গ্রাসরুটে পলিটিশিয়ান কম, সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি: পঙ্কজ ত্রিপাঠী
প্যান্ডেমিক আমাকে শেখালো, “ভাই আস্তে, একটু ধীরে চলো, খুব দৌড়ে নিয়েছ। জীবন ভীষণ শর্ট টাইম, এটাকে উদযাপন করো। একটু ধীরে চলো।”
ভবানীপুরের মেয়েকে বিয়ে করেছেন। বাংলা ভাষাটা শিখে ফেলেছেন নিশ্চয়ই!
আমি বুঝতে পারি। বোল নে মেঁ থোড়ি সমস্যা হোতি হ্যাঁয়। মানে ‘টুটা ফুটা’।
ষোলো বছরেও হল না!
(হাসি) না না, মৃদুলাজি (স্ত্রী) শিখিয়েছেন। আমার কাছে বাংলা ভাষা ফ্যামিলিয়ার। আস্তে-আস্তে সড়গড় হয়ে যাবে। আপনি বাংলাতেই প্রশ্ন করুন। তাহলে শিখতে আরও সুবিধে হবে।
আগে বলুন কেমন আছেন?
বাড়ির সবাইকে নিয়ে কোভিড সময়ে যতটা ভাল থাকা যায়।
আর বাবা-মা?
নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। সকালে উঠেই প্রথম ফোন ওঁদের কাছে যায়।
আর… কী বই পড়ছেন আজকাল? আপনি তো আবার বইপোকা…
ইয়েস, ইউ মিন বুকওয়ার্ম। দিল্লি থেকে এক ঝাঁক তরুণ লেখকের বইপত্তর আনিয়েছি। দিব্য প্রকাশ দুবে, নিলোৎপল মৃণাল, অনুরাগ পাঠকদের হিন্দি ভাষার উপর সাংঘাতিক দখল।
কোটি-কোটি মানুষকে এতগুলো মাস ঘরবন্দি রেখেছিল এবং এখনও হয়তো অনেকের ক্ষেত্রে তাই-ই করে রেখেছে কোভিড-১৯। একা কিংবা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পর এমন কী শিখলেন, যা আগে কখনও শেখা হয়নি?
শিখেছি অনেক কিছুই, তবে যা বুঝলাম তা হল, জীবনে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ‘জীবন’! আর কিচ্ছু না। আমরা কেরিয়ার, প্রতিপত্তি, অ্যাম্বিশনের পিছনে দৌড়তে-দৌড়তে সেটা ভুলে যাচ্ছিলাম। আমি নিজেই গত দু’বছর কোনও ছুটি নিইনি। শুধু কাজ করে গিয়েছি। প্যান্ডেমিক আমাকে শেখালো, “ভাই আস্তে, একটু ধীরে চলো, খুব দৌড়ে নিয়েছ। জীবন ভীষণ শর্ট টাইম, এটাকে উদযাপন করো। একটু ধীরে চলো।”
১৬ অগস্ট ২০০৪ ঘর ছেড়ে মুম্বই এসেছিলেন। আর আজ ৪ জানুয়ারি ২০২০। প্রায় ষোলো বছরের জার্নি। পিছনে ফিরে তাকালে অবাক হন না?
শ্রীরামের মতো বনবাসে বেড়িয়ে পড়েছিলাম। কত কিছু এতগুলো বছরে যে পাল্টে গিয়েছে, কী বলব! তখন স্টুডিওগুলোয় কাজ খুঁজছিলাম, এখন কাজ আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। সে সময়ে দরজায়-দরজায় জিজ্ঞেস করতাম, একটা ফিল্মে চান্স হবে? আজকাল ‘ফিল্ম’ জিজ্ঞেস করছে পঙ্কজ ত্রিপাঠী হবে? এতগুলো বছর আমার কাছে কঠিন ছিল। কিন্তু অসহনীয় ছিল না। ১৬ বছর ফলপ্রসূ অধ্যায় বলতে পারেন। অনেক কিছু শিখিয়েছে। সিনসিয়রিটি, প্যাশন, হার্ডওয়ার্ক, অনেস্টি সব শিখেছি এই সুদীর্ঘ যাত্রায়।
কলেজে পড়াকালীন ছাত্র রাজনীতি করেছেন। আপনার কথাবার্তায় তার প্রভাব এখনও রয়েছে। কিন্তু এই অবস্থায় জাতপাত, ধর্মের নামে হ্ত্যালীলা… এই রাজনীতি দেখে এবিভিপি (অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ) করা সেই বছর সতেরোর পঙ্কজের কী মনে হয়?
