Election: ১৯৫২ থেকে ২০২৪, গণতন্ত্রের নানা চড়াই-উতরাই, নির্বাচনের নানা অজানা গল্প

Election: ১৯৫২ থেকে ২০২৪, গণতন্ত্রের নানা চড়াই-উতরাই, নির্বাচনের নানা অজানা গল্প

TV9 Bangla Digital

| Edited By: Tapasi Dutta

Updated on: Apr 18, 2024 | 4:44 PM

১৯৫২ থেকে ২০২৪। গণতন্ত্রের নানা চড়াই-উতরাই। নির্বাচনের নানা অজানা গল্প। দেখুন TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ভোটযুদ্ধ-দেশের লড়াই,পর্ব -৬।

ভারতীয় গণতন্ত্র পা রাখতে চলেছে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের আঙিনায়। আগের পাঁচটি পর্বে আমরা দেখিয়েছি ভারতীয় গণতন্ত্রের পথে কোন কোন চ্যালেঞ্জ এসেছে। কিন্তু একুশ শতকে কোন দিকে বাঁক নিল এই কাহিনী? কোনদিকে ঘুরল রাজনীতির মোড়? এখন তারই পালা। আজকের TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ভোটযুদ্ধ দেশের লড়াইয়ের পর্ব ছয় অর্থাৎ শেষ পর্ব।

নয়ের দশকের মাঝামাঝি। জোট রাজনীতির হাওয়া তখন দিল্লিতে। দেবেগৌড়া আর গুজরাল সরকারের পতন ঘটেছে। দেশে অকাল ভোট। শরিকদের সমর্থনে ক্ষমতায় এলেন অটল বিহারি। আর শুরুতেই পাকিস্তানের কাছে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলেন। দিল্লি-লাহোর বাস যাত্রার সূচনার কারিগরও বাজপেয়ী।

কিন্তু পাকিস্তান বন্ধুত্বের ফায়দা নিয়ে কার্গিল সেক্টরে ঢুকে পড়ল লাইন অফ কন্ট্রোল ক্রস করে। পাকিস্তানকে ৬৫ বা এক্টররের মতোই জবাব দিয়েছে ৯৯ সালে বাজপেয়ী সরকার। একদিকে বিদেশী শত্রুর আক্রমণ অন্যদিকে দিল্লিতে এনডিএ সরকারও টলোমলো। ১৯৯৯ সালের মে মাসে বাজপেয়ী সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিল এআইএডিএমকে। লোকসভায় তখন তাদের আসন সংখ্যা মাত্র ১৮। কিন্তু তাতেই নাভিশ্বাস উঠল বাজপেয়ী সরকারের। বিজেপির শীর্ষ নেতারা দফায় দফায় দিল্লি-চেন্নাই দৌড়দৌড়ি করলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। শেষ মুহূর্তে এআইএডিএমকে-র হাত ছেড়ে তাদের চিরশত্রু ডিএমকে-র হাত ধরল বিজেপি। এ বার বেঁকে বসল তামিল মানিলা কংগ্রেস। মাত্র এক ভোটে হেরে গেল ১৩ মাসের বাজপেয়ী সরকার। কংগ্রেস বিরোধী হাওয়া তখন দেশের দিকে দিকে। কংগ্রেস বিরোধী হাওয়ায় তখন দেশের মানুষের কাছে বিকল্প মুখ অটল বিহারি বাজপেয়ী। এই শতকের গোড়ায় হিন্দুত্ববাদী তকমা কিছুটা দূরে সরিয়ে রেখেই বাজপেয়ীর নেতৃত্বে পথ চলতে শুরু করেছিল বিজেপি সরকার। কিন্তু অযোধ্যাকে নিয়ে দিনেদিনে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের উন্মাদনা বাড়ছে।

