অস্টিওপোরোসিস হল এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে প্রভাব পড়ে হাড়ের ওপর। এই রোগে আক্রান্ত হলে ক্ষয় হতে শুরু করে হাড়, ভঙ্গুর হয়ে যায় হাড় যার ফলে সহজেই ভেঙে যায় বা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই রোগ থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, প্রাথমিক ভাবে মেরুদন্ড বা কব্জির মত জায়গায় ফ্যাকচার হলে তখনই এই রোগ নির্ণয় করা যায়।
অস্টিওপোরোসিস পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে মহিলাদের সংখ্যাটা একটু বেশি। বিশেষত যে সব মহিলার বয়স ৫০ এর বেশি, যাঁরা ইতিমধ্যেই মেনোপজের মত শারীরিক অবস্থায় পৌঁছে গেছেন, তাঁদের মধ্যে বেশি এই রোগ দেখা যায়। অন্যদিকে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হাড়ে কম ঘনত্ব, গঠনের তারতম্যের কারণে এই সমস্যা বেশি লক্ষ্য করা যায়। উপরন্ত, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক এবং স্তন ক্যান্সারের চেয়ে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বেশি রয়েছে।
যতক্ষণ না হাড় ভেঙে যায়, মহিলারা এই রোগ সম্পর্কে অবগত হন না। বিশেষত মেনোপজের সময় হাড়ের এই ক্ষয় বেশি লক্ষ্য করা যায়। হাড়ের ঘনত্ব বেশি থাকলে ক্যান্সারের মত রোগের ঝুঁকিও কমে যায়। তাই এটা ভীষণ জরুরি জানা যে মেনোপজের সময় আপনার শরীরে কী কী পরিবর্তন হচ্ছে এবং এই সময় আপনার হাড় কতটা ভাল আছে। এতে আপনি ৫০ এর পর ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমিয়ে ফেলতে পারবেন।
এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ইস্ট্রোজেন হরমোন। এই হরমোন পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি পরিমাণে থাকে এবং এই ইস্ট্রোজেন হরমোনের কারণে মহিলাদের মধ্যে হাড়ের ঘনত্ব বজায় থাকে। মেনোপজের পর মহিলাদের মধ্যে এই হরমোনের পরিমাণ ব্যাপক ভাবে কমতে শুরু করে। যার ফলে মেনোপজের ১০ বছর পরে হাড়ে চোট পেলে অনাহাসে তা ভেঙে যায়।
বয়স যখন কম থাকে, বিশেষত ১৮-২০ বছর বয়সে, তখন হাড়ের বিকাশ শুরু হয়। তারপর পুষ্টির অভাবে অনেকের মধ্যেই হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়। ৩০ বছর বয়সের পর এই পুষ্টির অভাব মহিলাদের শরীরে বৃদ্ধি পায়। যেটা মেনোপজের পর আরও খারাপ আকার ধারণ করে। যেখান থেকে বৃদ্ধি পায় হাড়ের ক্ষয়ও।
মেনোপজকে কোনও ভাবেই আপনি প্রতিরোধ করতে পারবেন না, এটা একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। কিন্তু আপনি অস্টিওপোরোসিসকে প্রতিরোধ করতে পারবেন, হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী করতে তুলতে পারবেন। এর জন্য দরকার সঠিক পুষ্টি। এই পুষ্টি আপনাকে খাদ্যের মাধ্যমেই গ্রহণ করতে হবে। আপনি এর জন্য ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খান। ক্যালসিয়ামের পাশপাশি দরকার ভিটামিন ডি, যেটা আপনি সবচেয়ে বেশি পাবেন সূর্যের আলো থেকে। নিয়মিত যোগব্যায়াম করাও এর সঙ্গে খুব জরুরি।