Exclusive: ‘আমার কোনও ক্ষোভ নেই…’, মহানায়ক পুরস্কার পেয়ে TV9 বাংলাকে কী জানালেন শুভাশিষ?

Subhashis Mukherjee: এবার ৪৪ তম মহানায়ক সম্মানে সম্মানিত হলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে নিলেন পুরস্কার। হাসি মুখে TV9 বাংলাকে জানালেন, শিল্পীর কাছে সম্মানটাই সব।

Exclusive: 'আমার কোনও ক্ষোভ নেই...', মহানায়ক পুরস্কার পেয়ে TV9 বাংলাকে কী জানালেন শুভাশিষ?
Follow Us:
| Updated on: Jul 25, 2024 | 1:21 PM

সাল ১৯৮১। টলিউড পেয়েছিল এক নতুন অভিনেতা। হাসি-মজা-ঠাট্টায় দর্শকদের মন জয় করতে শুরু করেছিলেন পলকে। ছোট বকুলপুরের যাত্রী দিয়ে চলচ্চিত্র জগতের সফর শুরু। তিনি শুভাশিষ মুখোপাধ্যায়। এবার ৪৪ তম মহানায়ক সম্মানে সম্মানিত হলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে নিলেন পুরস্কার। হাসি মুখে TV9 বাংলাকে জানালেন, শিল্পীর কাছে সম্মানটাই সব।

কেমন লাগছে?

ভীষণ ভাল লাগছে। বিশেষ করে মহানায়ক সম্মান পাওয়া, এক আলাদা আবেগ। আমি যখন শুরু করি তখন টলিপাড়ার পালা বদল ঘটছে। তখন অনুপ কুমার চলে যাচ্ছেন, ভানু মুখোপাধ্যায় চলে গেলেন, জহর রায় চলে গেলেন, রবি ঘোষ চলে গেলেন, পরবর্তীতে চিন্ময় রায়ও চলে গেলেন। কমেডির জগতে তখন অনেকেই চলে গিয়েছেন। আমি যখন প্রবেশ করছি তখন ভানুদাকে পাইনি কাজে, অন্যভাবে পেয়েছিলাম, অনুপ কুমার, রবি ঘোষ কাজের মাঝে এদের খানিকটা পেয়েছিলাম। চিন্ময় রায়কেও পেয়েছিলাম। কাজও করেছি এই তিনজনের সঙ্গে। তারপর থেকে চেষ্টা করে গিয়েছি মানুষকে আনন্দ দেওয়ার, সকলের শুভেচ্ছা ভালবাসায় করেও যাচ্ছি।

কেরিয়ারের মধ্যগগণে তো অনেক লড়াই, আজ সেসব দিন মনে পড়ে?

নিশ্চয়ই-নিশ্চয়ই। মনে তো পরেই। কত রকমভাবে, কত লড়াই করে কাজটা করে যেতে হয়েছে। একজন অভিনেতার একটা ভাল কাজ জোগার করা, সে যে কতখানি শক্ত, কতখানি পরিশ্রমের, তা চট করে কেউ বুঝবে না তো। সিরিয়ালে বর্তমানে সবটা ভীষণ সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। পাওয়া যায়। আমাদের সময় তখন শুধুই সিনেমা। সিরিয়াল সেভাবে কোথায়? সিনেমায় কাজ পাওয়াটা তখন ভীষণ শক্ত কাজ ছিল। সেখানে কাজ পাওয়া, টিকে থাকা, অভিনয়ের জন্য অনেকটা সময় দিতে হয়েছে। হোল টাইমার হয়ে গিয়েছিলেন সেই কারণে। প্রখ্যাত অভিনেতা, পরিচালক নাট্যকার অজিতেষ মুখোপাধ্যায় বারবার বলতেন, অভিনেতা হতে গেলে হোল টাইমার হতে হবে। কথাটা কানে খুব বাজত। ফলে পেশা হিসেবে সব সময়টা অভিনয়কে দিয়েছি, যা যা করতে হয়েছে করেছি। তার জন্য আমার কোনও ক্ষোভ নেই, বরং আমি গর্বিত, যে আজ যা করেছি, সবটাই আমার পরিশ্রমের ফল।

যখন শুরু করেছিলেন, ইন্ডাস্ট্রি তো তখন বর্তমানের মতো এতটা সুখকর ছিল না?