সেই তীর্থযাত্রীদের ট্রেনেই ঘটে গেল এক নারকীয় ঘটনা। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০২। সবরমতী এক্সপ্রেস গোধরা স্টেশন থেকে রওনা দিল আহমেদাবাদের উদ্দেশ্যে। হঠাৎ চেন টানতে থামলো ট্রেন। ট্রেনে জ্বালিয়ে দেওয়া হল আগুন। চারদিকে গোঙানির শব্দ। ৫৯ জন নিরাপরাধ যাত্রী দম বন্ধ হয়ে হাঁসফাঁস করে মারা গেলেন ট্রেনের কামরায়। আর এই আগুন, দাবানলের আকার নিল গুজরাট জুড়ে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুনে জ্বলতে শুরু করল গুজরাট। অটল বিহারি বাজপেয়ী শান্তির আবেদন করলেন দেশবাসীর কাছে।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুন দেশ দেখেছে বারবার। তা স্বাধীনতার মুহূর্তেই হোক বা ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর শিখ বিরোধী দাঙ্গা। কিন্তু এ দেশ সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠে বারবার সব সম্প্রদায়ের হাতে হাত রেখে আবার হাঁটতে শুরু করেছে। কিন্তু সেই পথে বারবার বাধার সৃষ্টি করেছে আমাদের পড়শী পাকিস্তান। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪। অনেক কাঁটা এসেছে বাজপেয়ির পথে। কার্গিলের ক্ষত শুকোয়নি। তার আগেই আবার পাকিস্তানের জঙ্গিরা আক্রমণ করল রাজধানী দিল্লি। ১৩ ডিসেম্বর ২০০১। পাকিস্তানী ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি আই এস আই-এর মদতে জইশ-এ-মহম্মদের জঙ্গিরা ঢুকে পড়ল সংসদ ভবনে। সেবছরই নভেম্বরে একই কায়দায় হামলা হল জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায়। সত্যি বলতে কি, বাজপেয়ির আমলে পাকিস্তানী সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিয়েছে বারবার। জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় হামলার দুবছরের মধ্যেই আবার ২৪ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট 814 হাইজ্যাক করে কান্দাহার নিয়ে গেল পাকিস্তানী মদতপুষ্ট জঙ্গিরা।

হাইজ্যাকারদের দাবি টেররিস্ট মাস্টারমাইন্ড মাসুদ আজহার সহ আরো ৩৫ জন জঙ্গির মুক্তি। শেষমেশ ১৯০ ভারতীয় নাগরিকের প্রাণ বাঁচাতে পিছু হটতে হয় বাজপেয়ী সরকারকে। সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় এনডিএ-কে। ভারতের কাছে পরপর যুদ্ধে হেরেছিল পাকিস্তান। তাই একুশ শতকের শুরুতেই সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে জঙ্গি সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয় তারা।

বাজপেয়ী সরকারকে একদিকে বারবার সামলাতে হয়েছে পাকিস্তানের জঙ্গি হামলা। অন্যদিকে দেশের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলে জোট সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলেছে এনডিএ। এরই মধ্যে ২০০৩ সালের শেষের দিকে ছত্তীসগড়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে বিপুল জয় পেল বিজেপি।

উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং বিজেপি সভাপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু মনে করলেন, লোকসভা ভোটে যাওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। ভারতীয় অর্থনীতির অবস্থাও তখন বেশ ভাল। আর্থিক বৃদ্ধির হার সাত শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিজেপি আওয়াজ তুলল, শাইনিং ইন্ডিয়া– ভারত উদয়।

১৩ মে। ২০০৪ সাল। বাজপেয়ির আশঙ্কা ভুল হল না। মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি। আবার এক নম্বর দল হিসেবে এগিয়ে এসেছে কংগ্রেস। আর দেশ জুড়ে রমরমা বামেদের। বিজেপির আসন সংখ্যা কমলো। ১৮২ থেকে আসন সংখ্যা কমে হল, ১৩৮। কংগ্রেস ১৪৫। সিপিএম পেল ৪৩ টি আসন। সিপিআই ১০। এবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেল না কেউ। করুণানিধির ডিএমকে, লালুপ্রসাদের আরজেডি, শরদ পাওয়ারের এনসিপি সহ আরও আঞ্চলিক দল কংগ্রেসের হাত ধরল ইউপিএ সরকার গড়তে। কিন্তু তাও ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছানো গেল না। বামেদের বাইরে থেকে সমর্থনে তৈরি হল ইউপিএ সরকার।

