কলকাতা : ২৬ শে জানুয়ারির ট্যাবলো ঘিরে শুরু হয়েছে কেন্দ্র রাজ্য রাজনৈতিক চাপানউতোর। ঘটনার সূত্রপাত গতকাল। রাজ্য সরকার সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লির ট্যাবলো শোভাযাত্রায় পশ্চিমবঙ্গের অংশগ্রহণকে কেন্দ্রের তরফে মৌখিকভাবে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৬ জানুয়ারিতে এইবার থিম ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই থিম বেছে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই থিমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মজয়ন্তীর উপলক্ষে এইবার নেতাজিকে সামনে রেখেই ট্যাবলো পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তবে তা খারিজ করে দেওয়ায় বিজেপি বিরোধী শিবিরে শুরু হয়েছে জল্পনা।
কীভাবে এই ট্যাবলো নির্বাচন হয়?
প্রতিবছর ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ট্যাবলো শোভাযাত্রা হয়। লাল কেল্লার সামনে নেতাজি সুভাষ মার্গ ধরে এই শোভাযাত্রা এগোয়। প্রতিবছর এই শোভাযাত্রায় অংশ নেয় বিভিন্ন রাজ্যে। তবে ২৯ টি রাজ্যের মধ্যে যেকোনও ২২ টি রাজ্যই শুধুমাত্র এই সুযোগ পায়। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে এই ট্যাবলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই নির্বাচন প্রক্রিয়া অনেকদিন ধরে চলে। প্রথমে, বিভিন্ন রাজ্য থেকে কেন্দ্রের কাছে ট্যাবলোর প্রস্তাবনা আসে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রক শিল্পকলার বিভিন্ন বিভাগ থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে। শিল্প, সংস্কৃতি, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা বিভাগের বিশেষ ব্যক্তিরা সেই কমিটিতে থাকেন। বিভিন্ন রাজ্য এবং সংস্থার তরফে ট্যাবলোর প্রস্তাবনা পাওয়ার পর এই নিয়ে পরপর বৈঠক হয় বিশেষজ্ঞ কমিটির। সেখানে সেইসব প্রস্তাবনার গুণমান বিবেচনা করা হয়।
প্রথম ধাপে প্রস্তাবনার স্কেচ ও ডিজাইন খুঁটিয়ে দেখা হয়। তারপর সেখানে পরিবর্তন দরকার হলে তার পরামর্শ দেওয়া হয়। একবার কমিটি নকশায় অনুমোদন দিয়ে দিলে অংশগ্রহণকারীদের তাঁদের প্রস্তাবনার 3D মডেল দিতে বলা হয়। তবে এর মানে এই নয় যে তার ট্যাবলো প্রস্তাব চূড়ান্ত পর্যায়ে অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে। এরপর চূড়ান্ত পর্যায়ের নির্বাচনের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি 3D মডেলগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। এই শোভাযাত্রার জন্য একটি রাজ্য থেকে একটি মাত্র ট্যাবলোই পাঠানো যায়। উল্লেখ্য, ট্যাবলোর উপর কোনও লোগো বা লেখা স্থাপন করা যায় না। তবে ট্যাবলোটি যে রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের তার নাম লেখা যায়। নাম লেখার ক্ষেত্রেও কিছু প্যাটার্ন মেনে চলতে হয়। রাজ্য বা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের নাম হিন্দিতে ট্যাবলোর সামনে, ইংরেজিতে ট্যাবলোর পিছনে এবং আঞ্চলিক ভাষায় ট্যাবলোর পাশে লিখতে হয়।
প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো ঘিরে রাজনৈতিক তরজা :
প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো ঘিরে রাজনৈতিক রেষারেষি কোনও নতুন ঘটনা নয়। এই বিষয় নিয়ে আগেও কেন্দ্র রাজ্য বিরোধ দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কোনও রাজ্যসরকার নিজের রাজ্যকে অর্থনৈতিক বা সামাজিকভাবে কীভাবে দেখতে চাইছে তা ট্যাবলোর মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু কেন্দ্রের পছন্দ না হলে সেই বিষয়ের উপর ট্যাবলো বাতিল করার নজির আগেও পাওয়া গিয়েছে। ২০২০ সালে বাংলার তরফে কন্যাশ্রী প্রকল্পকে ট্যাবলোর থিমে তুলে ধরার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাতিল করে দেয় কেন্দ্র। ২০২০ সালে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার, মহারাষ্ট্র এবং কেরলের ট্যাবলো বাতিল করা হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে। এই নিয়ে পাল্টা শাসক বিরোধী দ্বন্দ্বও দেখা গিয়েছে। এই নিয়ে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা এবং এনসিপি নেতারা অভিযোগ করেছিলেন, এই পদক্ষেপ সরকারের প্রতিহিংসার প্রতিফলন। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের মন্ত্রী অভিযোগ এনেছিলেন, বাংলা সিএএ এর মতো জনবিরোধী আইনের বিরোধিতা করায় এই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে দুই ক্ষেত্রেই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছিল,”বিশেষজ্ঞ কমিটি দুটি বৈঠকে পর্যালোচনা করার পর পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। এবং এই একই পদ্ধতিতে ২০১৯ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো শোভাযাত্রায় পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো নির্বাচিত হয়েছিল।”
আরও পড়ুন : TMC Clash: জুয়ার ঠেকে তুলকালাম, গোষ্ঠীকোন্দলে মৃত্যু তৃণমূল নেতার, গ্রেফতার ৫