
কলকাতা: ওড়িশার কটক জেলে এক চিট ফান্ডের এজেন্টের আত্মহত্যার অভিযোগ ঘিরে বড়সড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যে ভিবজিওর নামে চিটফান্ডের হয়ে ওই এজেন্ট কাজ করতেন, সেই সংস্থার বিরুদ্ধে ওড়িশা রাজ্যের ইকোনোমিক অফেন্স উইং তদন্ত চালিয়েছে। সম্প্রতি ওড়িশা আদালত পবিত্র সাহু (৪৪) নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১০ বছরের জেলের সাজা ঘোষণা করেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই বিষয়টি নিয়ে যেসব রাজ্যে চিটফান্ডকে কেন্দ্র করে বড়সড় আর্থিক দুর্নীতি ঘটেছিল সেসব জায়গায় একটা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রাথমিকভাবে জেল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।
গোটা দেশে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি একদশক আগে সামনে এলেও এই প্রথম কোন আদালত কোন এজেন্টকে সাজা দিল বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। আর প্রতিবেশী রাজ্যে এক এজেন্টের চিটফান্ড কাণ্ডে সাজার ঘোষণায় আরও আতঙ্ক ছড়িয়েছে এ রাজ্য। কারণ যে ভিবজিওর সংস্থার হয়ে ওই এজেন্ট ওড়িশায় কাজ করতেন, সেই সংস্থার মালিক তথা ডিরেক্টর রাজা ভদ্র সহ অন্য অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে এখনো বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ওড়িশার আদালত সেই সংস্থার বিরুদ্ধে মামলায় ডিরেক্টার বা কোন পদে না থাকা স্রেফ একজন এজেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করে দশ বছর সাজা দিয়ে দেওয়ায় বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এর ফল কি হতে পারে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী, তথা সিপিএম রাজ্য সভার সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, “একদিকে জেল হেফাজতে মৃত্যু আর অন্যদিকে চিটফান্ডের ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না করে শুধু একজন এজেন্টকে সাজা দিয়ে দেওয়া — এই দুটি বিষয়ে আমরা নজরে রাখছি। আমরা ওড়িশা আদালতে গিয়েই এই ব্যাপারে মামলা দায়ের করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা বা চিটফান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০১৫ সালে ওড়িশা রাজ্য যে নিজস্ব আইন চালু করেছিল, প্রায় একইভাবে এই রাজ্যও সেই নতুন আইন তৈরি হয়। আর ভিবজিওর সংস্থার বিরুদ্ধে একদিকে যেমন ওড়িশা রাজ্যের নিজস্ব আইনে তদন্ত চলে ও বিচার হয়, এ রাজ্যের আর্থিক দুর্নীতি দমন শাখা তদন্ত চালাচ্ছে।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরিন্দম দাস বলেন, “আমরা এ রাজ্যে ছাড়াও ওড়িশা, ঝাড়খন্ড গিয়েও এইসব চিটফান্ডের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাচ্ছি। ওড়িশায় যে আইনে সাজা দেওয়া হয়েছে সেই আইনে এ রাজ্য সাজা দেওয়ার সংস্থান রয়েছে।”
কিন্তু ডিরেক্টর বা অন্যান্য পরাধীকারীদের ছেড়ে একজন এজেন্টকে সাজা দেওয়ার ঘটনাটা সে রাজ্যের পুলিশের একটা নতুন অভিসন্ধি কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই আমরা বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে আইনি পথে বিষয়টি দেখার কথা ভাবছেন।