হয়তো নিজে থেকে পুরনো অভ্যাস ফেরাতে না চাইলে কেউ নতুন করে আর চিঠি লিখবেন না: মীর আফসার আলি

২৬ বছরেরও বেশি রেডিয়ো কেরিয়ার তাঁর। আবার তিনি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সরও। তবু চিঠির রোম্যান্স আজও নস্ট্যালজিক করে তোলে মীর আফসার আলিকে।

হয়তো নিজে থেকে পুরনো অভ্যাস ফেরাতে না চাইলে কেউ নতুন করে আর চিঠি লিখবেন না: মীর আফসার আলি
খামের রঙ যাই হোক না কেন, প্রেমের একটা আলাদা গন্ধ আছে।
Follow Us:
| Updated on: Jan 20, 2021 | 7:08 PM

ইনস্টাগ্রামে আর ফিরবেন না ব্রিটিশ ব্রডকাস্টার স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো (৯৪)। সোশ্যাল মিডিয়ার পরিবেশের সঙ্গে একেবারেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি তিনি। তাই-ই ইনস্টাগ্রাম থেকে বিরতি নিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে একথাও জানিয়েছেন, আর কোনওদিন ফিরবেন কি না, সে ব্যাপারেও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ারের সংখ্যার নিরিখে স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো ভেঙেছিলেন অজস্র হলিউড তারকার রেকর্ড। তবু যোগাযোগ করার মাধ্যম হিসেবে ইনস্টার ডিএম (ডু মেসেজ বা ইনবক্স বা চ্যাটবক্স) মোটেও পছন্দ নয় তাঁর। বরং আজও ‘ওল্ড স্কুল’-এর পথিক বিশ্বাসী চিঠিতে। নিজেই জানিয়েছেন, দিনে ৭০টি চিঠি পান তিনি। ইনস্টাগ্রামের ইনবক্সে আসা মেসেজের বদলে ডাকবাক্সে থাকা প্রেরকের নাম-ঠিকানা লেখা খাম তাঁর অনেক বেশি পছন্দের।

View this post on Instagram

A post shared by BBC News (@bbcnews)

চিঠির রোম্যান্স মিস করেন ২৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে রেডিয়ো জকি হিসেবে কাজ করে-চলা ব্রডকাস্টার মীর আফসার আলি। প্রাক-সোশ্যাল মিডিয়া যুগের এই তারকা-আরজে তথা স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান বর্তমানে অন্যতম সোশ্যাল মিডিয়া ‘ইনফ্লুয়েন্সর’ হলেও তাঁর জীবনে চিঠির গুরুত্বের কথা ভুলবেন না কোনওদিন। TV9 বাংলা ডিজিটালের সঙ্গে শেয়ার করলেন তাঁর চিঠি-প্রেম।

প্রাক-সোশ্যাল মিডিয়া পৃথিবীতে আরজে-রা যখন রেডিয়ো শো করতেন, তখন তাঁদের সঙ্গে শ্রোতাদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি। চিঠিকে কেন্দ্র করে রোম্যান্স—বিষয়টা আপনার কাছে কতটা নস্ট্যালজিক?

মীর- আমার মনে হয় প্রাক-সোশ্যাল মিডিয়া যুগে যোগাযোগের সবথেকে ঘনিষ্ঠ মাধ্যম ছিল চিঠি। আমি নিজে রেডিয়োর একজন শ্রোতা হিসেবে বহু অনুষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছে। বহু কনটেস্টে যোগ দিয়েছি। আর চিঠি পাঠানোর পর ওই শো গুলো শুনতাম। কারণ ওই অনুষ্ঠানের যিনি ঘোষক হতেন, তিনি অনেকের নাম পড়তেন। অপেক্ষায় অসংখ্য দিন আর রাত কেটেছে, যেখানে আমি ভেবেছি আমার চিঠির উল্লেখ হবে বা আমার নাম পড়া হবে।

অনেক পরে যখন নিজে রেডিয়ো জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, তখন ওই উৎকণ্ঠাটা বুঝতে পারতাম। আমি একজন শ্রোতার চিঠি পড়ব, সেটা ওই শ্রোতার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং আপন করার মতো একটা বিষয়, একজন প্রেজেন্টার হিসেবে এটা খুবই অনুভব করতাম।