প্রশ্ন বুঝতে পারছিলেন না পঙ্কজ ত্রিপাঠী। বললেন, “মৃদুলাজিকে ফোনটা দিচ্ছি, ওঁকে একটু বলবেন? ও আমাকে বুঝিয়ে দেবে। তারপর ফোনে গলা শোনা গেল মৃদুলাজির। হাসতে-হাসতে বললেন, “আমি বুঝতে পেরেছি, ও আসলে এত তাড়াতাড়ি বাংলাটা…” মৃদুলা হিন্দি ভাষায় পঙ্কজকে প্রশ্ন বোঝালেন।
সময় মানুষকে বদলে দেয়। আমাদের সময়ে রাজনীতি নিয়ে ধ্যানধারণা একেবারে অন্যরকম ছিল। সে সময় সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না, মাঠেঘাটে নেমে আন্দোলন ছিল। রাজনীতি করার সময় সাতদিন জেলও খেটেছি। কিন্তু এখন মাঠে-ময়দানের রাজনীতির সঙ্গে সোশ্য়াল মিডিয়ার রাজনীতি সমান্তরাল নয়। এটা দেখে খারাপ লাগে যে, আমার দেশে গ্রাসরুট পলিটিশিয়ান কম, সোশ্যাল মিডিয়া পলিটিশিয়ান বেশি। উল্টোটা হওয়াই কাম্য ছিল। দেশের নেতারা, জনতা কী চাইছে, তা না বুঝে, সোশ্যাল মিডিয়া বুঝে ফেলতে চাইছে! আসলে, টাইম এবং স্পেস এই বিষয়টি বড় অদ্ভূত! বদল তো টাইম-স্পেসের উপর নির্ভরশীল। চেঞ্জ ইজ ইনএভিটেবল।
আরও পড়ুন টিকিট কেনার টাকা নেই, বিশ্বনাথের ভাই বেচলেন জলের বোতল
সবাই বলে পঙ্কজ ত্রিপাঠী ‘ন্যাচরাল অ্যাক্টিং’ করেন। ন্যাচরাল অ্যাক্টিং ঠিক কী?
ন্যাচরাল অ্যাক্টিং বলে কিস্যু নেই। প্র্যাকটিস…প্র্যাকটিস…প্র্যাকটিস। আর নিজের ক্রাফ্ট তৈরি করি। ন্যাচরাল অ্যাক্টিং যা মানুষ না বুঝে বলে, সেটাও অ্যাক্টিং। এবং কঠিন অ্যাক্টিং। সহজ হওয়ার প্র্যাক্টিস আমাকে করতে হয়। নিয়ম করে সেটা আমি করি।
আপনার চরিত্রগুলো আমাদের কাছে খুব চেনা। কোথাও না-কোথাও আমরা তাঁদের দেখেছি। কখনও না-কখনও কথা বলেছি তাঁদের সঙ্গে।
আপনিও কি চরিত্রগুলোকে দেখেছেন, চিনেছেন এবং শিখেছেন তাদের থেকে?
(হাসি) আমি ঘুরতে ভালবাসি। আর যেখানেই যাই না কেন, সেখান থেকে কিছু মানুষকে নিজের মধ্যে নিয়ে ফিরি। আদবকায়দা, কথাবার্তার ধরণ, কিংবা কোনও নির্দিষ্ট ভঙ্গিমা। আমার কাছে অভিনয়ের রেফারেন্স কোনও ছবির অভিনেতা নয়। আমার রেফারেন্স মানুষ। আমি তাঁদের দেখে অভিনয় শিখি। সিনেমা দেখি না। রোজ নতুন-নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা করি। আর জীবনকে আরও কাছ থেকে দেখি। এবং সে কারণেই বোধহয় আপনার অভিনীত চরিত্রগুলোকে দেখলে মনে হয়, “আরে এ তো আমার পাশের বাড়ির পঙ্কজদা!”
এবারের পুজোয় ভবানীপুরের শ্বশুড়বাড়ি আসা হল না তো…
কী আর করব। গত সাত-আট বছর ধরে ওখানেই থাকি।। মা দুর্গা মানে আমার কাছে কলকাতা। সব ঠিকঠাক হলে আসছে বছর আবার হবে!