এবার প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী কে? সবার নজর কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর দিকে। কিন্তু সনিয়া না বলে দিলেন। এবার কংগ্রেসের অন্দরে জল্পনা। ছেলে রাহুলকে কি সনিয়া এগিয়ে দেবেন প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য?

রাহুল তখন যুব কংগ্রেসের মুখ হয়ে উঠছেন। নাম উঠল প্রণব মুখোপাধ্যায়েরও! কিন্তু শেষমেশ সনিয়া প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি ছেড়ে দিলেন দেশে উদারবাদী অর্থনীতির জনক মনমোহন সিংয়ের জন্য। প্রধানমন্ত্রী হলেন মনমোহন সিং। পথ চলতে শুরু করল ইউপিএ সরকার।

ইউপিএ সরকারে বামেদের এই দাপটের কারণ খুঁজতে গেলে একটু পিছিয়ে যেতে হবে। একুশ শতকের গোড়া থেকেই বাংলার রাজনীতি সরাসরিভাবে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল দেশের রাজনীতিতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামটা বারবার উঠে আসছিল শুধু বামেদের প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়, বাংলায় বামপন্থার প্রধান বিরোধী হিসেবে।

রাজ্যে জ্যোতি বসুর সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিদিন বাড়ছিল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। নতুন মুখের দিকে ঝুঁকলো বামেরা। থামলো ইন্দিরা ভবন থেকে রাইটার্স বিল্ডিঙের উদ্দেশ্যে যাত্রা। ইতি পড়ল এক সুদীর্ঘ সাফল্যে ভরা রাজনৈতিক অধ্যায়ের। সিপিএম পলিটব্যুরোর প্রতিষ্ঠাতা সংসদীয় রাজনীতি থেকে অবসর নিলেন। পার্টি এগিয়ে গেল বুদ্ধদেবকে মুখ করে।

ব্র্যান্ড বুদ্ধ মেলে ধরলেন এক নতুন সাজের বামফ্রন্টকে। মুখ্যমন্ত্রী ডাক দিলেন DO IT NOW। এই বামফ্রন্ট শিল্প বন্ধু। ক্রমশ বুদ্ধদেব হয়ে উঠলেন উদারনীতির কারিগর ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নয়নমনি। বদলাচ্ছিল সময়। বদলাচ্ছিলো বামেরাও। এমন সময় ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’ স্লোগান তুলে জাগলো এক নতুন সিপিএম।

একদিকে বুদ্ধদেবের শিল্প বার্তায় স্বপ্ন দেখতে শুরু করল এই বাংলার বহু তরুণ। তার প্রতিফলনও হল ভোটবাক্সে। ২০০৪ এর লোকসভায় রাজ্য থেকে ৩৫টি আসন পেল বামেরা। আর তৃণমূলের একমাত্র নির্বাচিত সাংসদ মমতা। ২০০৬-এর রাজ্য বিধানসভা ভোটেও সেই ছবির পরিবর্তন হল না। লাল ঝড়ে উড়ে গেল তৃণমূল। বিধানসভার ২৯৪ টি আসনের মধ্যে বামেরা পেল ২৩৫ টি আর তৃণমূল ৩০। শিল্পের স্লোগানই বদলে দিল বামেদের ভোটের অঙ্ক। আইটি থেকে অটোমোবাইল। কত শিল্পের প্রতিশ্রুতি! খুব তাড়াতাড়ি শিল্প গড়তে হবে। আর সেখানেই কিভাবে হোঁচট খেল বামেরা? বামেরা কি চেনা ছক থেকে বের হতে গিয়েই নিজেদের বিপদ ডেকে আনলো? সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম কীভাবে ঘুরিয়ে দিল রাজ্য আর দেশের রাজনীতির মোড়?

