তালিকায় একাধিক সংখ্যালঘু মুখ, বাংলার তিন জেলায় বাড়তি নজর বিজেপির

বিজেপির প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, নাম রয়েছে ৯ সংখ্যালঘু প্রার্থীর। এবং এমন তিন জেলাতে তাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে যেখানে দাঁত ফোটাতে মরিয়া বিজেপি। 

তালিকায় একাধিক সংখ্যালঘু মুখ, বাংলার তিন জেলায় বাড়তি নজর বিজেপির
বাঁ-দিক থেকে: মেহেবুব আলম, গোলাম মোদারশা, মাফুজা খাতুন, মাসুহারা খাতুন, গুলাম সরওয়ার, মহম্মদ শাহিন আখতার। অলংকরণ- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Mar 18, 2021 | 9:19 PM

কলকাতা: এখনও ১০ টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা বাকি বিজেপির (BJP)। তবে বৃহস্পতিবার রাজ্যের ২৮৪ টি আসনের সকল প্রার্থীদের নাম প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে গেরুয়া শিবির। এর আগে তিন দফায় একাধিক নাম প্রকাশ করা হয়েছিল। এ বার একসঙ্গে ১৫৮ টি নাম প্রকাশ পেল। রাজনৈতিক মহলে হিন্দুত্ববাদী হিসেবে পরিচিত এই দলের প্রার্থী তালিকায় একাধিক সংখ্যালঘু প্রার্থীদের (Muslim Candidate) অন্তর্ভুক্তি বিশেষভাবে সাড়া ফেলেছে জনমানসে। এ দিন বিজেপির প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, নাম রয়েছে ৯ সংখ্যালঘু প্রার্থীর। এবং এমন তিন জেলাতে তাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে যেখানে দাঁত ফোটাতে মরিয়া বিজেপি।

২০১১ সালে জনগণনা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটের সংখ্যা ২৭ শতাংশের কিছু বেশি। জম্মু কাশ্মীর এবং অসমের পরই মুসলিম জনঘনত্বের দিক দিয়ে স্থান এই রাজ্যের। পাটিগণিতের হিসেব বলে, এই বিরাট সংখ্যক মানুষের সমর্থন যে দল আদায় করে নিতে পারবে, ক্ষমতা দখলের দৌড়েও তারাই এগিয়ে থাকবে। ২০০৮ সাল থেকে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের ভোট যেই ধীরে ধীরে তৃণমূলের দিকে আসতে শুরু করে। ঠিক তার তিন বছরের মাথায় ক্ষমতা দখলেও সক্ষম হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

বৃহস্পতিবার বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশ পেতে দেখা গেল, সেখানেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সংখ্যালঘু প্রার্থীদের। পঞ্চম থেকে অষ্টম দফায় প্রকাশ পাওয়া তালিকায় মোট ৯ জন সংখ্যালঘু প্রার্থী রয়েছেন। যাদের মধ্যে একজন রাজ্য বিজেপির চেনা মুখ মাফুজা খাতুন। তিনি লড়ছেন মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থেকে। এ বাদেও গোলপোখর বিধানসভায় লড়ছেন গুলাম সরওয়ার। হরিশচন্দ্রপুরে মহম্মদ মতিউর রহমান, রঘুনাথগঞ্জে গোলাম মোদারশা, ভগবানগোলায় মেহেবুব আলম, রানিনগরে মাসুহারা খাতুন, সুজাপুরে এসকে জিয়াউদ্দিন, ও ডোমকলে রুবিয়া খাতুনকে প্রার্থী করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, যে বিধানসভা আসনগুলিতে মুসলিম জনসংখ্যার আধিক্য বেশি, সেখানেই প্রার্থী করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের। মূলত মালদা, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুরেই প্রার্থী করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের।

আরও পড়ুন: ‘নিরীহ’ শোভনদেবকে ‘বিষপান’ করতে ভবানীপুরে পাঠিয়েছেন মমতা: রুদ্রনীল

অন্যদিকে, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকার দিকে নজর ঘোরালে দেখা যাবে, এ বার সেই তালিকায় মোট ৪৭ জন সংখ্যালঘুকে প্রার্থী করা হয়েছে। তৃণমূলে এই হার যে বেশি থাকবে তা স্বাভাবিকভাবেই বোধগম্য। তবে বিজেপির প্রার্থী তালিকাতেও এই নামগুলি নিয়ে চর্চা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। কেননা, যে রাজ্যে ২৭ শতাংশ মুসলিম জনগনের বসবাস, সেখানে তাদের দূরে রেখে ক্ষমতা দখল কখনই সম্ভব নয়। এবং এতজন সংখ্যালঘুকে প্রার্থী করে পরোক্ষে একপ্রকার বার্তা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব দিতে চাইছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

কেননা, তৃণমূল যে সময় নিজের সুরক্ষিত ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে মরিয়া, সেই সময় বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে নেমেছেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। রাজ্যের মুসলিম সমাজে তাঁর জনপ্রিয়তা সংশয়ের উর্ধ্বে। তবে এই প্রথমবার তিনি নির্বাচনী লড়াইয়ে নামছেন। ফলে তাঁর প্রার্থীরা যে একটা বড় অংশের ভোট কাটবে সেটা আগে থেকেই পরিষ্কার। এ বার এমন বেশ কিছু আসন থাকছে যেখানে সংখ্যালঘু প্রার্থীদেরই ত্রিমুখী লড়াই হবে। ফলে এই ক্ষেত্রেও বিজেপি পিছিয়ে না থেকে জল মেপে নিতে চাইছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।

আরও পড়ুন: ‘আমি কোনওভাবেই বিজেপির প্রার্থী হচ্ছি না’, নাম ঘোষণার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সোমেন-জায়া