দিনহাটায় ৬ হেভিওয়েট নেতাকে শোকজ করল তৃণমূল

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এটি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ঘটনায় যদিও নীরব গেরুয়া শিবির। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে মন্তব্য করতে নারাজ বিজেপি।

দিনহাটায় ৬ হেভিওয়েট নেতাকে শোকজ করল তৃণমূল
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Mar 17, 2021 | 6:58 PM

কোচবিহার: বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal Assembly Election 2021) আগে ফের সামনে এল তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল। দিনহাটায় দলের ৬ হেভিওয়েট নেতাকে শো-কজ করল তৃণমূল কংগ্রেস।

বুধবার, তৃণমূল (TMC) কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় ফেসবুকে (Facebook) স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, ”রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের নির্দেশে দিনহাটা বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য ও পদাধিকারী মীর ইকবাল কবীর, মিলন সেন, বাবলা নন্দী, অজয় রায়, শাবির সাহা চৌধুরী, তরনীকান্ত বর্মন মহাশয়দের দলের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ না করার জন্য আজ ১৭/০৩/২০২১ তারিখে শোকজ করা হল। তিন দিনের মধ্যে সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়া গেলে দলের নির্দেশেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

দলের জেলা সভাপতির স্যোসাল মিডিয়ায় ওই শোকজের স্ট্যাটাস দেওয়ার পর কোচবিহারে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে কার্যত শোরগোল পড়ে যায়। শোকজ করা দিনহাটা ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা নাজিরহাট ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নেতা তরণী কান্ত বর্মন বলেন, ‘আমাদের না জানিয়েই শো-কজ করা হয়েছে। বলা হয়েছে,আমরা কাজ করি না। কিন্তু, নেতৃত্ব যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেন তাহলে কিছু বলার নেই।’

এ প্রসঙ্গে, অন্যদিকে দিনহাটা ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মিলন সেন বলেন, “ আমিও দেখেছি ফেসবুকের ওই শোকজ চিঠি। কেউ কিছু না বললেও আমি ব্যক্তিগত ভাবে আজই সাংবাদিক সম্মেলন করে এর উত্তর দিয়ে দেব। কেন শো-কজ করা হল, তার কারণ জানাতে হবে। আমরা উদয়ন গুহর বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু, দল ছেড়ে যাইনি। জেলা সভাপতি আজ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেননি।”

তবে এই দুই নেতাই জানিয়েছেন, দিনহাটায় দলের প্রার্থী বা দলের কোন নেতা প্রচারের জন্য তাঁদের বলেননি বা কোন কর্মসূচিতেও ডাকেননি। দিনহাটার অন্য দুই যুবনেতা শাবির সাহা চৌধুরী ও অজয় রায় জানিয়েছেন, শো-কজ নিয়ে লিখিত চিঠি তাঁদের দেওয়া হয়নি। হোয়াটস্যাপ ও ফেসবুকের মাধ্যমেই তাঁরা শো-কজের নোটিস পেয়েছন। তাঁদের দাবি, ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরাই লড়াই করে উদয়ন গুহকে জিতিয়েছিলেন। তখনও তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছেন। এখনও করবেন। কিন্তু শো-কজের যথাযথ কারণ জেলা সভাপতিকে জানাতে হবে।

উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগে দলবদল করবেন কি না তা কেউই স্পষ্ট করেননি। দলের কাজ ঠিকভাবে তাঁরা করছেন না এমনটাই অভিযোগ উঠেছে জোড়াফুলের এই ৬ নেতার বিরুদ্ধে। যদিও তাঁদের সকলেরই দাবি, তাঁরা কাজ করছেন।

এই ঘটনায় বিদায়ী বিধায়ক উদয়ন গুহর (Udayan Guha) সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিমও মুখে একরকম কুলুপ এঁটেছেন। যদিও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এটি তৃণমূলের (TMC) গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছাড়া আর কিছুই নয়। কোচবিহারের জেলা রাজনীতিতে পার্থপ্রতিম এবং উদয়ন একটি গোষ্ঠী বলেই পরিচিত। তাঁদের পালটা গোষ্ঠী হিসেবে জেলার দুই মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, বিনয়কৃষ্ণ বর্মন এবং একাধিক বিধায়কের নাম উঠে আসে। যদিও কেউ ওই বিরোধ মানতে চান না।

এখন দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রেও উদয়ন–বিরোধী গোষ্ঠী সক্রিয়। এই বিরোধী গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যেই রয়েছেন শাবির, অজয়, মিলন-রা। এঁরা সকলেই আবার রবীন্দ্রনাথের অনুগামী বলেই পরিচিত। কিছুদিন আগে উদয়নের একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে দলবদলের জল্পনা তুঙ্গে উঠেছিল। ফেসবুকে উদয়ন লিখেছিলেন, ‘‘সব সহ্যের সীমার বাইরে/ ভাবার সময় হয়েছে।’’ যদিও এরপর বর্ষীয়ান নেতা স্পষ্টই জানিয়ে দেন তিনি দল বদল করছেন না।

এই পরিস্থিতিতে বুধবারের এই শো-কজ নোটিস কার্যত দলের অন্দরের ক্ষোভকেই সামনে আনছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই ঘটনায় যদিও নীরব গেরুয়া শিবির। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে মন্তব্য করতে নারাজ বিজেপি।

আরও পড়ুন: বিজেপি করলে দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে, হুমকিই সত্যিই হল বুধবার