নন্দীগ্রামে সালেম গোষ্ঠীর কারখানা, শালবনিতে জিন্দল গ্রূপের স্টিল ফ্যাক্টরি, সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হল। আর সেই জমি অধিগ্রহনের ঘুরে গেল রাজনীতির হাওয়া। নড়ে গেল বামেদের ভিত। চাষের জমিতে শিল্প? যে চাষের জমির অধিকার কৃষকদের হাতে তুলে দিয়েছে বামেরাই, সেই জমিই কেড়ে নেওয়া হবে?

বিরোধী নেত্রী হিসেবে রাজ্যে জমি আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরু হল ধর্মতলায় মমতার অনশন, তারপর সিঙ্গুরে তৈরি হল ধর্নামঞ্চ। উত্তাল রাজ্য রাজনীতি।

২০০৬ সালের ১৮ মে। সিঙ্গুরে ছোট গাড়ি তৈরির প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন রতন টাটা। তারপর থেকে শুরু হয় বিরোধীদের আন্দোলন আর বিক্ষোভ। নেপথ্যে তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস। গোপালনগর, বেড়াবাড়ি, বাজেমেলিয়া, ঘাসের ভেড়ি, সিংহের ভেড়িতে ছড়িয়ে পড়ল আন্দোলনের আগুন।

২০০৬ – এর ৩০ শে নভেম্বর। সিঙ্গুরে গিয়ে আক্রান্ত হলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অশান্তির রেশ এসে পৌঁছালোরাজ্য বিধানসভায়।

১৪ মার্চ ২০০৭ দিকে দিকে জান দেব জমি দেব না স্লোগান দিয়ে ৩০০০ হাজার পুলিশের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসছিলেন মানুষ। এই জনরোষ ঠেকাতে চলল গুলি। বুলেটের নিশানায় নারী-শিশুরা।

বামেদের সমালোচনায় পিছপা হল না কেন্দ্রের জোটসঙ্গী কংগ্রেসও। তাঁরাও ঝুঁকছিলেন মমতা বান্দ্যোপাধ্যের আন্দোলনের দিকে। রাজ্যে হারানো জমি ফেরত পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতেই ২০০৮ সালে আমেরিকার সঙ্গে নিউক্লিয়ার চুক্তিতে বামেদের সঙ্গে গোল বাঁধলো কংগ্রেসের। পরমাণু চুক্তি ইস্যুতেই বামেরা সমর্থন প্রত্যাহার করল ইউপিএ সরকার থেকে। কিন্তু ইউপিএ সরকার পড়লো না। আস্থা ভোটে জয় হল মনমোহনের।

সিপিএম ও বাম দলগুলির এই সিদ্ধান্তকে দেশের মানুষ কিন্তু খুব সুনজরে দেখেননি। বামেরা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে। মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে আবার প্রতিষ্ঠিত হল ইউপিএ সরকার। আরও শক্তিশালী হল কংগ্রেসের হাত। ২০৬ টি আসন পেল কংগ্রেস। সিপিএম ৪৩ থেকে নেমে গেল ১৬ তে। বিজেপি পেল ১১৬ টি আসন। রাজ্যে রেকর্ড গড়লো তৃণমূল। কংগ্রেসের সাথে হাত মিলিয়ে পেল ১৯ টি আসন। কিন্তু ২০০৯ -এর পর কোন কালো মেঘ অপেক্ষা করছিল ইউপিএ -টু -এর জন্য?

