স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ আমন্ডের গুণ অপরিহার্য। রোজ সকালে বাদাম বা আমন্ড (Almonds) খাওয়ার অভ্যেসের কথা এখন কারোর অজানা নয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য, হার্ট ভালো রাখতে, ত্বকের যত্ন নিতে আমন্ড খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তার ডায়াটেশিয়ানরাই। কিন্তু কটা করে খাবেন সে ব্যাপারে কেউ খোঁজ রাখেন না। অনেকেই ভাবেন, খিদের ঝোঁকে যতগুলো খাওয়া যায় ততই ভাল। অর্থাত্ যত বেশি খাবেন, তত উপকার মিলবে। আবার অনেকের মতে, দিনে দুটোর বেশি আমন্ড খাওয়া একেবারেই চলবে না। কিন্তু সঠিক কটা আমন্ড খেলে আপনার শরীরে জন্য উপকারী, তা জেনে নিন এখানে।
অতিরিক্ত কোনও কিছুই ভালো না। অনেকেই মুঠো-মুঠো আমন্ড একসঙ্গে খেয়ে ফেলেন। শুধু আমন্ডই নয়, তারসঙ্গে কিসমিস, আখরোট, পেস্টা বাদাম, কাজুবাদামের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বিশেষজ্ঞদের কথায়, আমন্ডে রয়েছে ফাইবার, উপকারী ফ্যাট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও নানান খনিজ। অনেকেই মনে করেন, রাতে ভিজিয়ে রাখা আমন্ড প্রতি সকালে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার মেলে। কিন্তু কটা করে খাবেন দিনে, তা জানেন না অনেকেই। চিকিত্সকদের মতে, নিয়মিত আমন্ড দিয়ে দিন শুরু করলে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। হার্ট সুস্থ রাখে। কিন্তু অতিরিক্ত আমন্ড খেলে শরীরে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।
যাঁদের বাদামে অ্যালার্জি রয়েছে, তাঁরা আমন্ড থেকে দূরে থাকুন। প্রোটিন-যুক্ত অতিরিক্ত আমন্ড (Almonds) খেলে মুখের মধ্যে র্যাস (oral allergy syndrome) বের হতে পারে। ঠোঁট, জিভ, গলার মধ্যে ঘা হতে পারে। যাঁদের অ্যালার্জি রয়েছে, তাঁদের শ্বাসকষ্ট, বারবার বমি হতে পারে। গলা ভেঙে যেতে পারে। এমনকি রক্তচাপ নেমে যেতেও পারে।
অনেকেই মনে করেন আমন্ড খেলে শরীরের বাড়তি মেদ ঝরে যায়। কিন্তু অতিরিক্ত খেলে তার ফল বিপরীত হতে পারে। প্রতিদিন মুঠো মুঠো আমন্ড বা কাঠবাদাম খেলে আপনার শরীরে ফ্যাট জমতে শুরু করবে। আমন্ডের মধ্যে উপকারী ফ্যাট থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য একান্ত প্রয়োজন। তবে বেশি পরিমাণে আমন্ড খাওয়ার জেরে সেই ফ্যাটই পরবর্তীকালে ওজন বাড়াতে (Weight gain) সাহায্য করে।
কঠিন মেডিক্যাল পদ্ধতির মধ্যে থাকলে আমন্ড না খাওয়াই ভালো। কারণ, আপনার কড়া ডোজের ওষুধের কার্যকরী ক্ষমতাকে লঘু করার চেষ্টা করে কাঠবাদামের মধ্যে থাকা মাংগানিজ। এছাড়া প্রতিদিনই আমরা সবজি, শস্য ও চা থেকে শরীরে মধ্যে মাংগানিজ প্রবেশ করছে আমাদের শরীরে। তাই অতিরিক্ত আমন্ডের জেরে শরীরের মধ্যে বিষ প্রবেশ করানোটা বোকামির।
মাত্র ১০০ গ্রাম আমন্ডের মধ্যে ১৩ গ্রাম ফাইবার থাকে। তাই অতিরিক্ত আমন্ড খেলে হজম ক্ষমতা লোপ (Digestive issues) পেতে পারে। শুধু কাঠবাদামই নয়, কাজুবাদাম-পেস্তা বাদাম- আখরোট খেলেও পেটে গ্যাস ও পেটে ব্যাথা হতে পারে। শুধু তাই নয়, ডায়েরিয়াও হতে পারে।
চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া আমন্ড কটা খাবেন তা নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ অতিরিক্ত আমন্ড খাওয়ার জেরে কিডনিতে স্টোনও (kidney stones )
হতে পারে। এমনকি কিডনি বিকলও হয়ে যেতে পারে।
তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে কোনও কিছুই মুখে তুলবেন না। আইসিএমআরের (ICMR) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন ৭.৫ থেকে ১০ গ্রাম আমন্ড খেতে পারেন। যে কোনও শুকনো ফলই শরীরের জন্য ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়ার ফল ভুগতে হতে হবে আপনাকেই। তাই সাবধান হোন এখনই।