জোরাল হচ্ছে কৃষক-শক্তি, আন্দোলনকারীদের পাশে ‘আত্মঘাতী’ অন্নদাতাদের পরিবার
পঞ্জাবের বিভিন্ন কৃষক পরিবার থেকে প্রায় ২ হাজার মহিলা এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। তাঁরা কেউ ছেলেকে হারিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন স্বামীকে। কেউ আবার চোখের সামনে বাবাকে শেষ হয়ে যেতে দেখেছেন অভাবে।
নয়া দিল্লি: ক্রমেই জোরাল হচ্ছে কৃষক আন্দোলনের (Farmers Protest) শক্তি। এবার আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াল কৃষক পরিবার। মূলত যে সমস্ত কৃষক বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হয়ে নিজেদের শেষ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের মা, বিধবা স্ত্রী, সন্তানই এবার আন্দোলনের অলিন্দে। বুধবার থেকেই দিল্লির টিকরি সীমানায় আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে অবস্থানে তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, গোটা দেশের মুখে অন্ন তুলে দেন যে মানুষগুলো, তাঁদের আর কতদিন দুর্দশার অভিশাপে জর্জরিত হতে হবে।
পঞ্জাবের বিভিন্ন কৃষক পরিবার থেকে প্রায় ২ হাজার মহিলা এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। তাঁরা কেউ ছেলেকে হারিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন স্বামীকে। কেউ আবার চোখের সামনে বাবাকে শেষ হয়ে যেতে দেখেছেন অভাবে। পঞ্জাবের মালওয়া থেকে ১৭টি বাস এবং ১০টি ট্রাক্টরে চেপে এই মহিলারা দিল্লিতে আসেন। তাঁদের নিয়ে আসার সবরকম ব্যবস্থা করেছে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন (উগ্রাহন)।
আরও পড়ুন: ‘সরকারের অন্যায় সহ্য করতে না পেরে’ আন্দোলনেই আত্মঘাতী শিখ সন্ত
টিকরি সীমানা থেকে ৭ কিলোমিটারে উগ্রাহনদের যে শিবির সেখানেই রয়েছেন তাঁরা। কেন্দ্রের নয়া তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বাকি কৃষকদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, সরকারের কৃষি বিরোধী প্রতিটা পদক্ষেপ এক একটা কৃষক পরিবারকে শেষ করে দেয়। অভাব, হতাশা, ঋণের বোঝায় কৃষকরা বাধ্য হন নিজেদের শেষ করে দিতে। দিনের পর দিন একই ঘটনা ঘটে চলেছে। অথচ কেন্দ্রের তা নিয়ে কোনও হেলদোল নেই।
বছর ৩৪-এর গুরমেহর কউর। স্বামী যুগরাজ সিং মারা যান ২০০৭ সালে। গুরমেহর জানান, আর্থিক অনটনে সবসময় হতাশায় ডুবে থাকতেন স্বামী। একদিন নিজেকে শেষই করে দিলেন। আর তিনি ছোট্ট দুই বাচ্চা নিয়ে অথৈ জলে। ঠিকমতো দু’বেলা খাবার জুটত না। বাধ্য হয়ে এক ছেলেকে বাবার কাছে, আরেকজনকে বোনের কাছে রেখে আসেন।
এরপরই শুরু হয় গুরমেহরের প্রকৃত লড়াই। স্বামীর সামান্য জমি ছিল। এখন সেই জমি লিজ দিয়ে মাসে মেরে কেটে হাজার দু’য়েক টাকা হাতে পান। তাতেই পেট চালাতে হয়। গুরমেহরের মতোই অবস্থা পরমবীর কউর, বলজিৎ কউরদেরও। তাঁরাও স্বামী, সন্তানকে হারিয়ে টিকরির কৃষক আন্দোলনে। বক্তব্য একটাই, কেন্দ্রকে এবার কৃষকদের কথা ভাবতেই হবে। সংশোধন নয়, কৃষি আইন প্রত্যাহারই একমাত্র দাবি।
আরও পড়ুন: সোয়েটার, মাফলারে মুড়বে বাংলা, আগামিকাল থেকেই নামবে পারদ
উল্লেখ্য ১৬ ডিসেম্বর নিজেই নিজেকে গুলি করে আত্মঘাতী হন শিখ সন্ত বাবা রাম সিং। সিঙ্ঘু সীমানায় কৃষকদের সঙ্গে আন্দোলনে বসেছিলেন তিনি। ৬৫ বছর বয়সি হরিয়ানার এই শিখ সন্ত আত্মহত্যা করার আগে লিখে যান, “অধিকার জন্য কৃষকদের যেভাবে লড়াই করতে হচ্ছে তা অত্যন্ত যন্ত্রণার। সরকারের এই অন্যায় আমি মানতে পারছি না, খুব দুঃখ হচ্ছে। অন্যায় করা যেমন অপরাধ, অন্যায় সহ্য করাও অপরাধ। নিজের জীবন দিয়ে আমি আমার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” অধিকার বুঝে নেওয়ার প্রখর দাবিতে কৃষকদের এই আন্দোলন বৃহস্পতিবার ২২ দিনে পড়ল। এই আন্দোলনের গতিপথ জানান দিচ্ছে, ক্রমেই জোরাল হচ্ছে কাস্তের শান।