অযোধ্যা: রাম মন্দিরের পর এবার অযোধ্যার মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হবে। আগামী বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসের (Republic Day) দিনেই সরকারের নির্ধারিত পাঁচ একর জমিতে শিলান্যাস করা হবে নতুন মসজিদের।
অযোধ্যার ‘বিতর্কিত’ জমিতে তৈরি হচ্ছে রাম মন্দির (Ram Mandir)। এখানেই ছিল বাবরি মসজিদ (Babri Mosque)। তবে, শীর্ষ আদালতের নির্দেশেই অযোধ্যার রৌনহী গ্রামে নতুন করে মজসিদ তৈরির জন্য পাঁচ একর জমি বেছে দিয়েছে সরকার। সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড (Sunni Waqf Board) ছয় মাস আগেই মসজিদ গঠনের জন্য ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন (Indo-Islamic Cultural Foundation) তৈরি করেছে।
ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আখতার হুসেন বলেন,”অযোধ্যা মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের জন্য ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ সাত দশক আগে এই দিনেই আমাদের দেশের সংবিধান কার্যকর করা হয়েছিল। সংবিধান বহুত্ববাদের উপর ভিত্তি করে তৈরি, আমাদের মসজিদও সেই আদর্শের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হবে।”
তিনি আরও জানান, আগামী ১৯ ডিসেম্বর পাঁচ একর জমির উপর মসজিদের নকশা প্রকাশ করা হবে। মসজিদ চত্বরেই তৈরি হবে একটি মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতাল (Multi Speciality Hospital), কমিউনিটি কিচেন (Community Kitchen) ও গ্রন্থাগার (Library)। গোলাকৃতির এই নতুন মসজিদে একসঙ্গে দুই হাজার মানুষ নমাজ পড়তে পারবেন। আখতার বলেন,” বাবরি মসজিদের মতো দেখতে না হলেও, তার থেকে আকারে বড় হবে এই নতুন মসজিদ। চত্বরের ঠিক মাঝখানে তৈরি করা হবে হাসপাতাল। ১৪০০ বছর আগে ইসলামে যে মানব সেবার কথা বলা হয়েছিল, তা অনুসরণ করেই সেবাকার্য করা হবে।”
আরও পড়ুন: যে কোনও পরিস্থিতিতে সামরিক ভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত দেশ! বিজয় দিবসে হুঙ্কার জেনারেল অনিল চৌহানের
হাসপাতালের গঠন সম্পর্কে তিনি আরও জানান, গতানুগতিক নয়, বরং মসজিদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই হাসপাতালের নকশা তৈরি করা হবে। দেওয়ালে নানা ইসলামিক চিহ্ন ও নকশা করা হরফ থাকবে। ৩০০ শয্যার এই স্পেশালিটি হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে।
মসজিদ গঠনের পরবর্তী পরিকল্পনাও প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান কমিটির সভাপতি আখতার হুসেন। তিনি বলেন,”ধান্নিপুরে একটি হাসপাতাল তৈরির কথা চলছে। সেটিও মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল হবে। এছাড়াও আমরা নার্সিং ও প্যারামেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করতে পারি চিকিৎসায় সাহায্যের জন্য। এই হাসপাতালের জন্য ফৈজাবাদ থেকে চিকিৎসক নিয়ে আসা হবে। এছাড়াও জটিল অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমাদের এই কমিউনিটি কিচেন পার্শ্ববর্তী এলাকার গরিব মানুষদের দু’বেলা খাদ্য জোগানোর কাজ করবে।”
এই বিশাল পরিকল্পনার জন্য আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন,”আমরা কর্পোরেট সাহায্যের বিষয়ে প্রত্যাশ্যা করছি। ৮০ জি (আকর আইনে) অনুমোদন মিললে বহু মানুষ আমাদের আর্থিক সাহায্য করবে। এরপর আমরা এফসিআরএ (FCRA)-তে আবেদন জানিয়ে বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় মুসলিমদের থেকেও সাহায্যের আবেদন জানাতে পারি।”
১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে একদল মানুষ। তাঁদের দাবি ছিল, ওই “পবিত্রভূমি”তে অতীতে রাম মন্দির ছিল। এবং ওখানেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। দীর্ঘ আইনি লড়াই চলার পর ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) ঐতিহাসিক রায়ে বিশ্বাসের উপর ভরসা রেখে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির নির্মাণ এবং অন্যত্র মসজিদ নির্মাণের জন্য সরকারকে পাঁচ একর জমি বন্টনের নির্দেশ দেয়। প্রাথমিকভাবে সরকারের দেওয়া জমিতে মসজিদ নির্মাণ করা যায় না, এই কথা বলে বিরোধিতা করেছিল বেশ কয়েকটি মুসলিম সংগঠন। তবে শেষ পর্যন্ত সেই পাঁচ একর জমিতেই ভিত্তি প্রস্থর স্থাপিত হতে চলেছে মসজিদের।
আরও পড়ুন: জোরাল হচ্ছে কৃষক-শক্তি, আন্দোলনকারীদের পাশে ‘আত্মঘাতী’ অন্নদাতাদের পরিবার