মুম্বই : মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন গৃহ মন্ত্রী অনিল দেশমুখকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে বিশেষ আদালত। আর্থিক তছরূপের মামলার তদন্তে গতকালই বর্ষীয়ান এনসিপি নেতা অনিল দেশমুখকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল ইডির দফতরে। টানা ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আজ তাঁকে আদালতে পেশ করা হলে বিচারক পি বি যাদব এনসিপি নেতা অনিল দেশমুখকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
আজ এই শুনানি চলাকালীন আদালতকক্ষে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ইডির তরফে আইনজীবী জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অনিল দেশমুখকে ১৪ দিনের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। অন্যদিকে অনিল দেশমুখের আইনজীবী বিক্রম চৌধুরি সেই আবেদনের বিরোধিতা করেন। এনসিপি নেতার আইনজীবীর বক্তব্য, এর আগে বম্বে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে তদন্তকারী সংস্থার তরফেই বলা হয়েছিল, সেই সময় পর্যন্ত অনিল দেশমুখের নাম অভিযুক্তের তালিকায় ছিল না।
পাশাপাশি, গতকাল অনিল দেশমুখ নিজেই ইডির দফতরে হাজির হয়েছিলেন। এনসিপি নেতার আইনজীবী জানতে চান, ২৯ অক্টোবর থেকে আজকের মধ্যে কী এমন নতুন প্রমাণ তদন্তকারী আধিকারিকদের হাতে এসেছে। একইসঙ্গে অনিল দেশমুখের শারীরিক অবস্থার কথাও আদালত কক্ষে তুলে ধরেন তাঁর আইনজীবী। জানান, তাঁর কাঁধের সমস্যা রয়েছে। কাঁধের হাড় সরে গিয়েছে। তাঁকে সবসময় নিজের কাজের জন্য কারও না কারও সাহায্য প্রয়োজন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন দেশমুখ। সেই কথাও তুলে ধরেন তাঁর আইনজীবী। হৃদযন্ত্রের সমস্যার কথাও জানানো হয় বিচারককে।
এর আগে ইডির সমন এড়ানোর জন্য বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অনিল দেশমুখ। কিন্তু বম্বে হাইকোর্ট সেই আবেদন বাতিল করে দিয়েছিল।
মুকেশ অম্বানীর বাড়ির সামনে থেকে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি উদ্ধারের পরই গত মার্চ মাসে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার পরমবীর সিংকে সরিয়ে দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ। এরপরই পরমবীর সিং মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে চিঠি লিখে অনিল দেশমুখের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ আনেন। তিনি জানান, অম্বানীকাণ্ডে ধৃত পুলিশ অফিসার সচিন ভাজ়ে এবং এসিপি সঞ্জয় পাটিলকে প্রতিমাসে ১০০ কোটি টাকা তোলাবাজির লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিলেন। এর জন্য মুম্বইয়ের ১৬০০ বার-রেস্তোরাঁকেও চিহ্নিত করেছিলেন তিনি।
বিষয়টি আদালত অবধি গড়ালে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং তারপরই ইডিও আর্থিক তছরূপের মামলা দায়ের করে। সূত্রের খবর, ইডি আধিকারিকরা ৪ কোটি টাকা তছরূপের খোঁজ পেয়েছেন। অম্বানীকাণ্ডে অভিযুক্ত সচিন ভাজ়ের মাধ্যমে হাতবদল হয়ে তা অনিল দেশমুখের কাছে এসেছিল।
সোমবারই এক ভিডিয়ো পোস্ট করে ৭১ বছর বয়সী প্রবীণ এনসিপি নেতা অনিল দেশমুখ দাবি করেন, “আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভুয়ো।” এরই মধ্যে সোমবার ম্যারাথন জেরা করা হয় তাঁকে। এরপরই জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় অনিলকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেয় ইডি।