২০ মে। ২০০০৯। দ্বিতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হলেন মনমোহন সিং। ২০০৮ সাল থেকেই বিশ্বজুড়ে মন্দা। কিন্তু সেই আঁচ পড়লো না ভারতে। পরিস্থিতি সামাল দিলেন ইকোনমিক মাস্টারমাইন্ড মনমোহন। প্রথম ইউপিএ সরকার ভরসা জাগিয়েছিল মানুষের মনে। কিন্তু মনমোহন সিংয়ের দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শুরু তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে হল একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ।

২০১১। জন লোকপাল বিলের খসড়ার বিরোধিতা করে পথে নামলেন আন্না হাজারে। প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী কেন এই বিলের বাইরে? আমরণ অনশনে বসলেন আন্না। তাঁর সমর্থনে এগিয়ে এলেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। কালো টাকা ফেরত আনার বিষয়েও আওয়াজ উঠলো আন্নার মঞ্চ থেকে। নেতৃত্বে বাবা রামদেব। প্রশ্ন উঠলো মনমোহনের প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়েই। নিশানায় কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট সনিয়া গান্ধীও। প্রশ্ন উঠল রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য। কিন্তু এই দুর্নীতির মাঝে পুত্র রাহুলের জন্য পথ কাঁটায় ভরা হবে, সেটা বুঝতে পেরেছিলেন সনিয়া। কংগ্রেসের অন্দরেও তখন জল্পনা। ড্যামেজ কন্ট্রোল হবে কী করে? বিরোধী দল বিজেপি এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ কংগ্রেসকে। একদিকে দুর্নীতির জাল। অন্যদিকে জাতীয় সুরক্ষার প্রসঙ্গও উস্কে দিচ্ছিল ২০০৮ সালের মুম্বই হামলা।

২৬ শে নভেম্বর। ২০০৮। মুম্বাই শহরে পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত জঙ্গিদের ফিদাঈন হামলা। গোটা পৃথিবী দেখল সন্ত্রাসবাদের এক অন্য ছবি। সন্ত্রাসবাদীদের গুলি থেকে ছাড় পেল না শিশু, বৃদ্ধরাও। ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস, তাজ হোটেল, ওবেরয়, কামা হাসপাতাল কেঁপে উঠল ভারতের কমার্শিয়াল ক্যাপিটাল। গোটা শহর জুড়ে রক্তের ছিটে।

মুম্বাই হামলা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো লোকসভাতেও। জাতীয় সুরক্ষা প্রশ্নে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ বিরোধী দলনেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিলকে পদত্যাগ করতে হল মুম্বাই হামলার দায় স্বীকার করে। সেই পদে এলেন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম।

ইউপিএ -২-এর শুরুতেই মনমোহন সিংয়ের সরকার আরও একবার হোঁচট খেল। ২০০৯ সালে কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পরেই ২০১০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আইন, বাণিজ্য ও বিচার বিষয়ক জনতা সরকারের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রশ্ন তুললেন ভারতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের নিরাপত্তা নিয়ে।

ইভিএম নিয়ে যতই প্রশ্ন উঠুক আজও ভোট হচ্ছে ইভিএমেই। এবারে ৯৭ কোটি ভোটার নিজের মতপ্রকাশ করবেন এই যন্ত্রের মাধ্যমেই। কিন্তু ২০১২ সাল থেকেই যন্ত্র বিকল হতে শুরু করেছিল ইউপিএ সরকারের আর কংগ্রেসের। এই সুযোগকে হাতছাড়া করেনি বিজেপি।

একদিকে দেশে বেকারত্ব বাড়ছে অন্যদিকে শাসক নেতামন্ত্রীদের কোটিকোটি টাকার পাহাড়। এই সুযোগকে হাতছাড়া করেনি বিজেপি। শিল্পবন্ধু, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আর গুজরাট মডেলকে তুলে ধরে দেশের রাজনীতিতে মুখ হয়ে উঠছেন নরেন্দ্র মোদী।

নরেন্দ্র মোদী ডাক দিলেন আচ্ছে দিনের। স্বপ্ন দেখালেন বেকারদের হাতে কাজের। দেশে কালো টাকা ফেরত আনার দাবিও করলেন তিনি। দুর্নীতি ইস্যুতে উড়ে গেল দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার। দেশের দিকে দিকে মোদির জয়জয়কার। বিজেপি পেল ২৮২ টি আসন। কংগ্রেস মাত্র ৪৪ টি। পাল্টে গেল বাংলারও ছবি সবুজ ঝড়ে উড়ে গেল বামেরা। ৩৪ টি আসন পেল তৃণমূল। সিপিএম গোটা দেশে পেল মাত্র ৩ টি আসন।

