AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ভুল নির্বাচন নাকি পশ্চিমী উদাসীনতা, ভারতীয় সিনেদুনিয়ায় অস্কার এখনও কেন অধরা?

ইতিহাস বলছে, এখনও পর্যন্ত অস্কারের মনোনয়নে পৌঁছতে পেরেছে মাত্র তিন ভারতীয় সিনেমা। এদের মধ্যে রয়েছে ১৯৫৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'মাদার ইন্ডিয়া'। ১৯৮৮ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ছবি 'সালাম বম্বে' এবং ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'লগন'। ২০০১-২০২১-- লম্বা সময়। অথচ এই কুড়ি বছরে ভারতীয় ফিল্ম ফেডারেশন বেশ কয়েক ছবিকে অস্কারের দৌড়ে পাঠালেও তারা আগেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। জেতা তো দূরস্ত, মনোনয়নেও ঠাই হয়নি তাদের।

ভুল নির্বাচন নাকি পশ্চিমী উদাসীনতা, ভারতীয় সিনেদুনিয়ায় অস্কার এখনও কেন অধরা?
| Updated on: Mar 21, 2021 | 9:47 PM
Share

বলিউড । যেখানে প্রতিদিন প্লট তৈরি হয় হাজারও সিনেমার, রাতের পর রাত কেটে যায় সিনেমার কাস্টিং নিয়ে আলাপ আলোচনায়। যেখানে সেলিব্রিটি হওয়ার আশায় প্রতিদিন জড়ো হন হাজারও মানুষ। শুধু বলিউডই বা কেন?  আঞ্চলিক ছবিগুলির চাহিদাও কম নয় এ দেশে। তবু ফিল্মি দুনিয়ার সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার অস্কার যেন ছুঁয়েও ছোঁয় না ভারতীয় সিনেমাকে? ২০২১-এ এসেও কেন আজও ভারতীয় সিনেমার ক্ষেত্রে অস্কার কেন সোনার পাথরবাটি? যোগ্যতার অভাব নাকি ভুল নির্বাচন? দায়ী কে? একটু বিষদে দেখা যাক।

ইতিহাস বলছে, এখনও পর্যন্ত অস্কারের মনোনয়নে পৌঁছতে পেরেছে মাত্র তিন ভারতীয় সিনেমা। এদের মধ্যে রয়েছে ১৯৫৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘মাদার ইন্ডিয়া’। ১৯৮৮ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ছবি ‘সালাম বম্বে’ এবং ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘লগন’। ২০০১-২০২১– লম্বা সময়। অথচ এই কুড়ি বছরে ভারতীয় ফিল্ম ফেডারেশন বেশ কয়েক ছবিকে অস্কারের দৌড়ে পাঠালেও তারা আগেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। জেতা তো দূরস্ত, মনোনয়নেও ঠাই হয়নি তাদের।

‘লগন’ মনোনয়ন পেলেও ওই বছর শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে নির্বাচিত হয় বোসনিয়ার যুদ্ধকেন্দ্রিক ছবি ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’। ভাগ্যের শিকে না ছিঁড়লেও মার্কিনী ছবির বাজারে অস্কারের মনোনয়নের আগে আমির খানের ওই ছবির বিদেশে একমাস প্রোমোশন এবং নিউইয়র্ক ও লস এঞ্জেলেসে আর্ট হাউজে তার প্রদর্শন ভারতীয় ছবিকে নতুন ভাবে পরিচিতি দিয়েছিল বিশ্বের দরবারে। কিন্তু ২০০২ সালে অস্কারের দৌড়ে ভারতীয় ফিল্ম ফেডারেশন বেছে নেয় শাহরুখ-ঐশ্বর্যা অভিনীত ‘দেবদাস’কে। পারো-দেবের কেমিস্ট্রি পছন্দ হয়নি অস্কার নির্বাচক কমিটির। মনোনয়নও জোটেনি তাঁদের। অথচ ওই একই বছরে মুক্তি পেয়েছিল রাম গোপাল বর্মার ছবি ‘কোম্পানি’। যে ছবিতে অভিনয়ে ছিলেন অজয় দেবগণ, অন্তরা মালি, বিবেক ওবেরয়সহ অনেকেই। কোম্পানি শুধু যে হিট হয়েছিল তা নয়, সমালোচকদের একাংশের মতে ‘দেবদাস’ নয়, অস্কারে দৌড়ে পাঠান উচিত ছিল ওই ছবিকেই। ভারতীয় ছবির অতিরঞ্জন, দেব বলে পারোর সিঁড়ি দিয়ে ওড়না এলিয়ে দৌড় যে বিশ্বের দর্শককে সেভাবে আকৃষ্ট করবে না তা আগাম জানিয়েছিলেন ফিল্ম ক্রিটিকদের একটা বড় অংশ। কিন্তু ওই যে, সবার উপর ফিল্ম ফেডারেশন অব ইণ্ডিয়া সত্য, তাহার উপর…।