তবে আমার কোনও চিঠিই কোনওদিন কোনও অনুষ্ঠানে পড়া হয়নি। আমার নামে চিঠি আসতও বেশ কম। শ্রোতারা আমায় খুব বেশি চিঠি লিখতেন না তখন। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গেই বলছি যখন চিঠি আদান-প্রদান হতো, তখন অতটাও জনপ্রিয় হইনি। শ্রোতাদের চিঠি এলে রেডিয়ো মারফৎ জবাব দিতাম। অনেককে চিঠি পাঠিয়েও উত্তর দিয়েছি। সেকথা রেডিয়োতে শেয়ারও করেছি। আর চিঠির শেষে অনেকেই লিখতেন, আমিও লিখতাম, রেডিয়োতেও বলতাম “চিঠি পাওয়ামাত্র উত্তর দিও কিন্তু…”

কোনও ২টো বিশেষ স্মৃতি শ্রোতার সঙ্গে চিঠি-আলাপের?

মীর- দু’টো চিঠির কথা অবশ্যই উল্লেখ করব। একটা একদম শুরুর দিকে… ৯৪-৯৫ সালে, সেনহাটি বেহালা থেকে সুব্রতা রায় আমায় চিঠি লিখতেন। উনি আজও আমায় কিছু না-কিছু লিখে উপহার দেন। ২৬ বছর ধরে যোগাযোগ রয়েছে। বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে। হাতের লেখাটা এতই চেনা হয়ে গিয়েছিল, যে খামের উপরে দেখলে বুঝতে পারতাম কে পাঠিয়েছেন।

mir

আর একজন মহুয়া মুখোপাধ্যায়, ঠাকুরপুকুর থেকে চিঠি লিখতেন। পোস্টকার্ড পাঠাতেন। তখন আমার প্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন ছিলেন কাজল। আর্চিস থেকে বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পোস্টকার্ড তখন বেরোতো। এখনও বেরোয়, তবে সেভাবে হয়তো কাটতি নেই। ওই পোস্টকার্ডে কিছু না-কিছু লিখে আমায় পাঠাতেন মহুয়া।

চিঠির সঙ্গে রোম্যান্টিসিজমের ব্যাপারটা ভীষণই নিবিড়। এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা শুধু এটুকু বলার জন্যই চিঠি লিখতেন যে, “তোমাকে খুব ভাল লাগে। তোমার কথা শুনতে ভাল লাগে। কিন্তু তুমি যখন অন-এয়ার আমাদের চিঠি পড়ে শোনাও, তখন আরও ভাল লাগে।” এইসব চিঠিই বসে-বসে পড়তাম। বানান ভুল হলে শুধরে নিতাম। কোম্পানিকে চিঠিগুলো জমা দিতে হতো। তবে বেশ কিছু চিঠি আমি নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। খুঁজলে দু-চারটে আজও পাওয়া যাবে।

‘দ্য লায়ন কিং’-এর ‘সিম্বা’ আর ‘নালা’ আপনার জীবনে এসেছিল চিঠি হয়ে। কী সেই গল্প?

মীর- দ্য লায়ন কিং-এর সঙ্গে ‘সকালম্যান মীর’ (রেডিয়ো মির্চির মর্নিং শো-এ মীরের নাম)-এর জীবনের বিরাট সম্পর্ক। আমি যখন রেডিয়োতে সবে জকিং শুরু করেছি, সেই সময় একজন আমায় চিঠি লিখেছিলেন। যদিও সরাসরি আমায় লেখেননি। একটি অনুষ্ঠানে (যার নাম ছিল ‘লভ ইজ ইন দ্য এয়ার’) আমায় একটি গান ডেডিকেট করে পাঠান তিনি। রিচার্ড মার্কসের বিখ্যাত গান ‘রাইট হিয়ার ওয়েটিং ফর ইউ’। সেখান থেকেই প্রেম শুরু হয়ে যায়। পরে তিনি আমায় সরাসরি চিঠি পাঠান। জানতে পারি তিনি একজন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট, এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ার। বহু ক্লাস স্কিপ করেছিলেন আমার শো শুনবেন বলে। প্রথমে বুঝতে পারেননি কখন শো করি। খুঁজে পাননি। এরপর চিঠিটা অভ্যাস হয়ে যায়। সেই নারী সোমা ভট্টাচার্যই এখন আমার স্ত্রী, আমার কন্যার মা। ধরা না-পড়ে যাওয়ার জন্য এবং প্রিভেসির জন্য কোড নেম ব্যবহার করতাম আমরা। তখন ‘দ্য লায়ন কিং’ রিলিজ হয়েছিল। তাই আমার নাম ছিল ‘সিম্বা’ আর সোমার নাম ছিল ‘নালা’। এইভাবেই আমাদের প্রেম শুরু হয়।