মোদী ক্ষমতায় এসে কী পদক্ষেপ করলেন কালো টাকার লেনদেন বন্ধ করতে? পড়শী পাকিস্তানকে কী বার্তা দিলেন তিনি? কিভাবে মেলে ধরলেন ভারতকে বিশ্বের সামনে?

মোদী সরকার পথ হাঁটতে শুরু করল আচ্ছে দিন আনার লক্ষ্যে। পয়লা জুলাই ২০১৫… দেশ দেখলো এক নতুন স্বপ্ন। শুরু এক নতুন যুগের। ডিজিটাল ইন্ডিয়া বদলে দিল অনেক কিছু। কিন্তু তার পরের বছরই জাতীয় সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠল। ক্ষমতায় আসার দু-বছরের সমালোচনার মুখে মোদী সরকার।

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬। বর্ডার পেরিয়ে ৪ জন পাকিস্তানী জঙ্গি হামলা করল উরি সেনা ছাউনিতে। আচমকা হামলায় প্রাণ হারালেন ১৯ জন ভারতীয় সেনা জওয়ান। কিন্তু চুপ করে বসে রইলো না ভারত। পাকিস্তানকে এবার জবাব দেওয়ার পালা। উরি আক্রমণের সাত দিনের মধ্যে বর্ডার পেরিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক লঞ্চ করল ভারতীয় সেনা। পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীরে ধ্বংস করল জঙ্গি ঘাঁটি। এবার জঙ্গিদের অর্থের যোগান বন্ধ করার পালা। আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যুদ্ধ ঘোষণা করলেন কালো টাকার বিরুদ্ধে। ৮ নভেম্বর, ২০১৬। রাত ৮. ১৫। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্স।

যতই পথ বন্ধ করা হোক কালো টাকার, যতই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হোক, পাকিস্তানী মদতপুষ্ট জঙ্গিরা আবার রক্তাক্ত করল ভারতের মাটি। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। গোটা দেশে দিনটা পালন হচ্ছে ভালোবাসার দিন হিসেবে। কাশ্মীরের পুলওয়ামা রক্তাক্ত হয়ে উঠল সেদিনই। সেনা কনভয়ে ঢুকে পড়ল জয়েশ-এ-মহম্মদ মদতপুষ্ট জঙ্গির গাড়ি। বিস্ফোরণে নিহত ৪০ জন ভারতীয় জওয়ান। আবার ভারত তার জবাব দিল ভারত। পাকিস্তানে বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক লঞ্চ করল ভারতীয় বায়ু সেনা।

এই নতুন ভারতের ছবি তুলে ধরেই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতলেন নরেন্দ্র মোদী। এবার আরও বেশি আসন পেল বিজেপি। দেশজুড়ে ৩০৩। কংগ্রেস ৫২। তৃণমূল কংগ্রেস ২২। ডিএমকে ২৪ টি। এবার আর এনডিএ শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হল না বিজেপিকে

তারপর ৫ বছর কেটেছে। আবার একটা নির্বাচনের সামনে আমরা। এবার বিজেপির ভোট যুদ্ধের হাতিয়ার রাম মন্দির। সাড়ে তিন দশকের রামমন্দির আন্দোলন রূপ পেয়েছে এবছরই। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল হয়েছে। জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থে কার্যকর করা হয়েছে সিএএ। অন্যদিকে মনিপুরের হিংসা অস্বস্তি বাড়িয়েছে শাসকের। আমাদের রাজ্যের শাসকও বিদ্ধ দুর্নীতির কালিতে। আবাস, ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ। হাজার দিন পার করে রাস্তায় বসে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা। দিকে দিকে শুধুই ইডি-সিবিআই।