নয়া দিল্লি: বাজেটে সব মন্ত্রকের থেকে বেশি বরাদ্দ পেল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। প্রতিরক্ষায় সক্ষমতা এবং আত্মনির্ভরশীলতা বাড়াতে, অভূতপূর্বভাবে, ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৪-এ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জন্য ৬.২২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল। যা এবারের বাজেটের ১২.৯ শতাংশ। গত অর্থবর্ষের তুলনায় এই খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ল ৪.৭৯ শতাংশ! কী কী খাতে এই অর্থ খরচ করা হবে?
সামরিক কেনাকাটা
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে,এই বিপুল বাজেট বরাদ্দের মধ্যে ১.৭২ লক্ষ কোটি টাকাই খরচ করা হবে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম অধিগ্রহণের জন্য। এর মধ্যে থাকবে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, প্রাণঘাতী অস্ত্র, যুদ্ধবিমান, জাহাজ, সাবমেরিন, ড্রোন, এবং বিশেষ বিশেষ সামরিক যানবাহন। এর ফলে, সশস্ত্র বাহিনীতে য়ে সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অপারেশনাল প্রস্তুতি
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধের জন্য যাতে প্রস্তুত থাকে, তা নিশ্চিত করতে, রক্ষণাবেক্ষণ এবং অপারেশনাল প্রস্তুতির জন্য ৯২,০৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের বাজেট থেকে ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হল।
আত্মনির্ভরতা
বাহিনীর আধুনিকীকরণের বাজেটের ৭৫ শতাংশ বা ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকা ই বরাদ্দ করা হয়েছে দেশিয় সামরিক সংস্থাগুলির থেকে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য। এই উদ্যোগ ভারতের ‘আত্মনির্ভরতা’র লক্ষ্যকেও আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এর ফলে, ব্যাপক হারে বাড়বে জিডিপি সংগ্রহ, কর্মসংস্থানও তৈরি হবে এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিও পুষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি
প্রাক্তন সৈনিকদের আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দিয়ে, বাজেটে, এক্স-সার্ভিসম্যান কন্ট্রিবিউটরি হেলথ স্কিম (ECHS)-এর জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে ৬,৯৬৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এই ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সীমান্ত পরিকাঠামো
সীমান্ত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন বা বিআরও-কে এর জন্য ৬,৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ, আর তার আগের বছরের তুলনায় ১৬০ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে মূল প্রকল্পগুলি হল – লাদাখে নাইয়োমা এয়ারফিল্ডের উন্নয়ন, হিমাচল প্রদেশ এবং অরুণাচল প্রদেশে সূড়ঙ্গ তৈরি ইত্যাদি।
উপকূলীয় নিরাপত্তা
ভারতীয় কোস্ট গার্ডের জন্য ৭,৬৫১.৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গত অর্থবর্ষের তুলনায় ৬.৩১ শতাংশ বেশি। সমুদ্রে ক্রমে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। সেই বর্ধিত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার জন্য উপকূলরক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে চাইছে সরকার। শুধুমাত্র দ্রুতগামী টহল যান, ইলেকট্রনিক নজরদারি ব্যবস্থার উন্নতি এবং অস্ত্র সংগ্রহের জন্যই ৩,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
ডিআরডিও
ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা ডিআরডিও-র জন্য বাজেটে ২৩,৮৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩,২০৮ কোটি টাকা ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বরাদ্দ বৃদ্ধির ফলে, মৌলিক গবেষণায় জোর দিতে এবং নতুন প্রযুক্তির বিকাশের জন্য বেসরকারী সংস্থাগুলিকে সহযোগিতা করতে সক্ষম হবে ডিআরডিও, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
উদ্ভাবনে উৎসাহ
ইনোভেশন ফর ডিফেন্স এক্সেলেন্স বা ইডেক্সের বাজেট বরাদ্দ ১১৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫১৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর জন্য দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশে, স্টার্টআপ, এমএসএমই এবং বিভিন্ন উদ্ভাবক সংস্থাগুলিকে জড়িত করাই এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য।
বাড়ল পেনশন বরাদ্দও
প্রতিরক্ষা খাতের পেনশনের বাজেটও ২.১৭ শতাংশ বাড়িয়ে ১.৪১ লক্ষ কোটি টাকা করা হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৩২ লক্ষ পেনশনভোগী উপকৃত হবেন।
রাজনাথ সিং-এর প্রতিক্রিয়া
প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের প্রশংসা করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি একে সমৃদ্ধ এবং আত্মনির্ভর ভারতের দিকে এক বড় পদক্ষেপ বলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে।