নয়া দিল্লি: বিজেপির তাবড় নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর (Union Minister Anurag Thakur)। আলাদা করে তাঁর আর পরিচয় দেওয়ার দরকার পড়ে না। রাজ্য ও কেন্দ্রের জন্য উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে তিনি তাঁর নিজের পরিচয় বানিয়েছেন। ২০২২ সালের উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে (Uttar Pradesh Assembly Election 2022) পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপির যে ঐতিহাসিক জয় হয়েছে, তারপর অনুরাগ ঠাকুরের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করাটা আরও জরুরি হয়ে উঠেছে। এর আগেও বহুবার নিজের রাজনৈতিক কৌশলের পরিচয় দিয়েছেন তিনি। তবে এবারের উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের আগে তিনি যেভাবে প্রচার চালিয়েছেন, তা ভীষণভাবে প্রশংসনীয়। চাঁচাছোলা আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীদের, যা বিজেপির নিচু তলার কর্মীদের মধ্যে আলাদা মাত্রার উদ্যম নিয়ে এসেছে। আর তার সরাসরি প্রভাব দেখা গিয়েছে উত্তর প্রদেশের ভোটের ফলাফলে। ফের একবার উত্তর প্রদেশের ক্ষমতার তখতে এসেছে বিজেপি। উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে বিজেপি যে দারুণ ফল করেছে, তারপর দলে অনুরাগ ঠাকুরের গুরুত্ব আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
উত্তর প্রদেশের নির্বাচনী ফলাফলে বিজেপির ব্যাপক সাফল্যের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর টুইট করে উত্তর প্রদেশের সমস্ত ভোটার তথা আপামর রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, উত্তর প্রদেশে বুলডোজ়ার মাফিয়া ও অপরাধীদের নির্মূল করার প্রতীক হিসেবে উঠে এসেছে। এই জয়ের পর আগামী দিনে উত্তর প্রদেশে বিজেপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিকে আরও দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি বিজেপির এই ঐতিহাসিক জয়ের জন্য দলের সমস্ত কর্মীদের কঠোর পরিশ্রমের প্রশংসাও করেছেন তিনি।
উত্তর প্রদেশের ভোটে নিজের নেতৃত্বশৈলীর ফের একবার পরিচয় দিয়েছেন অনুরাগ ঠাকুর। ভোট পরিচালনায় তাঁর কৌশলের কথা মাথায় রেখে, ২০২২ সালের উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তারকা প্রচারকের তালিকায় তাঁকে রেখেছিল বিজেপি। সেই গুরু দায়িত্ব অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে পালন করেছেন তিনি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মতোই সারা উত্তর প্রদেশ জুড়ে সফর করেন, প্রচার চালান। বিজেপি নেতৃত্বের বার্তা দলের কর্মীদের কাছে এবং আম জনতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও খামতি রাখেননি তিনি। সেই সঙ্গে একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীদের উদ্দেশে, বিশেষ করে সমাজবাদী পার্টির বিরুদ্ধে। এমন এক বাতাবরণ তৈরি করে দিয়েছিলেন, যা বিজেপির দিকে পাল্লা ভারী করে দিয়েছিল। এর ফলে ভোটাররাও ফের একবার বিজেপিকেই ফের একবার রাজ্যের ক্ষমতায় নিয়ে আসে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের রাজনৈতিক সফর নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দেখা যাবে, রাজনীতি তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রেই পাওয়া। তাঁর বাবা প্রেম কুমার ধুমাল হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৮ সালে রাজনীতির দুনিয়ায় পা রাখেন অনুরাগ ঠাকুর। হামিরপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন এবং সংসদীয় রাজনীতিতে আসেন। এরপর ২০০৯ সাল এবং ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটেও হামিরপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হন তিনি। ২০১৯ সালের ভোটেও এই হামিরপুর থেকেই জয়ী হন তিনি। বর্তমানে অনুরাগ ঠাকুর কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্বও রয়েছে তাঁর কাঁধে।
সংসদীয় রাজনীতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা ছাড়াও বহু কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি সংসদ রত্ন পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। এছাড়া হিমাচল প্রদেশ স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনেরও সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি হন তিনি। মাত্র ২৫ বছর বয়সে ওই পদে বসেছিলেন তিনি। খুব কম বয়সেই একাধিক দায়িত্ব সামলে এসেছেন তিনি। ২০০১ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে ভারতীয় জুনিয়র ক্রিকেট দলের সর্বকনিষ্ঠ জাতীয় নির্বাচক হিসেবে উঠে আসেন। এর পাশাপাশি হিমাচল প্রদেল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, হিমাচল প্রদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, হকি হিমাচল প্রদেশের সাধারণ সম্পাদক, ভারতের অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের এগজিকিউটিভ মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০১৬ সালের ২২ মে বিসিসিআই সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। অনুরাগ ঠাকুর হলেন বিসিসিআইয়ের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি। এর আগে ১৯৬৩ সালে ফতেহ সিং গায়কোয়াড় ৩৩ বছর বয়সে বোর্ড সভাপতি হয়েছিলেন। ভারতীয় সেনার একজন লেফটেন্যান্টও তিনি।