ঠিক-ঠিক। সত্যি ছিল না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবটার পরিবর্তন প্রয়োজন। টাকা আসুক, ভাল কাজ হোক, সেটাই তো চাই আমরা। ছেলে মেয়েরা ভাল কাজ করুক। নাম করুক। বাংলা সিনেমার মুখ উজ্জ্বল করুক। সত্যি সেই সময় আমরা এত সুবিধে পাইনি। তবে সময়টাই তো ওটা ছিল। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে যা যা সম্ভব ছিল পেয়েছি। এখন এই সুদিন দেখে খুব ভাল লাগে। আমরা তো একটা পরন্ত বেলায় শুরু করেছিলাম, আজ সেগুলো মনে পড়লে… কী আর বলব।

একটা সময় আপনার প্রজন্মে এমন কিছু ছবি তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে বর্তমানে মিম-ব্যঙ্গ সবটাই চলে সোশ্যাল মিডিয়ায়, বিষয়টা আপনি কী চোখে দেখেন?

জানি, তবে এটা তো মানতে হবে, ওই ছবিগুলোই ব্যবসা আনত, ওই ছবিগুলোই প্রেক্ষাগৃহ ভরিয়ে রাখত। একটু যদি ভেবে দেখেন, তখন ছবি মুক্তি পাওয়ার ধরনটাই ছিল অন্য। একটা ছবি একটা প্রেক্ষাগৃহেই তিনটে শো পেত। কলকাতাকে তখন চেইন সিনেমাহল। তিনটে করে হলের একটা মালিকানা ছিল। ফলে একই মালিকানায় তিনটে হলে মোট ৯টা শো পাওয়া যেত। বর্তমানে এটা ভাবা যায় কি? প্রতিদিন কত ব্যবসা বুঝতে পারছেন? এরপর কলকাতার বাইরে তো রয়েছেই। তখন তো সিঙ্গল স্ক্রিনের রমরমা। আর এখন দেখুন, বাংলা ছবির শো কী? সকাল বেলা, বেলা বারোটায়। এ কী! কে তখন ছবি দেখতে যাবে বলুন তো! তবে বাঙালি দর্শক নিয়ে আমি সব সময় বলি, তাঁরা আগেও ছবি দেখতেন, তাঁরা এখনও ছবি দেখেন। এই তো সম্প্রতি নন্দনে স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলাম, দেখি প্রেক্ষাগৃহ ভর্তি, বেশ ভাল লাগল। আর সব ছবি কি এমন হচ্ছে? একেবারেই না। এমনই ছবি দেখেছি হাফটাইমে বেরিয়ে এসেছি। ভাল কাজ তখনও ছিল, ভাল কাজ আজও আছে। আর রইল পড়ে হাউসফুল হচ্ছে না কেন? হল কোথায়? শো কোথায়? কোথায় চলবে ছবিগুলো? শহরের বাইরে সিঙ্গলস্ক্রিন ভীষণভাল চলে, সেখানেও হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন না, আর শহরের মানুষ বেশ কিছু ছবি পছন্দ করছেন না। তাঁর অন্য স্বাদ খুঁজছেন।

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও শুভাশিষ মুখোপাধ্যায়, এই জুটি একটা সময় বহু হিট ছবি উপহার দিয়েছে, আর আজ তাঁরাই একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে পেলেন মহানায়ক সম্মান…, এই বিষয়টা কেমন লাগল?

হাসতে-হাসতে সত্যি বেশ ভাল লাগল। দারুণ লাগল। একই সঙ্গে একই মঞ্চে আমরা দুজনে পুরস্কার নিচ্ছি, মহানায়কের নামে, এটা বড় প্রাপ্তী আমার কাছে। প্রসেনজিতের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক, কেরিয়ারে ও যেভাবে আমার পাশে থেকেছে, দাঁড়িয়েছে, এখনও থাকে, ফলে এটা আমার কাছে এক বড় পাওয়া। সর্বপরী মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে এই পুরস্কার পাওয়া, খুব খুশি হয়েছি।

অভিনয় তো এখনও করে চলেছেন দাপটের সঙ্গে, তবে সব চরিত্রই কি আজ ভাল লাগে? 

একেবারেই না। একটা সময় ছিল যখন কাজ এলে ফেরাতে পারতাম না, সবটাই ছিল আবেগ, কাজের খিদে। এখন একটু বেছে নিতে হয়। অনেকেই হয়তো সেই শুভাশিষকে মাথায় রেখে চিত্রনাট্য নিয়ে হাজির হন, তখন হাসতে-হাসতেই বলি— আমি এবার একটু অন্য কাজ করতে চাই, ওটা তখন মানিয়েছে, এখন মানায় না। সব কিছুর তো একটা সময় থাকে।