mir

এর আগে স্কুলে একটি মেয়েকে খুব ভাল লেগেছিল। প্রায় ২০-২২ পাতার চিঠি লিখে প্রেম-প্রস্তাব দিয়েছিলাম তাকে। (সামান্য হেসে) সে অবশ্য সযত্নে সেটা পড়ে ফেরত দিয়ে বলেছিল ‘নট ইন্টেরেসটেড’। খুবই আশাহত হয়েছিলাম। সেই ছিল প্রথম প্রেমপত্র। দ্বিতীয়টা সোমাকে লেখা। আমার জীবনেও প্রেম এসেছিল চিঠির হাত ধরে।

mir

প্রেম কি এখন অনেক বেশি টেক-নির্ভর, ডিজিটাল?

মীর- চিঠি লেখা এখন অনেক কমে গিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে। পোস্ট অফিসে আজকাল আর ঢোকা আর হয়ে ওঠে না। পার্কস্ট্রিট পোস্ট অফিস একসময় আমার ঠেক ছিল। পোস্টকার্ড কিনতাম। ইনল্যান্ড লেটার কিনতাম। বন্ধুদের মধ্যে যাদের মিস করতাম, তাদের চিঠি লিখতাম। স্কুল জীবনের শেষে যাদের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হল, সেই বন্ধুদের বেশ কিছু মাস চিঠি লিখেছি।

তবে এখন প্রেম অনেক বেশি টেক নির্ভর। এটা হওয়ারই ছিল। মানুষ যখন চিঠি লিখত, তখনই জানত এর চেয়ে কোনও উন্নত মাধ্যমে একদিন যোগাযোগ হবে। কালের নিয়মে সেটাই হয়েছে। তবে প্রেম টেক-নির্ভর হলেও ফিকে হয়ে যায়নি মোটেও। বরং উজ্জ্বল হয়েছে, গাঢ় হয়েছে।

mir

চিঠি লিখে আগে উত্তরের অপেক্ষা করতাম। এই অপেক্ষা ছিল বড় মধুর। এখন এটা আর হয় না। এখন আমরা একটা গ্রামে থাকি যার নাম ইনস্টাগ্রাম। আমরা মুখ দেখাই ফেসবুকে, যা আমাদের বড় পছন্দের জিনিস। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ আরও অনেক কিছু, যার মাধ্যমে এখন প্রেম নিবেদন করা হয়। প্রেম এখন গতি পেয়েছে। ব্যাপারটা ইনস্ট্যান্ট হলেও ভাল। কাউকে ভালবাসি এটা বলার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। সঙ্গে সঙ্গেই জানাতে পারি। প্রযুক্তির আশীর্বাদ পেয়েও প্রেমে একই মিষ্টত্ব আছে, সততা আছে, কাছে টেনে নেওয়ার আকাঙ্খা রয়েছে, এটা ভালই তো। মাধ্যমটা খালি বদলেছে।

নীল খামে প্রিয়জনের চিঠি আসার অপেক্ষা আর মেসেজ ব্লু টিকের পর রিপ্লাই আসা, দু’ক্ষেত্রে রোম্যান্সের ফারাক কতটা? মীরের কোনটা পছন্দ?

mir

মীর- নীল খামের একটা গন্ধ ছিল। ওটা হোয়াটসঅ্যাপের ব্লু-টিকে পাওয়া যায় না। কোনওদিন পাওয়া সম্ভব নয়। খামে চেনা মানুষের, প্রিয় মানুষের একটা গন্ধ থাকে। অনেকে নিজের প্রিয় সুগন্ধী খামে একটি মাখিয়ে দিত। ওটা হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া যাবে না। তাই আজও প্রথমটাই পছন্দ করি। খামের রঙ যাই হোক না কেন, প্রেমের একটা আলাদা গন্ধ আছে। যেটা চিঠিতে পাঠালে বেশ তীব্র ভাবে নাকে এসে লাগে। অন্য একটা ইন্দ্রিয়কে স্পর্শ করে।

mir

মনের মানুষ এখন এক ক্লিকেই ধরাছোঁয়ার মধ্যে, চিঠির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সময়সাপেক্ষ ছিল, তবে অদ্ভুত কিছু ভাললাগা, অপেক্ষা ছিল। একুশ শতকে কি একটু নস্ট্যালজিয়া ফিরে আসা ভাল?