এ তো গেল একটা ঘটনা। ২০১২ সালে ভারতীয় ফিল্ম ফেডারেশন অস্কারের জন্য মনোনীত করেছিল অনুরাগ বসুর ছবি ‘বরফি’কে। বরফিতে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, রণবীর কাপুরের অভিনয় ছিল অনবদ্য, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশের জায়গা নেই। কিন্তু বরফি যে রাজ কাপুরের ‘মেরা নাম জোকার’ এবং চার্লি চ্যাপলিনের ‘সিটি লাইটস’ থেকে অনুপ্রাণিত তা নিজেই জানিয়েছিলেন পরিচালক। ‘বরফি’তে সৌরভ শুক্লার সঙ্গে রণবীরের সেই চোর-পুলিশের খেল তো আগে দেখেছে মানুষ। সুতরাং সেই ছবিও ছিটকে গিয়েছিল। অথচ ওই বছরই ইরফান খানের অনবদ্য ছবি ‘পান সিং টোমার’ মুক্তি পেলেও কমার্শিয়াল গ্ল্যামারের কম আধিপত্যে তা হয়ে গিয়েছিল ব্রাত্য।

আসা যাক ২০২১-এ। এই বার অর্থাৎ ৯৩ তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে মালায়ালাম ছবি ‘জালিকাট্টু’কে পাঠান হয়েছিল । তাও ছিটকে যায়। সমালোচকদের একটা অংশ মনে করছেন ‘জালিকাট্টু’ ভাল। তার মেকিং থেকে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর অসাধারণ, কিন্তু আন্তর্জাতিক দর্শককে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট নয়। এর চেয়ে মার্কসে এগিয়ে ‘ দ্য ডিসাইপল’। ভেনিস, টরেন্টোর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সাড়া ফেলেছিল এই মারাঠি ছবিটি। কিন্তু ফিল্ম ফেডারেশন তাকে অস্কারে পাঠানোর উপযুক্ত মনে করেনি।

নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পরিচালক অসীম ছাবড়া সম্প্রতি এক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “ভারতীয় ছবি মনোনীত না হতে পারার পিছনে দু’টি কারণ রয়েছে। ভারতীয় ফিল্ম ফেডারেশন প্রায়শই বুঝতে পারে না কী ধরনের ছবি মার্কিনী দর্শকদের ভাল লাগবে।” এরপরেই জালিকাট্টু এবং দ্য ডিসাইপেলের তুলনা টেনে এনে অসীমের বক্তব্য, “দ্য ডিসাইপল শুধু যে বিদেশের মাটিতে অ্যাওয়ার্ড জিতেছে তাই নয়, একই সঙ্গে চার বার অস্কার বিজেতা মেক্সিকাল পরিচালক অ্যালফোনো কুয়ারো ওই ছবির পরিচালক।” অসীম আরও যোগ করেন, “পশ্চিমী সমালোচক, ব্লগার এবং অ্যাকাডেমি পুরস্কার কমিটির সদস্যরা ভারতীয় ছবি সম্পর্কে সে ভাবে ওয়াকিবহালই নয়। যদি বিদেশি সাংবাদিক থেকে শুরু করে ব্লগার ভারতীয় ছবি নিয়ে আরও লেখালেখি করা শুরু করেন তবে তা অ্যাকাডেমির সদস্যদেরও চোখে পড়বে।

ভারতীয় ছবির প্রতি বিদেশি আগ্রহ যে কম তার বেশ কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ২০১০-এ মুক্তি পেয়েছিল ‘ধোবি ঘাট’। টরেন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তা প্রদর্শিতও হয়েছিল। কিন্তু তা কভার করেছিল দক্ষিণ এশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলিই। এ ছাড়াও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত ‘সাত খুন মাপ’ -এর বার্লিন সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির ছিলেন জনা পাঁচেক সাংবাদিক।

যদিও এ সবের মধ্যেই প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার অস্কার ভাগ্য এ বার ভাল। তাঁর ছবি ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’ একমাত্র ভারতীয় ছবি যার সঙ্গে অস্কার যোগ রয়েছে। ওই ছবির পরিচালক-চিত্রনাট্যকার রামিন বাহরানি অ্যাডপ্টেড চিত্রনাট্যের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন অস্কারের দৌড়ে। রামিন নিজে ইরানিয়ান-মার্কিনী পরিচালক। তবু ‘দ্য হোয়াইট টাইগার; উপন্যাসটি যেহেতু ভারতীয় পটভূমিকায় ভারতীয় লেখক অরবিন্দ আদিগার লেখা এবং ছবিতে অভিনেতাদের মধ্যে রয়েছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, রাজকুমার রাও এবং আদর্শ গৌরবের মতো ভারতীয় অভিনেতারা– তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েই আপাতত মনকে সান্ত্বনা দিতে হচ্ছে দেশবাসীর। তবে এত কিছুর পরেও ভারতীয় ছবির অস্কারের শিকে ছেঁড়ার প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায়…