বদলে যাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত?
বদলে যাওয়া বাংলাদেশে এবার জাতীয় সঙ্গীতটাও পাল্টে দেওয়ার দাবি তোলা শুরু হয়ে গেছে। দাবিটা তুলছে জামায়েতে ইসলামি। তারা বিভিন্ন মানুষের মুখ দিয়ে কিছু যুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতীয়। তাঁর গান কেন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সময়ে রাশিয়ার একজন যুদ্ধবিরোধী সাধারণ মানুষকে বলতে শুনেছিলাম ইউক্রেনে জন্মেছিলেন নিকোলাই গোগোল। তিনি ঘুমিয়ে আছেন মস্কোয়। গোগোলের কোনও ভাগ হয় না। আমরাও তো তাই জানতাম। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের কোনও ভাগ হয় না। আজও যদি ক্রিকেটের মাঠে ভারত-বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় তাহলে পরপর বেজে উঠবে জন-গণ-মন আর আমার সোনার বাংলা। এক কবির লেখা দুই গান দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত। এই উদাহরণও তো আর নেই। তবে, কতদিন থাকবে জানি না। কারণ, বদলে যাওয়া বাংলাদেশে এবার জাতীয় সঙ্গীতটাও পাল্টে দেওয়ার দাবি তোলা শুরু হয়ে গেছে। দাবিটা তুলছে জামায়েতে ইসলামি। তারা বিভিন্ন মানুষের মুখ দিয়ে কিছু যুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতীয়। তাঁর গান কেন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হবে। আমার সোনার বাংলা ইসলামি ভাবধারায় রচিত নয়। আমার সোনার বাংলা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে লেখা হয়েছিল। আজ কি তাহলে আমরা গান গেয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে জুড়তে চাইছি নাকি, ইত্যাদি ইত্যাদি। আর অদ্ভূত ব্যাপার হলো এনিয়ে ওদেশে সবাই চুপ। বাংলাদেশে তদারকি সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস। বিএনপি। এমনকি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা, সবাই যেন বোবা হয়ে গেছেন। আসলে কি জানেন, ঘটনা হল স্বাধীন বাংলাদেশে অন্তত তিনবার জাতীয় সঙ্গীত বদলের চেষ্টা হয়েছে। ১৯৭৫ সালে মুজিবর রহমানকে হত্যার পর নতুন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের দাবিতে কমিটি গড়েছিল। সে কমিটি কাজি নজরুল ইসলামের ‘চল চল চল’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত করার সুপারিশ করে। এরপর জাতীয় সঙ্গীত বদলের চেষ্টা করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান। ১৯৭৯ সালে তিনি বিশিষ্ট গীতিকার মনিরুজ্জামান মুনিরের লেখা ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে চালু করার উদ্যোগ নেন। তৃতীয়বারের বড় চেষ্টাটা হয় ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে খালেদা জিয়ার আমলে। যদিও, কারও পক্ষেই রবি ঠাকুরের গানকে বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি। আজ আবার সেই চেষ্টা নতুন করে শুরু হয়েছে। তবে, প্রতিবাদেও বহু মানুষ রাস্তায় নেমেছেন।
শুক্রবার সারা বাংলাদেশে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে বামপন্থী শিল্পী সংগঠন উদীচি। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশজুড়ে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আমার সোনার বাংলা গেয়েছেন। এছাড়াও ছায়ানট, সত্যেন
সেন শিল্পী গোষ্ঠী, খেলাঘর আসর, কক্সবাজার থিয়েটার, থিয়েটার আর্ট, সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের মতো শিল্পী-সাহিত্যিকদের নানা সংগঠন নিজেদের পরিসরে জাতীয় সঙ্গীত পাল্টে দেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। বহু জায়গায় নানা অজুহাতে, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আবার প্রশাসন সাধারণ মানুষকে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার অনুমতি দেয়নি। তসলিমা নাসরিন দেখলাম ফেসবুকে লিখেছেন আমি যখন প্যারিসে ছিলাম তখন ফরাসি বন্ধুদের বলতাম যে তোমাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘লা মারসেইয়েজ’-এ তো কেবল খুনোখুনির কথা। আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতে আছে ভালবাসার কথা। ওরা আমার সোনার বাংলা শুনে মুগ্ধ হয়ে যেত। তসলিমা লিখেছেন, আহা দুঃখিনি দেশ আমার। জাতীয় সঙ্গীত কেড়ে নেওয়া দেশের হৃদপিণ্ড কেড়ে নেওয়ার মতো। জিহাদিদের কবল থেকে কবে মুক্তি পাবে আমার দেশ, জানি না।