মীর- নস্ট্যালজিয়া ফিরে এলে তো খুবই ভাল হয়। আমরা বাঙালিরা বড্ড নস্ট্যালজিয়া-কাতর। ‘জিয়ানস্ট্যাল’ বলে কথাই আছে। আমাদের খুব খুব ইচ্ছে করে পুরনো দিনে ফিরে-ফিরে যেতে। অনেকে আছে যাঁরা বলেন, “তোমরা তো সেই দিন দেখোইনি, যখন চিঠি লেখা হতো। কীভাবে একটা চিঠি আসার অপেক্ষা করা হতো। এখন সব কেমন কানেক্টেড”।

ক’দিন আগেই আমার নানির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। নানি বলছিল, এখন এই কোভিড সিচুয়েশনে তোমরা এত আতঙ্কে থাকো যোগাযোগ নিয়ে। এখন তো তা-ও আত্মীয়-পরিজন কে, কেমন আছে সত্যিই এক ক্লিকে জেনে নিতে পারো। আমরা এমন যুগে ছিলাম যখন হয়তো অসুখ বা মহামারীতে গ্রামের পর গ্রাম খালি হয়ে গিয়েছে। তখন আত্মীয়-পরিজনের খোঁজ নিতে চিঠি পাঠাতে হতো। বা কাউকে পাঠাতে হতো এই বলে যে গিয়ে দেখে আসো কে কেমন আছে।

তাই নতুন করে এখন আবার নস্ট্যালজিয়া ফিরে এলে তো ভালই হয়।

পত্রমিতালি কনসেপ্ট বদলে গিয়েছিল ফোন আ ফ্রেন্ড-এ। এখন সেটাও প্রায় নেই। বন্ধুদেরও কেউ চিঠি লেখে না, ইঁদুর দৌড়ের জীবনে কি দু’দণ্ড সময় বের করে ‘ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো’-র মতো চিঠি লেখাও কি অভ্যাসে পরিণত করা যায়?

mir

মীর- আমার মনে হয় প্রত্যেক মানুষের উচিত টেকনোলজি ডিটক্সিফিকেশন। এত বেশি আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি যে, কোথাও একটা নেশাগ্রস্ত হয়ে গিয়েছি। তাই মাঝে মধ্যে একটা ডিটক্স করলে ভাল হয়। এরকম একটা টার্গেট নেওয়া যায় যে, মাসে বা দু’মাসে কাউকে একটা চিঠি লিখলাম। আজকাল তো হাতের লেখাও প্র্যাকটিস হয় না। আমরা শুধু টাইপ করি। হাতের লেখাও খারাপ হয়ে গিয়েছে। চেকে সই করা ছাড়া বোধহয় আর কোথাও হাতে কিছু লেখা হয় না। তাই কাগজে হাতে লিখে কাউকে একটা চিঠি পাঠালে বেশ ভালই হবে। যিনি পাঠাচ্ছেন এবং যাঁকে পাঠাচ্ছেন দু’জনের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা বেশ এক্সাইটিং হতে পারে। নস্ট্যালজিয়াও ফিরতে পারে এভাবে।

স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো যেভাবে ইনস্টাগ্রামে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন, সেভাবে যদি ‘পাবলিক ব্রডকাস্টার’ মীরও একদিন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উধাও হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তার আগে ফ্যান, থুড়ি ফলোয়ারদের, কী বলবেন?

মীর- ফ্র্যাঙ্কলি স্পিকিং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে একটু বিরতি নিতে পারলে খুব ভাল হয়। এর ফলে কিছুটা সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্সও হয়, পাশাপাশি পুরনো অভ্যাসগুলোও ফিরিয়ে আনা যায়। আজকাল সবকিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। এই যেমন রেডিওতে কথা বলছি, টেলিভিশনে শো করছি, এর প্রচারের জন্য বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এসব প্রয়োজন।

mir

জানি না সোশ্যাল মিডিয়া থেকে কোনওদিন উধাও হয়ে যেতে পারব কিনা। যদি পারি তাহলে আমার থেকে বেশি সুখী কেউ হবে না। যদি কেউ উধাও হয়ে যেতে পারেন, দেখবেন তাঁরা নিজের একটা অন্য পারসপেক্টিভ খুঁজে পাবেন। উধাও হওয়ার প্রথম স্টেপ হিসেবে এটা আমরা করতেই পারি যে, একটা গোটা দিন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারে ঢুকব না, চেক করব না, স্টেটাস আপডেট দেব না। একদিন থেকে দু’দিন, দু’দিন থেকে তিনদিন… এক সপ্তাহ কেউ টানা এটা করতে পারলে তো বিরাট কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবেন।

