা গজপতি রামচন্দ্র দেবের তৈরি করা একটি তালিকা অনুসারে, জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার সোনার মুকুট সহ ১৫০টি সোনার অলঙ্কার সহ ৮৩৭টি জিনিস রয়েছে এই ঘরে। সোনার অলঙ্কারগুলির মোট ওজন ১৫ কেজির বেশি। সে তো ১৯২৬-এর কথা। মাঝখানে প্রায় একশো বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে পুরীর রত্নভাণ্ডার নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে নানা মিথ। প্রভু জগন্নাথের মাথার ব্রহ্মজ্যোতি হিরে, বলরামের মাথার নীলা বা সুভদ্রার মাথার মানিক, সবই এই বাহির-ভান্ডারে রাখা থাকে। ভিতরের অংশে রয়েছে এর কয়েকগুণ বেশি মহামূল্য রত্ন। বহুদিন কেউ ভিতর ভাণ্ডারে ঢোকেননি। ঘুটঘুটে অন্ধকার। টর্চ ছাড়া পাশের লোককেও নাকি ঠাহর করা মুশকিল। রত্নভাণ্ডারের ঘরের দেওয়ালে, ছাদে চিড় ধরায় দ্রু সংস্কারের প্রয়োজন বলে জানায় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। মন্দিরের জরাজীর্ণ দশা খতিয়ে দেখতেই ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল রত্নভান্ডার পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছিল ওড়িশা হাইকোর্ট। সেই মতো সরকারি কর্তা, ইঞ্জিনিয়ার থেকে সেবায়েত— ১৭ জনের দল মন্দিরে হাজির হয়। শরীরের সমস্ত কিছু খুলে রেখে গামছা পরে ঢুকতে হয় পরিদর্শকদের।

সাবেক বিশ্বাস, অন্ধকার কুঠুরিতে সাপখোপের রাজত্ব। অজস্র সাপ জগন্নাথ দেবের অলঙ্কার পাহারা দেয়। কেউ সেখানে ঢুকলেই সাপের হিসহিস শব্দ শুনতে পান। ১৯৮৪ সালে যখন রত্নভাণ্ডার শেষবার পরিদর্শন করা হয় তখনও নাকি পরিদর্শকরা সেই আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালে পরিদর্শন কমিটির সঙ্গে তাই সাপ-তাড়ানোর ওঝা ছিল। কী দেখেছিলেন সরকারি কর্তারা? শপথ নিয়ে ভাণ্ডারে ঢোকায় তা তাঁরা জানাতে রাজি হননি। তবে অনেকেরই অনুমান, পুরীর রত্নভাণ্ডারে যা রাখা আছে, তার সম্পত্তি দক্ষিণে যেকোনও মন্দিরকে হার মানাবে। সেই সম্পত্তি কত? কয়েকশো কোটি, হাজার কোটি না লক্ষ কোটি। তা জানতেই ব্যাকুল ভক্তকুল।