অসহনীয় এক অসুখের নাম মাইগ্রেন (Migraine)! মাইগ্রেন এমন এক ধরনের পরিস্থিতি যা অনেকগুলি মাথা ব্যথার পর্ব নিয়ে হাজির হয়। অর্থাৎ কয়েকদিন অন্তরই মাইগ্রেনের রোগীর মাথা ব্যথার উপসর্গ হাজির হয়। মাইগ্রেনের ব্যথা (Migraine Pain) শুরু হলেই বহু লোক মুঠোমুঠো পেন কিলার খান। ফলে অসুখটি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করে। রোগ সারানো মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। অথচ জানলে অবাক হবেন, আমাদের হাতের কাছেই থাকে এমন কিছু ফল যা খেলেই পলকে সেরে যেতে পারে মাইগ্রেনের তীব্র যন্ত্রণা। আর তা হতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবেই! প্রতি ৪ জন মহিলার মধ্যে ১ জন মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন। প্রতি ১২ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন জীবনের কোনও না কোনও সময়ে মাইগ্রেনের সমস্যায় আক্রান্ত হন। সাধারণত শৈশাবস্থায় মাইগ্রেনের সমস্যা চাগাড় দিয়ে ওঠে। অবশ্য প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অব্যবহিত পরেও মাইগ্রেনের লক্ষণ শুরু হতে পারে।
মাইগ্রেনের ধরন
আলোর আভাযুক্ত মাইগ্রেন
এক্ষেত্রে মাথার যে কোনও একদিকে ব্যথা হয়। কোনও কোনও সময় ব্রেনের একদিকে ব্যথা শুরু হওয়ার পর সারা মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। মাথা সামান্য নাড়াচাড়া করতেও কষ্ট হয়। উপসর্গ দেখা দেওয়ার ২ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছয়। ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা অবধি স্থায়ী হতে পারে এই অবস্থা। মাইগ্রেনের অন্যান উপসর্গের মধ্যে রয়েছে—
বমিবমি ভাব, কোনও কোনও ক্ষেত্রে বমি হওয়া, ঝাপসা দৃষ্টি, চড়া আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা। ফলে মাইগ্রেনের রোগীর অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকতেই ভালো লাগে। কার কারও নাক দিয়ে জল পড়ে, খিদে পায়, কোনও বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। পেটে ব্যথা, অতিরিক্ত ঘামের মতো সমস্যাও হয় কারও কারও। তবে এই ধরনের মাইগ্রেনের মূল বৈশিষ্ট্য হল— মাইগ্রেনের উপরিউক্ত লক্ষণ শুরু আগে রোগী চোখে আলোর ঝলকানির মতো দেখেন! কথা বলতেও সমস্যা হয়।
আলোর আভাহীন মাইগ্রেন
ব্যথা শুরু হওয়ার আগে আলোর আভা দর্শন ছাড়া বাকি সমস্যা একইরকম থাকে।
মেনস্ট্রুয়াল মাইগ্রেন
লক্ষণ মাইগ্রেনের সাধারণ সব সমস্যার মতোই। তবে মেনস্ট্রুয়াল মাইগ্রেন সাধারণত পিরিয়ডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। পিরিয়ড শুরু হওয়ার সময়, মধ্যবর্তী সময়ে এই ধরনের মাইগ্রেন দেখা যেতে পারে।
কীভাবে মাইগ্রেন নির্ণয় করা হয়?
সাধারণত রোগ লক্ষণ ও নিয়মিত দিনের অন্তরে রোগীর মাথা ব্যথার কথা শুনেই চিকিৎসক রোগীর মাইগ্রেনের সমস্যা নির্ণয় করতে পারেন।
কেন হয় মাইগ্রেন
• মাইগ্রেন কেন হয় তার পরিষ্কার কারণ এখনও জানা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু গবেষণায় জানা গিয়েছে, ব্রেনের অন্দরের কিছু রাসায়নিকের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মাইগ্রেনের সমস্যা ফিরে ফিরে আসে। তবে কোন কোন রাসায়নিকের জন্য এমন হয় তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি।
• পরিবারের একাধিক সদস্যের মধ্যে হতে পারে মাইগ্রেন। অতএব বংশে এই রোগ থাকলে, পরিবারের অন্যদের মধ্যে অসুখটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মাইগ্রেন অ্যাটাকের ইন্ধন
সাধারণত কয়েকদিন অন্তর মাইগ্রেনের অ্যাটাক ফিরে হয়। দু’টি অ্যাটাকের মধ্যবর্তী দিনগুলিতে কোনও উপসর্গ থাকে না! তবে কিছু কিছু পরিবেশগত ও শারীরিক প্রভাব থাকে যা মাইগ্রেনের অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। সেগুলি হল—
• প্রবল রোদে অনেকক্ষণ কাটানো।
• দীর্ঘসময় উপোস করে থাকা।
• পূর্ণসময় ঘুম না হওয়া।
• দীর্ঘ সময় সফর করা।
• চড়া গন্ধ।
• স্ট্রেস, উদ্বেগ।
• ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল ব্যবহার করা।
• মেনস্ট্রুয়েশন।
আশ্চর্য ফল
আপেল: এই ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে আপেল। নানা গাবেষণায় দেখা গিয়েছে আপেলের আয়রনের মাধ্যমে মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করা সম্ভব!
লেবু: এই ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম। ফলে মাইগ্রেনের অ্যাটাকের সময় লেবু ব্যথা ও প্রদাহ কমায় বলে জানা যাচ্ছে। তাই ব্যথার সময় একগ্লাস জলে লেবুর রস মিশিয়ে পান করে নিন।
স্যুইট পট্যাটো: মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে মিষ্টি আলু খাওয়াও খুবই উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। ভিটামিন ই এবং অন্যান্য ভিটামিনও মেলে মিষ্টি আলুতে যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
কলা: কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে বলেই মনে করা হচ্ছে।