মালদা: পঞ্চায়েত দখল নিয়ে বিরোধ মেটেনি। চলেছে পুলিশের গুলিও। তবু শান্ত হয়নি পরিবেশ। শাসক শিবিরের গোষ্ঠীকোন্দলকে (TMC) কেন্দ্র করে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল কালিয়াচকের এক নম্বর পঞ্চায়েত। মজুত বোমা বিস্ফোরণের জেরে গুরুতর জখম হল ওই পঞ্চায়েতের বাবুরহাট গ্রামের দুই শিশু। মঙ্গলবার সকালে ভয়াবহ বিস্ফোরণের (Bomb Blast) জেরে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী।
কালিয়াচক থানার পুলিশ জানিয়েছে, বাবুরহাট গ্রামের এক পরিত্যক্ত জমিতে বোমা মজুত করে রাখা হয়েছিল। কয়েকজন বাচ্চা সেখানে খেলতে যায়। তাদের মধ্যে দুই বালক ওই বোমাগুলিকে বল ভেবে হাতে তুলে নিলে আচমকা বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার আঘাতে তারা জখম হয়। উদ্ধার করে ওই দুই শিশুকে নিয়ে আসা হয় স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে তাদের চিকিত্সা চলছে। কালিয়াচক থানার আইসি মদন মোহন রায়ের নেতৃত্ব অল্প সময়ের মধ্যেই এসে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনীও। কালিয়াতচকের আইসি জানিয়েছেন, প্রায় এক জার বোমা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে। বোমাগুলি নিষ্ক্রীয় করার জন্য খবর দেওয়া হয়েছে বম্ব স্কোয়াডকে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
স্থানীয়দের অবশ্য দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা। ভুলে গেলে চলবে না কিছুদিন আগেই এই পঞ্চায়েত দখলের জেরেই তৃণমূলের বিজয় মিছিলে গুলি চলে। পাল্টা ফায়ারিং করে পুলিশও। তারপর থেকেই উত্তপ্ত এলাকা। গ্রামবাসীদের অনুমান, সেই বিবাদের জেরেই বোমা মজুত করে রাখা হয়েছিল।
গত শুক্রবার, তৃণমূলের (TMC) পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচন ঘিরে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অবরুদ্ধ হয় জাতীয় সড়ক। আর সেই অবরোধ তুলতে গিয়ে পুলিশের দিকে ধেয়ে আসে গুলি! পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ। গোলাগুলির ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন কালিয়াচকের ১ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান আলিউল শেখ। বাজির আগুন ছিটে লাগায় পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন আলিউল। তাঁর আরও অভিযোগ, বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।
নব নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রধানের কথায়, “প্রাক্তন প্রধান আমিরুদ্দিন শেখ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়। আমি প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর বিজয় মিছিলে পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গোলাগুলি চালায় আমিরুদ্দিনের দলবল।” পাল্টা, আমিরুদ্দিন গোষ্ঠীর দাবি, বিজয়মিছিলের নামে নতুন প্রধান ও তাঁর দলবল বাড়ি বাড়ি গিয়ে লুঠ চালিয়েছে। মোটা টাকা ও গয়না লুঠের পাশাপাশি মারধর ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ প্রাক্তন প্রধানের।
ওইদিন ছিল, কালিয়াচক ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচন। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত এই পঞ্চায়েত এদিন নবনির্বাচিত প্রধান হন তৃণমূলের আলিউল শেখ ওরফে জ্যোতি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ৯ জন সদস্য প্রধান পদে আলিউল শেখকে সমর্থন করেন। ফলে নতুন প্রধান নির্বাচিত হন তিনি। আগে থেকেই প্রহরায় ছিল পুলিশ। একবার দুই পক্ষের হাতাহাতি ছাড়িয়েছে তারা। কিন্তু তার পর তৈরি হল তুলকালাম পরিস্থিতি।
নতুন প্রধান নির্বাচনের পর বিজয় মিছিলে বেরোয় তৃণমূলের এক পক্ষ। অন্যদিকে আরেক পক্ষ তাদের আক্রমণ করে বলে খবর। শুরু হয় মারামারি, বিশৃঙ্খলা। এর পর উত্তেজনা প্রশমন করতে ছুটে যায় পুলিশ। কিন্তু প্রথমে সিভিক ভলান্টিয়ারদের মারধর করা হয় বলে খবর। এমনকি তার পর পুলিশ অফিসাররা গেলে তাঁদেরও গায়ে হাত তোলা হয়। তার পর মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ধেয়ে আসে গুলি। এর পর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় জাতীয় সড়ক। পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে আহত হন পুলিশ অফিসার, সিভিক ভলান্টিয়ার থেকে তৃণমূলের নেতারা।
আরও পড়ুন: Bhawanipur Bypoll Results 2021: ভবানীপুরে রেকর্ড জয় মমতার, তবুও কুকথা অনুব্রতর!