Dev: ‘বাবুলদা আজ আমাদের দলে, কাল…’, বলেই থামলেন তারকা-সাংসদ!
Babul Supriyo: বাবুলের যোগদানকে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূলের বুথস্তরীয় কর্মী থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতৃত্বও। সোমবার অভিনেতা-সাংসদ দেব এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই আচমকা তাল কাটেন
শিলিগুড়ি: নিজের ছবির শুট্যিং-এর জন্য দার্জিলিঙে পাড়ি দিয়েছিলেন ঘাটালের সাংসদ-অভিনেতা দেব (Dev) ওরফে দীপক অধিকারী। শুট্যিং সেরে ফেরার পথে তৃণমূলে সদ্য যোগদানকারী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র (Babul Supriyo) প্রসঙ্গে মন্তব্য় করতে গিয়ে কিছুটা থমকালেন দেব। তারপর, খানিক যেন সাবধানী মন্তব্য করেই তড়িঘড়ি পা বাড়ালেন বিমানবন্দরে।
শনিবারই তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শাসক শিবিরে যোগদান করেন বাবুল। ইতিমধ্যেই তৃণমূল সুপ্রিমোর সঙ্গে নবান্নে সাক্ষাত্-ও সেরেছেন তিনি। বাবুলের যোগদানকে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূলের বুথস্তরীয় কর্মী থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতৃত্বও। সোমবার অভিনেতা-সাংসদ দেব এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই আচমকা তাল কাটেন। নিজেই বলেন, “বাবুলদা’র সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে খুব ভাল সম্পর্ক। বাবুলদা’ আজ আমাদের দলে এসেছেন। কাল হয়ত…” এটুকু বলেই থেমে যান দেব। তড়িঘড়ি পা বাড়ান বিমানবন্দরের দিকে।
দেবের এই আকস্মিক ছন্দপতন নজর এড়ায়নি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাহলে কি বাবুলের যোগদানে ঠিক খুশি হতে পারেননি ঘাটাল-সাংসদ। নাকি পরোক্ষে কোনও অনিশ্চয়তা ভর করেছে তৃণমূলের অন্দরে, যা এড়াতে পারছেন না খোদ অভিনেতাও? প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট মহলের।
বস্তুত নির্বাচন আবহেও যে বাবুল সুপ্রিয় বিজেপির কোনও সাংগঠনিক দায়িত্বে না থেকেও শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ও সংবাদমাধ্যমে তৃণমূলী নেতানেত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বাগযুদ্ধে জড়িয়েছেন এমনকী, নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে একদা যিনি লিখেছেন, ‘প্রাণ থাকতেও তৃণমূলে যোগ দেবেন না’, সেখানে তাঁর সেই শাসক শিবিরে যোগদানকে ঠিক কতটা অন্তর থেকে মেনে নিয়েছে জোড়াফুলের বুথস্তর থেকে শুরু করে উচ্চ নেতৃত্ব তা নিয়ে বিস্তর সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিশেষ করে বাবুলের যোগদান প্রসঙ্গে এক আপামর ‘সাদর অভ্যর্থনা’ নজর কেড়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের অনুমান, একুশের নির্বাচন পর্ব থেকেই গোষ্ঠীকোন্দলকে প্রতিহত করতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ঘাসফুল শিবির (TMC)। সেখানে খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাবুলের যোগদানে কোনও বিরোধ না থাকার নেপথ্যে আসলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সাত বছর বিজেপিতে থাকার পর কেন তিনি দল বদল করলেন, রবিবাসরীয় বিকেলে তার পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা এক লাইনেই দিয়ে দিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। শহরের একটি হোটেল সাংবাদিক বৈঠক করে স্পষ্ট ভাষায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বলেন, “আমি প্রথম একাদশে থেকে খেলতে চাই। যদি মোহনবাগানের প্রথম একাদশে সুযোগ না পাই, তাহলে মোহনবাগান বি-টিমের হয়ে খেলব না। দরকারে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলব।” তাঁর বক্তব্য খুব সাফ, “কারোর কাছে নিজেকে আমায় প্রমাণ করার দরকার নেই। কিন্তু আমি সুযোগকে কাজে লাগাতে চাই। মমতাদি এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝেছেন যে আমার মধ্যে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। সেই জন্য আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
বাবুলের মতে, তিনি বর্তমানে বিজেপির প্রথম একাদশে নেই। বস্তুত, তাঁকে প্রথম একাদশ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল বলেই ইঙ্গিত করছেন সাংসদ। তবে কি মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর কারণেই বিদ্রোহ? রবিবারের সাংবাদিক বৈঠকে সরাসরি এই প্রশ্নও ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল বাবুলের উদ্দেশ্যে? সদুত্তর দেননি বাবুল সুপ্রিয় বড়াল। তৃণমূলের প্রথম একাদশের অর্থ কি তাঁকে রাজ্য সরকারে কোনও মন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে? এই প্রশ্ন ধেয়ে আসলেও এড়িয়ে যান লোকসভার সাংসদ। বরং বারবার করেই শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের মুখাপেক্ষী হন তিনি।
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার এই ঘটনাকে ‘বিরাট বড় সুযোগ’ হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন বাবুল। পাশাপাশি জানিয়েছেন, যা ঘটার গত ৪ দিনেই ঘটেছে।যদিও বাবুল বারবার করে মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতি ছাড়ার যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন, তাতে কোনও ভনীতা ছিল না। তবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার তাঁর সিদ্ধান্ত যে বিরাট বড় একটা সুযোগ, এবং তৃণমূলের পক্ষ থেকে যে তাঁকে আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যেই কোনও গুরুদায়িত্ব দেওয়া হবে, সেটাও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, অর্পিতা ঘোষের ছেড়ে আসা রাজ্যসভার আসনে তাঁকে প্রার্থী করে ফের একবার দিল্লি পাঠাতে পারে তৃণমূল। কারণ তিনি যে আসানসোলের সাংসদ পদ থেকেও ইস্তফা দেবেন, সে কথা এ দিন সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই স্বীকার করেছেন এই সাংসদ। তৃণমূল যে উষ্ণতা নিয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছে, তাতে তিনি ‘আপ্লুত’ বলেও উল্লেখ করেছেন বাবুল সুপ্রিয়।
আরও পড়ুন: Jitendra Tiwari: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরেছে মোদী-পদ্মের ছবি, জিতেন্দ্রর গতিপ্রকৃতিতে জল্পনা!