বিশ্ব মঞ্চে কীভাবে বাড়ছে ভারতের শক্তি, TV9-এর WITT সামিটে বলবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

Feb 21, 2024 | 5:50 PM

TV9's WITT Summit: শীর্ষ সম্মেলনের থিম ভারত: পরবর্তী বড় লাফ দিতে প্রস্তুত। TV9 নেটওয়ার্কের বার্ষিক কনক্লেভ, হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে গ্লোবাল সামিটের দ্বিতীয় সংস্করণে প্রধান বক্তা হিসাবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কীভাবে এই পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতকে এক প্রধান শক্তিতে পরিণত করেছেন তিনি?

বিশ্ব মঞ্চে কীভাবে বাড়ছে ভারতের শক্তি, TV9-এর WITT সামিটে বলবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী
বিশ্বে ভারতকে বিশেষ স্থানে তুলে নিয়ে গিয়েছেন রাষ্ট্রনেতা মোদী
Image Credit source: PTI

Follow Us

কবিতা পন্থ, নয়া দিল্লি: ২৫ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি, নয়া দিল্লিতে হতে চলেছে TV9 নেটওয়ার্কের বার্ষিক কনক্লেভ, হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে গ্লোবাল সামিটের দ্বিতীয় সংস্করণ। ‘ভারত: পরবর্তী বড় লাফ দিতে প্রস্তুত’, এটাই এবারের সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয়। এই সম্মেলনের মূল ভাবনার বিষয়ে টিভি৯ নেটওয়ার্কের এমডি তথা সিইও, বরুণ দাস বলেছেন, শুধু আমরাই নই, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারত যে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা দেখিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্বই আজ ভারতের বৃদ্ধির গল্পে মোহিত।” ২৬ ফেব্রুয়ারি নিউজ৯ গ্লোবাল সামিটে বক্তৃতা দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আসলে, নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ নীতির পাঁচ স্তম্ভ হল – সম্মান, সংলাপ, সমৃদ্ধি, সুরক্ষা এবং সংস্কৃতি ও সভ্যতা। এই পাঁচ স্তম্ভের মাধ্যমে ভারতের সাংস্কৃতিক কূটনীতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন এবং দেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি বদলে দিচ্ছেন মোদী। ২০১৪-য় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই, বিশ্বে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধিতে, দেশের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি, রন্ধনপ্রণালী, দর্শন ইত্যাদিকে এক সফট পাওয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে মোদী সরকার।

বিশ্বে ভারতকে বিশেষ স্থানে তুলে নিয়ে গিয়েছেন রাষ্ট্রনেতা মোদী

ভারতকে বিশ্বের এক প্রধান শক্তি হিসেবে দেখেন মোদী। আর এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্বনেতা এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়েছেন। কীভাবে তিনি আজকের এই বিশ্বনেতা হয়ে উঠলেন? এর পিছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বৈশ্বিক অর্থনীতির বৃদ্ধিকে উৎসাহ দান, মানব সম্পদের উন্নয়ন এবং দুর্নীতি বিরোধী এবং সামাজিক একীকরণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রতি তার প্রতিশ্রুতিই তাঁকে এই জায়গায় এনে দিয়েছে।

তাঁর শাসনকালে, তিনি দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকগুলিতে অংশ নিয়েছেন। অর্থনৈতিক সম্পর্কের উপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়নে ভারতের নরম শক্তিগুলিকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছেন। এর আগে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা ছিল শুধুমাত্র নন-অ্যালাইনমেন্ট মুভমেন্টের এক সদস্য। প্রধানমন্ত্রী মোদী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই অবস্থান পাল্টে, বিশ্বের প্রধান এবং মধ্যম শক্তির দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদার করেছেন। আর এর ফলে বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে আজকের ভারত।

পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ভারতের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। আরব উপসাগরীয় অঞ্চল এখন ভারতের ‘বর্ধিত প্রতিবেশী’ নীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদী আবু ধাবিতে UPI এবং RuPay কার্ড পরিষেবা চালু করেছেন। নেপাল, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, মরিশাস এবং শ্রীলঙ্কার পরে বিশ্বের সপ্তম দেশ হিসেবে ভারতের ইউপিআই পেমেন্ট পরিষেবা গ্রহণ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় কূটনীতির জেরেই পশ্চিমা বিশ্ব এখন ভারতকে বিশ্বের একটি প্রধান শক্তি হিসাবে বিবেচনা করছে। আর প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে পরিণত হয়েছেন এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মধ্যস্থতাকারীতে, এক বিশ্বনেতায়। গোটা বিশ্বে আজ মোদীর বার্তা খুব স্পষ্ট, ভারত শান্তি চায়। ভারত কোনও দেশকে হুমকি দেয় না। কিন্তু, বিশ্বশক্তি হিসাবে তার উত্থানও আটকানো যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী মোদী তুলে ধরেছেন ভারতের ‘সফট পাওয়ার’

ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাধারণত হার্ড পাওয়ার, অর্থাৎ সামরিক শক্তির মতো কঠোর শক্তিরই জয়জয়কার হয়ে থাকে। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী মোদী যেভাবে ভারতীয় সাংস্কৃতিক উপাদানগুলিকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছেন, তাতে সকলকেই অবাক করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে, গত ১০ বছরে তিনি কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের অন্তর্নিহিত মূল্যবোধ, রীতিনীতি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলিকে কাজে লাগিয়েছেন। মোদী সরকারের এই সক্রিয়ভাবে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রচারে, বিশ্বব্যাপী ভারতীয়দের সম্পর্কে এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। বাজরাকে জনপ্রিয় করার জন্য মোদীর উদ্যোগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, ২০২৩ সালকে আন্তর্জাতিক বাজরা বছর হিসেবে পালন করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। গত দশ বছরে, সংকটাপন্ন দেশগুলিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। কোভিডের সময় এই দষ্টিভঙ্গি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। ১০০টিরও বেশি দেশে টিকা পাঠিয়ে নরম শক্তি প্রদর্শন করেছিল ভারত।

প্রকৃত অর্থে বিশ্বগুরু

মোদীর আমলে ভারতের বিদেশ নীতির লক্ষ্য, দেশকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করা এবং ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে, বহুমুখী বিশ্বের এক প্রধান শক্তিতে পরিণত করা। এর আগে জি২০-র মতো আন্তর্জাতিক ফোরামগুলিতে বিশ্বের পিছিয়ে থাকা দেশগুলির কথা শোনাই যেত না। কোনও আলোচনাই হত না। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময়, গ্লোবাল সাউথকে মূল আলোচনায় তুলে এনেছিল ভারত। এর ফলে, বিশ্বের এক প্রধান শক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ভারতের অবস্থান আরও মজবুত হয়েছে।

ভারতের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তান এবং চিন। মোদী সরকার যেভাবে কড়া হাতে এই দুই দেশের সঙ্গে ভারতের কুটনৈতিক সম্পর্ক সামলেছে, তা এই সরকারের আরও এক সাফল্য। ২০২০ সালে, চিন সীমান্তে ভারত ও তিন সেনার অচলাবস্থা চলাকালীন, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নিজেদের জমি ধরে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মোদী। ভারতীয় সেনা যেমন এক পা এগোয়নি, তেমন এক পাও পিছিয়ে আসেনি। একসময়, প্রাথমিকভাবে দখল করা এলাকাগুলি ছাড়তে বাধ্য হয় চিন। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়া বন্ধ করলে, তবেই আলোচনায় বসা হবে। এর আগে, আলোচনার পর আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে পাক মদতে আরও শক্তিশালী হয়েছে জঙ্গিরা। সীমান্তে যুদ্ধবিরতিও ছিল নিয়মিত ঘটনা।

আসলে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারত এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগরে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা রক্ষায় গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত। চিনের মোকাবিলায় অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস বা আসিয়ান গোষ্ঠীর দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে। ক্রমে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রগুলির জন্য প্রাথমিক নিরাপত্তা প্রদানকারী দেশ হয়ে উঠছে ভারত। জাপানের সঙ্গে ভারতের শক্তিশালী বন্ধন এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য তৈরি করছে। নইলে পুরোটাই চলে যেত চিনের গ্রাসে। ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের অধীনে এই গোষ্ঠীতে আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তি এবং সৌদি আরব, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে একটি নতুন অর্থনৈতিক রেল ও শিপিং করিডর প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি, একটি প্রভাবশালী বিশ্বনেতায় পরিণত করেছে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। এই কূটনৈতিক সাফল্য তাঁকে বিশ্বে ‘গ্লোবাল সাউথে’র প্রধান কণ্ঠস্বর হিসেবেও তুলে ধরেছে।

Next Article