কাবুল: রক্ত ঝরা যেন কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না আফগানিস্তানে। ফের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুলিওয়ালার দেশ। আজ দুপুরে আফগানিস্তানের কুন্দুজ় শহরে শিয়া মসজ়িদে বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখমের সঙ্গে আরও বেশি।
ডক্টর্স ইউদআউট বর্ডার্স হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে ৯০ জনেরও বেশি মানুষ জখম হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ১৫ জনের দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে এই সংখ্যা দ্রুত আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। হাসপাতালে এখনও জখম ব্যক্তিদের নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের কর্মী।
তালিবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বিস্ফোরণের পর জানিয়েছেনস কুন্দুজ় শহরের শিয়া মসজিদে এক বিস্ফোরণে অনেক মানুষ মারা গিয়েছেন। তবে হতাহতের সঠিক সংখ্যা তিনি এখনও পর্যন্ত জানাতে পারেননি।
এখনও পর্যন্ত কোনও সংগঠনই এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। কিন্তু সম্প্রতি যে নাশকতাগুলি হয়েছে, সেগুলির দায় স্বীকার করতে দেখা গিয়েছে ইসলামিক স্টেট – খোরাসান গোষ্ঠীকে। নৃশংসতার জন্য কুখ্যাত এই জঙ্গিগোষ্ঠী তালিবানদের কট্টর বিরোধী।
কুন্দুজ় প্রদেশের রাজধানীর বাসিন্দারা সংবাদসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, শুক্রবারের নামাজের সময় একটি শিয়া মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটে। এই দিনটির নমাজ মুসলিমদের জন্য সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
কুন্দুজ় প্রদেশের রাজধানীতেই বাড়ি স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জালমাই আলোকজ়াইয়ের। বিস্ফোরণের পরই তিনি ছুটে গিয়েছে হাসপাতালে। যদি জখমদের কারও রক্তের দরকার পড়ে… তাই আর দেরি করেননি ওই আফগান নাগরিক। সবাইকে হয়ত চেনেনও না তিনি। কিন্তু সহনাগরিক তো! তাই ঘরে বসে থাকতে পারেননি জালমাই। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে তিনি ঘটনার ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেন। বলেন, “আমি ৪০ টিরও বেশি মৃতদেহ দেখেছি। অ্যাম্বুলেন্সগুলি হাসপাতাল থেকে আবার বিস্ফোরণস্থলে ফিরে যাচ্ছিল আরও দেহ নিয়ে আসার জন্য।”
ডক্টরস উইদআউট বর্ডার্সের এক কর্মী জানিয়েছেন, “শ’য়ে শ’য়ে মানুষ হাসপাতালের গেটের বাইরে জড়ো হয়েছেন। তাঁদের অনেকেই হাসপাতালে ভরতি। কাছের মানুষটা কেমন আছে, জানতে ভিড় করেছেন হাসপাতালের বাইরে। কান্নাকাটি আওয়াজ চারিদিকে। স্বজনহারাদের আর্তনাদ। আর সশস্ত্র তালিবান যোদ্ধারা গেটের বাইরে ভিড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। নতুন করে বিস্ফোরণের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।”
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায় মুসলিম। এদের মধ্যে অনেকেই হাজারা নামে একটি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এই জাতিগোষ্ঠীটি বিগত কয়েক দশক ধরে আফগানিস্তানে ব্যাপকভাবে নির্যাতিত হয়েছে।
বিস্ফোরণের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু ছবি ও ভিডিয়ো শেয়ার হয়েছে। ভিডিয়োগুলির সত্যতা প্রাথমিকভাবে যাচাই করা হয়নি। তাতে দেখা যাচ্ছে, মসজিদের মেঝেতে বেশ কয়েকটি রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। প্রায়শই আফগানিস্তানে সুন্নি চরমপন্থীদের দ্বারা আক্রান্ত হতে হচ্ছে শিয়া মুসলিমদের।
আরও পড়ুন : প্রস্রাব করার সময় নিজের পিস্তলেই গুলিবিদ্ধ যুবক