বছর শেষে মহাকাশে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ISRO-র, আমেরিকা-রাশিয়া-চিনের সামনে মান রক্ষা করতে পারবে?
ISRO: এই পরীক্ষায় ইসরো পাস করলে মহাকাশ বিজ্ঞানে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসাবে এক মাইলস্টোন ছোঁবে ভারত। আমেরিকা-রাশিয়া-চিনের এলিট ক্লাবে চতুর্থ সদস্য হয়ে ঢুকে পড়বে ভারত।
শ্রীহরিকোটা: বছর শেষে ছুটির মুডে সকলে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা কিন্তু এই মুহূর্তে নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন। আজ, ৩০ ডিসেম্বর তাঁদের বড় পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষায় ইসরো পাস করলে মহাকাশ বিজ্ঞানে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসাবে এক মাইলস্টোন ছোঁবে ভারত। আমেরিকা-রাশিয়া-চিনের এলিট ক্লাবে চতুর্থ সদস্য হয়ে ঢুকে পড়বে ভারত।
পরীক্ষাটা হল স্পেস ডকিং অ্যান্ড আনডকিং। মহাকাশে দুটো অর্ধগোলাকৃতি জিনিস মুখোমুখি এসে জুড়ে যাচ্ছে। এইটাই হল স্পেস ডকিং। জিনিস দুটো আবার যখন আলাদা হয়ে যাবে তখন তাকে বলা হবে আন-ডকিং। মহাকাশ স্টেশনে যখন কোনও মহাকাশযান পৌঁছয়, তখন স্পেস শিপ আর স্পেস স্টেশনের দরজা এভাবেই খাপে খাপ আটকে যায়। সেটা ডকিং। আবার যখন মহাকাশযান স্পেস স্টেশন ছেড়ে পৃথিবীর দিকে রওনা দেয়, তখন হয় আনডকিং। ইসরো এই পরীক্ষাটাই করতে চলেছে।
এতদিন এ প্রযুক্তি কেবল আমেরিকা-রাশিয়া-চিনের হাতে ছিল। ইসরোর বিজ্ঞানীরাও ভারতের নিজস্ব টেকনোলজি তৈরি করেছেন। নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভারতীয় ডকিং সিস্টেম’। ইসরো এর পেটেন্টও নিয়েছে। তারা জানিয়েছে ভারতীয় প্রযুক্তি নাসার সমমানের, কিন্তু খরচ অনেক কম।
এবার কেন এই পেটেন্ট নেওয়ার বিষয়টা কেন আসছে, তা জানা যাক। সবটাই খুব খুব কঠিন একটা কাজ। ৩০ তারিখ মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছে ইসরোর PSLV-C60 রকেট। সে সঙ্গে নিয়ে যাবে ইসরোরই তৈরি করা দুটো কৃত্রিম উপগ্রহ, নাম চেজার এবং টার্গেট। মাটি থেকে ৪৭০ কিলোমিটার ওপরে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে এই দুটোকেই প্রথমে জোড়া দেবেন, পরে আবার আলাদা করবেন আমাদের এই মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
কাজটা কঠিন কারণ চেজার ও টার্গেট লোয়ার আর্থ অরবিটে থাকায় যখন তারা জুড়বে, তখন তাদের গতি থাকবে ঘণ্টায় ২৯ হাজার কিলোমিটার। যা কিনা বিমানের গতির চেয়ে তিরিশ গুণ বেশি। জোড়ার আগের মুহূর্তে বিশেষ প্রযুক্তিতে তাদের গতি ঘণ্টায় ৩৬ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হবে। মাটিতে দাঁড়িয়ে এই গতিতেও অবশ্য জোড়াজুড়ির কাজটা সোজা নয়। যে দুটো উপগ্রহকে জোড়া হবে তাদের ওজন ২২০ কেজি। এই পরীক্ষা সফল হলে ভবিষ্যতে আরও বেশি ওজনের জিনিসের ডকিং-আনডকিং করা হবে।
এই পরীক্ষার কারণটা কী জানেন? ভারত নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরি করতে চলেছে। কিন্তু পৃথিবীতে সবটা তৈরি করে মহাকাশে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। রকেটে চাপিয়ে ধাপে ধাপে জিনিস নিয়ে যেতে হবে। তারপর মহাকাশেই সেগুলোকে জুড়ে জুড়ে তৈরি করতে হবে মহাকাশ স্টেশন। তারই মহড়া ৩০ ডিসেম্বরের স্পেস মিশন। যার নাম দেওয়া হয়েছে স্পাডেক্স, স্পেস ডকিং এক্সপেরিমেন্ট মিশন। এবারের অভিযানের চরিত্র কিছুটা আলাদা হলেও আশা করা যায়, সব চ্যালেঞ্জ সামলে অন্যান্যবারের মতো এবারও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে ইসরো।