‘রং মাখা জাত বলে, কোনও অশৌচ আর আমাদের পালন করা হয় না’, প্রিয় শ্রাবণীদিকে হারিয়ে কী বলছে টলিপাড়া?
টেলিপাড়ায় চরম ব্যস্ততায় নানা ধারাবাহিকের শুটিং চলছে, কিন্তু তুমুল ব্যস্ততার মাঝে চরম শূন্যতা। শ্রাবণী বণিক নেই। কিন্তু তাঁর দাপুটে অভিনয়, লড়াকুর মতো জীবন এখনও উজ্জ্বল বিনোদন পাড়ায়। আর তাই তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে, তাঁর সহকর্মীদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে, শ্রাবণীদির হাসিমুখ। যে শ্রাবণীদির কাছে সবাই আপনি, তা বয়সে ছোট হোক বা বড়। যে শ্রাবণীদি ফ্লোরের মাঝে দেখা হলেই এক গাল হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করতেন কেমন আছেন? সেই শ্রাবণীদির শরীরেই দানা বেঁধেছিল মারণ রোগ ক্যানসার।

গোটা টলিউড শোকাচ্ছন্ন। বছর শেষে যে এভাবে তাঁদের প্রিয় শ্রাবণীদিকে চিরকালের মতো হারাতে হবে, তা যেন মেনে নিতে পারছেন না, তাঁর সহকর্মীরা। টেলিপাড়ায় চরম ব্যস্ততায় নানা ধারাবাহিকের শুটিং চলছে, কিন্তু তুমুল ব্যস্ততার মাঝে চরম শূন্যতা। শ্রাবণী বণিক নেই। কিন্তু তাঁর দাপুটে অভিনয়, লড়াকুর মতো জীবন এখনও উজ্জ্বল বিনোদন পাড়ায়। আর তাই তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে, তাঁর সহকর্মীদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে, শ্রাবণীদির হাসিমুখ। যে শ্রাবণীদির কাছে সবাই আপনি, তা বয়সে ছোট হোক বা বড়। যে শ্রাবণীদি ফ্লোরের মাঝে দেখা হলেই এক গাল হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করতেন কেমন আছেন? সেই শ্রাবণীদির শরীরেই দানা বেঁধেছিল মারণ রোগ ক্যানসার। কিছুদিন আগেও ক্যানসার আক্রান্ত ফুসফুস নিয়েই ফ্লোরে অভিনয় করতেন। কিন্তু শেষ লড়াইটা হেরেই গেলেন।
টেলিপর্দার জনপ্রিয় মুখ ‘খেলনাবাড়ি’র আরাত্রিকা মাইতি। শ্রাবণী বণিকের সঙ্গে ধারাবাহিকে সরাসরি কাজ না করলেও, মাঝে মধ্যেই স্টুডিও পাড়ায় দেখা হত দুজনের। টিভি নাইন বাংলাকে আরাত্রিকা জানালেন, ”আমি ভাবতেই পারছি না, শ্রাবণীদিকে এত তাড়াতাড়ি হারিয়ে ফেলব। প্রচণ্ড মন খারাপ লাগছে। শ্রাবণীর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে পড়ছে। আমার মনে আছে, আমার প্রথম ধারাবাহিকে অভিনয় দেখে আমার প্রশংসা করছিল। খুব কমজন সিনিয়ার, জুনিয়ারদের এভাবে প্রশংসা করেন। আর সবচেয়ে বড় যেটা ছিল শ্রাবণীদি কাউকে কখনও তুই বা তুমি বলে ডাকতেন না, বলতেন আপনি! তা বয়সে ছোট হোক বা বড়। ভাল অভিনেত্রীর পাশাপাশি ভাল মানুষ হারালাম। যখন দিদিকে জিজ্ঞাসা করতাম, কেমন আছেন, তখনই দিদি বলত, ভাল আছি। এই স্পিরিট সত্যিই অনুপ্রাণিত করার মতো।”
