পূর্ব বর্ধমান: ‘ভালবাসা আর যুদ্ধে সব চলে’! বাংলা-হিন্দি সিনেমার সৌজন্যে এই সংলাপ একেবারে গুলিয়ে খাওয়ানো সব প্রজন্মকে। কেউ কেউ আবার বাস্তবে তার প্রমাণও রেখে দেয়। তা বলে ভালবাসা না পেয়ে প্রেমিককে লক্ষ্য করে গুলি করার অভিযোগ যে উঠতে পারে বাড়ির মেয়ের বিরুদ্ধে, ভাবতেই পারছে না কাটোয়ার নাবালিকার পরিবারের লোকেরা। তবে ওই নাবালিকা কিন্তু এখনও নিজের বক্তব্যে অনড়। বলছে, যে দোষ করবে মার তাকে খেতেই হবে।
দিনভর তল্লাশির পর বুধবার রাতে কাটোয়ার বাইপাস রোডের একটি মাঠ থেকে গ্রেফতার করা হয় ওই তরুণীকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রেমিককে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। অভিযুক্তের কাছ থেকে একটি ওয়ান শটার ও বুলেট উদ্ধার হয়েছে।
একই সঙ্গে কাটোয়া পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘক্ষণ জেরার পর ওই নাবালিকা স্বীকার করেছে, সে-ই প্রেমিককে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। কিন্তু এই বন্দুক ওই নাবালিকা কীভাবে পেল? পুলিশ সূত্রে খবর, জেরার মুখে তাও জানিয়েছে অভিযুক্ত।
বছরখানেক আগে এই ছেলের সঙ্গে বিয়ে করা নিয়ে দুই পরিবারের মতানৈক্য তৈরি হয়। সেই সময়ই বাড়ি ছেড়ে ঝাড়খণ্ডে চলে গিয়েছিল এই নাবালিকা। সেখানেই থাকত। বিভিন্ন বিয়ে বাড়িতে নাচের ট্রুপের সঙ্গে যেত। সম্প্রতি উত্তর প্রদেশে একটি বিয়ে বাড়িতে নাচের জন্য গিয়েছিল। সেই সময়ই কোনও একজনের কাছ থেকে বন্দুক ও দু’টি বুলেট হাতিয়ে নেয় সে। সেই বন্দুক আর গুলি নিয়ে ফিরে আসে কাটোয়ায়।
পুলিশকে সে জানিয়েছে, পুরনো রাগ। বছর ঘুরলেও তা সে কাটাতে পারেনি। ঘর ছেড়ে বাইরে থাকলেও মাথায় সবসময় ওই যুবকের কথাই ঘুরত। জেদ, রাগ বাড়ছিল। এরপরই এই ঘটনা। পুরনো প্রেমিকের গালে চুমু খেয়েই চালিয়ে দিল গুলি। কাটোয়ার সার্কাস ময়দানের অন্ধকার গলিতে বুধবার রাতেই ঘটিয়ে ফেলল ভয়াবহ কাণ্ডটা।
লালচাঁদ শেখ নামে ওই যুবক নিজেই জানিয়েছে, “প্রথমে আমার গালে একটা চুমু খেল। তারপর বলল দু’টো সিগারেট নিয়ে এসো। এরপরই আমার দিকে বন্দুক তাক করে। ওর পিস্তলে একটাই গুলি ছিল।” জানা গিয়েছে ওই নাবালিকার সঙ্গে লালচাঁদের তিন বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বছরখানেক আগে বিয়ের কথা এগোতেই পণের টাকা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। লালচাঁদই নাকি বিয়ে করতে চায়নি বলে অভিযোগ। যদিও এই অভিযোগ মানছে না কোনও পরিবারই।
উল্টে লালচাঁদ বলছেন, “ওর মা বাবা অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করেছিল। ওরা ফোনে কথাও বলত। এই নিয়েই আমাদের ঝগড়া।” আর নাবালিকার কাকা আলি হোসেন শেখের কথায়, “ছেলেটা ভাল না। বাবা, মা নিয়ে আমাদের বাড়িতেও এসেছিল ছেলেটা। কিন্তু আমরা বিয়ে দিইনি।” এরপরই ঝাড়খণ্ডে চলে যায় নাবালিকা। মঙ্গলবার ফিরে আসে কাটোয়ায়। বুকে তখন তাঁর একরাশ ঘৃণার বারুদ।
নাবালিকার পরিবারের দাবি, লালচাঁদই তাদের মেয়েকে ডেকে পাঠায়। তারপরই প্রেমিকার হাত থেকে গোলাপ পাওয়ার বদলে প্রেমিক খেলেন গুলি। যদিও পুলিশের ভ্যানে বসেও ওই নাবালিকা বলেছে, “যে দোষ করবে সে মার খাবে।”
আরও পড়ুন: BJP Bengal: কলকাতার পুরভোট মিটতেই বিজেপির রাজ্য কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা, বড়সড় রদবদলের অপেক্ষা