মগরা: বৃহস্পতিবার ছিল মেয়ের জন্মদিন। চার বছরের ছোট্ট মেয়ে। মেয়ের জন্মদিনের আয়োজনে সাধ্যমতো সবরকম চেষ্টা করেছিলেন অভিজিৎ রায়। দুপুরে রান্নার জন্য মাংসও কিনে এনেছিলেন। সংসারে দারিদ্র, অনটন ছিলই। তার মধ্যেও চেয়েছিলেন মেয়ের মুখে একটি হাসি ফোটাতে। কিন্তু তারপর কী থেকে কী হয়ে গেল! বাড়িতে মাংস কিনে আনার পর, কখন যে আবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কেউই টের পাননি। বাড়ির লোকেরা প্রথমে ভেবেছিলেন হয়ত কিছু কাজে গিয়েছেন। কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেলেও যখন তিনি বাড়ি ফিরলেন না, তখন শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। সকালে থানায় মিসিং ডায়েরি করারও কথা চলছিল। কিন্তু এসবের মধ্যেই যে খবর আসে, তাতে পরিবারের সকলের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি আমবাগানে গাছের থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় বছর ছত্রিশের অভিজিতের দেহ। মেয়ের জন্মদিনের দিনেই পরিবারের সকলকে নিঃস্ব করে দিয়ে চলে গেলেন অভিজিৎ। ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির মগরা থানা এলাকার ছোট খেজুরিয়া এলাকায়।
স্থানীয় সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, অনেক কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে সংসার চালাতেন অভিজিৎ রায়। বাড়িতে স্ত্রী ও চার বছরের কন্যা ছাড়াও রয়েছে আরও এক সন্তান। সাত বছরের এক ছেলে রয়েছে বাড়িতে। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে হুগলির মগরা থেকে উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরে এক জুট মিলে কাজ করতে যেতেন। কী কারণে আচমকা এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন ওই ব্যক্তি, তা স্পষ্ট নয় স্থানীয় বাসিন্দা ও আত্মীয় স্বজনদের মনে। তবে এলাকাবাসীদের অনুমান, আর্থিক অনটনের কারণেই এই পথ বেছে নিয়ে থাকতে পারেন তিনি।
শুক্রবার সকালে যখন ওই ব্যক্তির দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় আমবাগান থেকে। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় মগরা থানায়। এরপর পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই ব্যক্তির হাতে পেন দিয়ে লেখা ছিল, তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। মৃতের এক বন্ধু মনে করছেন, জুট মিলে কাজ করে যে টাকা আয় হত, তাতে ঠিক মতো সংসার চলত না। সেই কারণেই মানসিক অবসাদে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন তিনি। মৃতের কাকাও বলছেন, সাংসারিক অনটনের কারণেই আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন অভিজিৎ।