শ্রাবণী বণিকের সঙ্গে ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন টেলিপর্দার বড় মুখ অরিজিতা মুখোপাধ্যায়। শ্রাবণীদির মৃত্যুর খবর পেয়ে অরিজিতা লিখলেন, ”শ্রাবণী দি, তোমার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল একরকম, একসঙ্গে কাজ করতে গেলে প্রথম প্রথম যেমনটা হয়! তারপর একদিন, হঠাৎ একদিন, এক ইন্দ্রপতনের পর তুমি ঝড়ের মত এসে ঢুকেছিলে স্টুডিওতে, নীরবে তাড়াতাড়ি প্রাণপণে মেকাপ করছিলে, যাতে চোখের জল গড়িয়ে না পরে। এমন দিন তো আমাদের যায়, শোক দুঃখ লুকিয়ে চোখের তলা কনসিল করতে হয়, কান্না চেপে হাসতে হয়! লোকে খিস্তি করে ‘রং মাখা জাত’ বলে… কোনো অশৌচ আর আমাদের পালন করা হয়না! বিধাতা গন্ধর্বদের শুচি করেই পাঠান কিনা!! তেমনই এক দিনে আমাদের এক গভীর সখ্য হয়েছিল সবার অলক্ষ্যে। আমি সেসব কথার বীজ অনেক গভীর অরণ্যে বুনে রেখেছি। তুমি কোনোদিন কাউকে ‘আপনি’ ছাড়া ডাকতে পারলেনা… শুধু জন্মদিনে আবদার করেছিলাম বলে আমায় ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’ করে নিতে পেরেছিলে! তুমি আমার দেখা একজন অত্যন্ত ডিগনিফায়েড মানুষ। সৎ এবং নির্ভীক মানুষ হতে চায়। তুমি হতে পেরেছিলে। তোমার আভিজাত্য আর সংযম দেখে আমরা মুগ্ধ হতাম। শুধু এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে জানতে পারিনি। যেমন কারোর বেলায় জানা যায়না! খুব মন খারাপ আজ। আপনি সাবধানে যাবেন, কেমন?”
তরুণ মজুমদারের সুপারহিট ছবি ‘আলো’তে নজর কেড়েছিলেন শ্রাবণীদি। সেই আলো ছবির অন্যতম অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় লিখলেন, ”কত কথা মনে পড়ছে শ্রাবনী।সেই আলো ছবির কাস্টিং এর সময় প্রথম আলাপ।বাগদি বৌ এর রোলে তোমায় কাস্ট করলেন তরুণ জেঠু।আমরা একই দিনে ওনার NT1 এর অফিসে গেছিলাম।সেই থেকে পরিচয়।সেটা 2003 আর 2025 এই তুমি চলে যাবে কে জানতো? তারপর তরুণ মজুমদারের দুটো তথ্যচিত্র “রাঙা মাটির পথ “আর “ও আমার দেশের মাটি”-তে আবার কাজ হল। আর recent times এ “গোধূলি আলাপ”এ। আলো ছবির কত Artist এক এক করে চলে গেল। কুনালদা,অভিষেকদা,বাসন্তীদি,গীতাদি,জ্ঞানেশজেঠু,ভারতী দেবী…যেখানে গেলে ভাল থেকো।আনন্দে থেকো। দেখা তো হবেই আজ না হয় কাল…”
শ্রাবণীর শরীরে বাসা বেঁধেছিল মারণ রোগ ক্যান্সার। টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয় অভিনেত্রী হলেও, আর্থিক সঙ্গতি ছিল না চিকিৎসার। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করার জন্য অভিনেত্রীর প্রয়োজন ছিল লক্ষ লক্ষ টাকা। উপায় না পেয়েই সোশাল মিডিয়ার হাত ধরে বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী এবং অনুরাগীদের কাছে সাহায্য চাইতে এগিয়ে এসেছিল অভিনেত্রীর পরিবার। লম্বা পোস্টে অভিনেত্রীর ছেলে লিখছিলেন, মাকে বাঁচানোর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সাহায্য করুন। এই ঘটনা নভেম্বরের। সেই কারণে বছর শেষ হওয়ার আগেই শ্রাবণীর চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তাঁর প্রিয়জনরা।
