Purulia needle case: পুরুলিয়া সূচ-কাণ্ডে ফাঁসির নির্দেশ সনাতন ও মঙ্গলাকে
Sanatan Sentenced to Death: এক শিশুর শরীরে পাওয়া গিয়েছিল একাধিক সূচ। যৌন খেলনা হিসেবে ব্যবহার করা হত শিশুকে। সঙ্গে চলত ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চাও।
পুরুলিয়া: সূচ-কাণ্ডে (Purulia Needle Case) ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া হল সনাতন (Sanatan) ও মঙ্গলাকে (Mangala)। মঙ্গলবার ওই দু’জনকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছে পুরুলিয়া আদালত। শরীরে সূচ ফুটিয়ে এক শিশুকন্যাকে হত্যা করার অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালের সেই ঘটনার পর উত্তর প্রদেশে গা ঢাকা দিয়েছিল শিশুর মা মঙ্গলা ও মঙ্গলার প্রেমিক সনাতন। পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আজ পুরুলিয়া আদালতে সেই মামলার রায় দেওয়া হল।
গতকাল এই মামলার রায়দান স্থগিত রাখা হয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছিল আদালত। বিচারকের বক্তব্য ছিল, মায়ের কোল যখন এক শিশুর কাছে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হিসেবে গণ্য হওয়া উচিৎ, সেখানে এই ঘটনায় মায়ের কাছেই সাড়ে তিন বছরের শিশুকন্যাকে বিপন্ন হতে হয়। মা হিসেবে সন্তানকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় মঙ্গলা। এমনকি শিশুর যৌন নির্যাতনেও তার প্রশ্রয় ছিল। তাই এই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিল পুরুলিয়ার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট।
২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে এই ঘটনার চার্জশিট দাখিল করে পুরুলিয়া থানার পুলিশ। তারপর দীর্ঘ চার বছর ধরে বিচার চলার পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ শুক্রবার পুরুলিয়া জেলা আদালতে রমেশকুমার প্রধানের এজলাসে দোষী প্রমাণিতত হয় দুজনেই। কারও মতে ব্ল্যাক ম্যাজিক করত সনাতন, কারও মতে যৌন বিকৃতির শিকার সে, আবার কেউ কেউ রায় দিয়েছিলেন মাল্টি ডিজঅর্ডার পার্সোনালিটিরও। কিন্তু সনাতনের এমন আচরণের আসল কারণ কী, তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কেউই। তবে সনাতনের সঙ্গে মঙ্গলা তথা শিশুকন্যার মায়ের যোগ থাকার বিষয়টি কার্যত নজিরবিহীন।
সনাতনের বিরুদ্ধে ২০১২ পকসো আইনে ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণ, ৩২৬ ধারায় শিশুর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, ৩০৭ ধারায় খুনের চেষ্টা এবং ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রুজু হয়। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর উত্তর প্রদেশে পালিয়েছিল সনাতন। রেনুকোট পিপড়ি গ্রামে স্থানীয় রাধা কৃষ্ণ মন্দিরে সাধু সেজে ছিল সে৷ সেখান থেকেই ২২ জুলাই ২০১৭ তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জানা যায়, অবসরের পর পুরুলিয়া -বাঁকুড়ার বিভিন্ন গ্রামে ঘিরে কীর্তন গাইত আর ওঝার কাজ করত সনাতন। ওই শিশুটির মা অর্থাৎ মঙ্গলার সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল সনাতনের। বিয়ে টেকেনি ওই মহিলার। স্বামীকে ছেড়ে সাড়ে তিন বছরের সন্তানকে মঙ্গলা এসে ওঠে সনাতনের বাড়িতে। একসঙ্গে সহবাস করতে থাকে তারা। নিজের সন্তানকে পছন্দও করত না মঙ্গলা। সনাতনের সঙ্গে মিলে ওই শিশুকে যৌন খেলনা হিসেবে ব্যবহার করত সে। সঙ্গে চলত ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চাও। জেরায় এই সব তথ্য জানতে পেরেছিল পুলিশ।
ঘটনা নজরে আসে ২০১৭ সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে। পুরুলিয়ায় দেবেন মাহাত সদর হাসপাতালে সর্দি কাশির সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয় ওই শিশুকন্যা। কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তাররা শিশুটিকে পরীক্ষা করে চমকে ওঠেন। সারা শরীরে ক্ষত, বুকের কাছে চলটা ওঠা, হাত পা ফোলা, এমনকী যৌনাঙ্গেও গভীর ক্ষত। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করেন পুলিশ এবং চাইল্ড লাইনের সঙ্গে। সে সময় পুলিশ খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও চাইল্ড লাইন খোঁজ খবর করতে শুরু করে। শিশুর এক্সরে করা হয়। আর সেই এক্সরে প্লেটে দেখা যায়, শিশুটির শরীরের ভেতর বিশাল সাইজের সাত সাতটি সূচ ঢুকে আছে। শিশুটি যৌন হেনস্থার শিকারও। সংবাদ মাধ্যমে সে খবর প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শুরু হয় তদন্ত।
আরও পড়ুন: Transgender: ‘মরদ হয়েছিস, মরদের মত থাক’, হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে নিগৃহীত রূপান্তরকামী যুবক!