ভূবনেশ্বর: ফের ঘূর্ণিঝড়ের (Cyclone) ছায়া ওড়িশা(Odisha)-র উপর। গুলাবের (Cyclone Gulab) ধাক্কা কাটেনি এখনও, এরমধ্যে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া দফতর। বৃহস্পতিবারই আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, উত্তর আন্দামান সাগরের উপর একটি নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে, যার জেরে ভারী বৃষ্টিপাত, এমনকি ঘূর্ণিঝড়ের মুখেও পড়তে পারে উপকূলবর্তী এলাকাগুলি।
আবহাওয়া দফতরের প্রকাশিত বুলেটিনে জানানো হয়েছে, আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। নিম্নচাপটি তৈরি হওয়ার পর তা ধীরে ধীরে উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়ে দক্ষিণ ওড়িশা ও অন্ধ্র প্রদেশের উত্তর ভাগে পৌঁছবে আগামী ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে।
যেহেতু অক্টোবর মাসকেই “ঘূর্ণিঝড়ের মাস” হিসাবে গণ্য করা হয় ওড়িশায়, সেই কারণে ইতিমধ্যেই আতঙ্কে রয়েছেন ওড়িশাবাসীরা। এর আগেও একাধিক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় অক্টোবর মাসেই ওড়িশায় আছড়ে পড়েছিল, যেমন ১৯৯৯ সালের ২৯ অক্টোবর পারাদ্বীপে আছড়ে পড়েছিল সুপার সাইক্লোন, যার জেরে প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়াও ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অক্টোবর মাসেই ঘূর্ণিঝড় ফইলান, হুদহুদ ও তিতলি আছড়ে পড়েছিল ওড়িশায়।
সেপ্টেম্বর মাসেই অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িশা উপকূলের মাঝে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় গুলাব। ওড়িশার দক্ষিণ ভাগের একাধিক জেলায় ব্যপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছিল। ওড়িশার আবহাওয়া দফতরের প্রাক্তন প্রধান শরৎ সাহু জানান, বর্তমানে আবহাওয়ার হালহকিকত দেখে ঘূর্ণিঝড়ের ইঙ্গিত বলে মনে করা হলেও এত দ্রুত কিছু বলা ঠিক হবে না। আগামী ১৩ অক্টোবরের মধ্যে সঠিকভাবে জানা যাবে যে ফের ঘূর্ণিঝড় আসছে কিনা।
তিনি বলেন, “ওড়িশায় সাধারণত দুটি ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম রয়েছে। একটি প্রাক বর্ষা (এপ্রিল, মে ও জুন মাসে) এবং বর্ষা পরবর্তী (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর অবধি)। অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ই বর্ষাকালের পরেই আছড়ে পড়েছে।” আবহাওয়া দফতরের প্রাক্তন আধিকারিক জানান, ১৮৯১ সাল থেকে ২০০ সালের মধ্যেই ওড়িশায় ৯৮টি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে। এরপরই রয়েছে অন্ধ্র প্রদেশ, ওই সময়কালের মধ্য়ে সেখানে ৭৯টি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৬৯টি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের বর্তমান ডিরেক্টর এইচআর বিশ্বাসও বলেন, “এত তাড়াতাড়ি ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়। আপাতত নিম্নচাপের পূর্বাভাসই দেওয়া সম্ভব।” ইতিমধ্যেই স্পেশাল রিলিফ কমিশনার প্রতিটি জেলার জেলাশাসকদের চিঠি লিখে আবহাওয়া পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখতে ও আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে।
আপাতত আগামিকাল অবধি আবহাওয়া দফতর ওড়িশার একাধিক জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। সুন্দরগঢ়, বারগঢ়, সম্বলপুর, দেওঘর, ময়ুভঞ্জ, কেওনঝড় ও বালাসোরে অতি ভারী বৃষ্টির জন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। মলকানগিরি, কোরাপুট, রায়গঢ়, কালাহাণ্ডি, গজপতি ও গঞ্জম জেলাতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে।