কলকাতা: শুধুমাত্র ভবানীপুর (Bhabanipur) আসনের নির্বাচনের জন্য কেন চিঠি লিখলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব (Chief Secretary)? কেন ভোটে লড়ে জয়ী হওয়ার পরও আসন ছাড়লেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (Sovandeb Chattarjee)? হাইকোর্টে এমনই একাধিক অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হল রাজ্যকে। পাশাপাশি, আদালতের তরফে নির্বাচন কমিশনকে যে হলফনামা দিতে বলা হয়েছিল, তাও এ দিন গৃহীত হয়নি। সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে মুখ্যসচিবের সুপারিশের উল্লেখ নির্বাচন কমিশনকে (Election Commission) তার প্রেস বিবৃতি থেকে বাদ দিতে হবে, কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) এই আবেদনই জানিয়েছিলেন মামলাকারী। আর আজ সেই মামলার শুনানিতে একের পর এক প্রশ্ন তুললেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল (Rajesh Bindal)। আর এক সপ্তাহও বাকি নেই ভবানীপুর নির্বাচনের (Bhabanipur By-Election)। তার আগেই আদালতের এই প্রশ্নে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে অস্বস্তি।
গুরুত্বপূর্ণ এই মামলায় আজ একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল। মুখ্যসচিবের চিঠি দেওয়ার এক্তিয়ার নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। উপ নির্বাচনের দিন ঘোষণার সময় নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, সাংবিধানিক সংকট তৈরি হতে পারে বলেই দ্রুত উপ-নির্বাচন করা হচ্ছে ভবানীপুরে। রাজ্যের মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী এই মর্মেই আবেদন জানিয়েছিলেন। মুখ্যসচিব প্রশাসনিক পদে থেকে নির্বাচনের জন্য এ ভাবে চিঠি লিখতে পারেন কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি।
শুধু তাই নয়, কেন শুধু ভবানীপুরের ভোটের জন্যই আবেদন জানানো হল? বাকি কেন্দ্রে নির্বাচন বাকি থাকা সত্ত্বেও কেন সে সব কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করা হল না, সেই প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি।
ভবানীপুরে কেন দ্বিতীয়বার নির্বাচন করার প্রয়োজন পড়ল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল। এই আসন থেকে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। পরে এই আসন ছেড়ে দেন তিনি। আর সেই আসন থেকেই লড়ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গেই বিচারপতির প্রশ্ন, ‘কেন আসন ছাড়লেব শোভনদেব?’ তিনি প্রশ্ন করেন একটি আসনে ভোটের জন্য কত টাকা খরচ হয়? উত্তরে কমিশন জানায়, ৩ কোটি। তা শুনে বিচারপতি বলেন, ‘একটা আসনের জন্য কতবার টাকা খরচ হবে?’
আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘আজ বিচারপতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। একজন ভোটে জিতে জন প্রতিনিধি হওয়ার পর তাঁকে আসন ছাড়তে কেন বাধ্য করা হল? এ ভাবে মানুষের টাকা খরচ হচ্ছে। যেখানে উপ -নির্বাচন বাকি তেমন অন্য কোনও আসন থেকেও লড়তে পারতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘কেন সাংবিধানিক সঙ্কট নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যসচিব? মুখ্যসচিবের ভূমিকা ঠিক কী?’ জবাবে কমিশনের তরফে উল্লেখ করা হয়, রাজ্যপালও এর আগে কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। শুনেই বিচারপতি রাজেশ বিন্দল প্রশ্ন করেন, ‘এবার কি রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যসচিবের তুলনা করবেন?’ বিচারপতি আরও প্রশ্ন করেন, ‘কেন আপনারা একটাই কেন্দ্রকে বেছে নিলেন? বাকিগুলিতে কি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হত না?
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা একটি উপনির্বাচনে কী ভাবে এল সে প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। আজ সেই হলফনামা জমা দেয় কমিশন। কিন্তু তাতে অনেকগুলি ভুল আছে বলে জানান মামলাকারীর আইনজীবী।
বিচারপতি বলেন, ‘এটা কি একটা হলফনামা? কে এমন হলফনামা তৈরি করেছে? সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের হলফনামা এরকম?’ জবাবে নির্বাচন কমিশনের তরফে আইনজীবী দীপায়ন চৌধুরী ও আইনজীবী সিদ্ধান্ত কুমার জানান, খুব তাড়াহুড়ো করে বানাতে হয়েছে এই হলফনামা। আবার হলফনামা তৈরি করে দেওয়ার কথা জানান তাঁরা। কিন্তু আদালত তা গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। বিচারপতি জানান, এই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে, তাই আর কিছু দেখা হবে না।
ভবানীপুরের বাম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস বলেন, আদালের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। ভবানীপুরে নির্বাচনের কোনও প্রয়োজনই ছিল না। অন্য কোনও আসন থেকে লড়তে পারতেন মমতা।
মামলাকারী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ভবানীপুরে নির্বাচন এখনই না করানো হলে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে মুখ্যসচিবের সুপারিশের যে উল্লেখ নির্বাচন কমিশনের প্রেস বিবৃতিতে রয়েছে, তা বাদ দিতে হবে। মামলাকারীর এই আবেদন নির্বাচন কমিশন মানবে কি না হাইকোর্টের কাছে সে ব্যাপারে শুক্রবার হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। মামলাকারীর আইনজীবীর বক্তব্য, বেছে বেছে একটি বিধানসভার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবের চিঠি লেখা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সমান। তাই, হয় নির্বাচন কমিশনের বিবৃতির তালিকা থেকে ছ’ ও সাত নম্বর অনুচ্ছেদ বাদ দিতে হবে। অথবা হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। আপাতত এই মামলায় কী রায় দেয় আদালত, সে দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।