আমার অনেক বন্ধু আছে যারা এটা করেছে। তারা দীর্ঘদিন ফেসবুকে থাকেনি বা ইনস্টাগ্রাম দেখেনি। এর অর্থ কখনই এমন নয় যে, তারা সমাজ থেকে বিচ্যুত হয়েছে বা সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তাদের জীবনে কিচ্ছু বদলায়নি। বরং স্ক্রিন টাইম কমেছে। তারা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছে। ওটা অনেক জরুরি। আজকাল জন্মদিনে উইশ করতেও ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ করি। কেন বন্ধুকে একটা ফোন করে উইশ করা যায় না?

স্কুলজীবনে আমিও কারও ‘পেন-প্যাল’ ছিলাম। কার সেটা মনে নেই। তবে আমিও চিঠি লিখতাম। সে-ও লিখত। কিন্তু আমাদের কখনও দেখা হয়নি। লাইফ ইজ আ সার্কল। তাই পুরনো অভ্যাসগুলো ফিরিয়ে আনতে পারলে মন্দ হয় না।

সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমার যুগে চিঠি কি সত্যিই অপ্রয়োজনীয়? নাকি সেই নস্ট্যালজিয়া, চাৰ্ম একই আছে?

মীর- ফেসবুকের একটা জিনিস আমার খুব ভাল লাগে: ‘ফেসবুক মেমোরিজ’। বেশ মনে করিয়ে দেয় একবছর আগে, দু’বছর আগে কিংবা পাঁচ বছর আগে আজকের দিনে কী হয়েছিল। এটা খুব মজার। চিঠিও একইভাবে আমাদের ‘মেমোরিজ’ ফিরিয়ে আনতে পারে। তবে আমরা কি চিঠিগুলো সযত্নে রাখতে পেরেছি? যাঁরা রেখেছেন, তাঁদের কাছে ওগুলো অমূল্য রত্ন। কিন্তু আমরা অনেকেই অবহেলা করেছি। হয়তো মনে আছে চিঠিটা কাকে লিখেছিলাম। কিন্তু কোথায় চিঠিগুলো রয়েছে, সেটা মনে নেই।

মনে আছে কিছুদিন আগে মমতা শঙ্করের বাড়ি গিয়েছিলাম। ওঁর কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা চিঠি আছে। উদয় শঙ্কর এবং অমলা শঙ্করকে তাঁদের বিয়েতে চিঠি লিখে আশীর্বাদ পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই চিঠি মমতা শঙ্করের কাছে রয়েছে। অমলা শঙ্কর প্রয়াত হয়েছেন একবছর হয়নি এখনও। তাঁর সন্তানরা চিঠিগুলো যত্ন করে রেখেছেন বলে স্মৃতিটুকু রয়ে গিয়েছে।

আমরাও যদি এমনটা করতে পারি, যে ক’টা চিঠি আছে আলমারিতে বা দেরাজে, সেগুলো কুড়িয়ে-বাড়িয়ে যত্ন করে রাখতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে হয়তো আর চিঠি অপ্রয়োজনীয় হবে না। হয়তো নিজে থেকে পুরনো অভ্যাস ফেরাতে না চাইলে কেউ নতুন করে আর চিঠি লিখবেন না। কিন্তু নস্ট্যালজিয়া, চার্ম বা ফিরে দেখা সবই কিন্তু চিঠির সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে।

আমি জানি না আগামী দিনে ফেসবুক মেমোরিজ’ নিয়েও আমরা কতটা মাতামাতি করব। কারণ এটা তো একদিনের ব্যাপার। চিঠির মতো সেই নস্ট্যালজিয়া আর কিছুতেই নেই। আর কোনও মাধ্যমেই ফিরে পাওয়া যাবে না।

অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস