AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

বাংলায় নতুন ‘অবতারে’ করোনা, কয়েকগুণ ছোঁয়াচে স্ট্রেনে রয়েছে টিকাকে ফাঁকি দেওয়ার রসদ

এই মিউটেশন এর আগে ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেনে দেখা গিয়েছে। এবং সেই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রায় ব্যর্থ হয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যা কোভিশিল্ড নামে ভারতে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলায় নতুন 'অবতারে' করোনা, কয়েকগুণ ছোঁয়াচে স্ট্রেনে রয়েছে টিকাকে ফাঁকি দেওয়ার রসদ
অলংকরণ- অভীক দেবনাথ
| Updated on: Apr 20, 2021 | 10:29 PM
Share

কলকাতা: দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে সংক্রমণ রীতিমতো সুনামির আকার ধারণ করেছে। তার মধ্যে উদ্বেগ আরও কয়েক গুণ বাড়াল করোনার নতুন স্ট্রেন। এই ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ আবার মিলেছে পশ্চিমবঙ্গেই। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মিউটেশনের ফলে সাতটি জিনে ১৮ টি পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। যার ফলে এই ভাইরাস আরও শক্তিশালী আকার ধারণ করে ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কেও বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ভাইরাসের অভিযোজিত এই রূপ।

গত বছরের শুরুর দিকে চিন থেকে আগত এই ভাইরাস ভারতে প্রবেশের পর থেকে নানাভাবে নিজেকে পরিবর্তন করে আরও সংক্রামক হয়ে উঠেছে। অবশেষে এ বার পশ্চিমবঙ্গেও নতুন ‘অবতারে’ ধরা দিয়েছে করোনা। কল্যাণীর এইআইবিজিম নামক কেন্দ্রীয় সংস্থা এই ভাইরাসের নতুন জিনোম সিকুয়েন্সের সন্ধান দিয়েছে। এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের নাম দেওয়া হয়েছে ‘B.1.618’।

এ পর্যন্ত ৯টি দেশে নতুন ভ্যারিয়েন্টের ২১৭টি সিকোয়েন্সের খোঁজ মিলেছে, যার ৫৯ শতাংশ ভারতের। এর সিংহভাগই আবার বাংলার। বিলিতি স্ট্রেনের খবর সামনে আসার পর দেশে জিনোম সিকোয়েন্স বাড়াতে কনসর্টিয়াম গড়া হয়। দেশেরই নিজস্ব কোনও ভ্যারিয়েন্ট বা স্ট্রেন দুশ্চিন্তা তৈরি করছে কি না, তা দেখাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। কনসর্টিয়ামের এই কাজ এগোতেই ডবল মিউট্যান্টের উপস্থিতি নজরে আসে।

তথ্য বলছে, গত বছর ২৫ অক্টোবর প্রথম এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তখনও পর্যন্ত সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে তেমন দুশ্চিন্তা ছিল না। কিন্তু মার্চে জিনোম সিকোয়েন্স করতে গিয়ে দেখা যায়, কোভিড নমুনার মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি ক্রমশ বাড়ছে।

ইতিমধ্যেই ভারতে আরেকটি ডবল মিউট্যান্ট স্ট্রেনের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। যা নিয়ে হায়দরাবাদের সিসিএমবি গবেষণা করে দেখছে। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে তার রিপোর্ট আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরই জানা যাবে গত কয়েক সপ্তাহে যে ঝড়ের গতিতে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তার জন্য এই নতুন স্ট্রেন দায়ী কি না। এর মধ্যেই বঙ্গে করোনার নতুন প্রজাতি যে উদ্বেগ আরও বাড়াল, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, গতবারের তুলনায় এ বার সংক্রমণের গতি এই নতুন প্রজাতির ভাইরাসের কারণেই বৃদ্ধি পেয়ে থাকতে পারে। যদিও তার কোনও সুস্পষ্ট প্রমাণ এই মুহূর্তে বিজ্ঞানীদের কাছে নেই।

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার পরও আক্রান্ত বহু! প্রথম শ্রেণির লড়াকুরাই আজ বেসামাল

জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য বলছে, এই ভ্যারিয়েন্টে সাতটি জিনে অন্তত ১৮টি পরিবর্তন রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম, স্পাইক প্রোটিনেই চারটি পরিবর্তন। এর মধ্যে সবচেয়ে তাত্‍পর্যপূর্ণ E484K ও D614G। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের স্ট্রেনে E484K মিউটেশনের খোঁজ মিলেছিল। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, এই মিউটেশনের ফলে করোনাভাইরাস টিকাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা পেয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের সন্দেহ, সম্ভবত এই কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকায় অ্য়াস্ট্রাজেনেকা অর্থাত্‍ কোভিশিল্ডের টিকা কার্যকর হয়নি। এবং সেই মিউটেশনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রায় ব্যর্থ হয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। সেখানে এর কার্যকারিতার হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ।

ফলে বাংলাতেও E484K-এর উপস্থিতি কোভিশিল্ডের কার্যকারিতা কমে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। এ ছাড়া, স্পাইক জিনে জোড়া অ্যামাইনো অ্যাসিড ‘ডিলিশন’ও টিকাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা জুড়ে দিয়েছে করোনাভাইরাসের তূণে। আর রয়েছে D614G মিউটেশন। এতে করোনা আরও ছোঁয়াচে হয়ে ওঠার আশঙ্কা। ঘটনা হল, মানুষের শরীরে করোনা ঢোকে এই স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমেই। তাই স্পাইক জিনে এতগুলি পরিবর্তন যথেষ্টই উদ্বেগের। বিশেষ করে দ্বিতীয় ঢেউ যখন প্রতিদিনই সুনামির চেহারায় আছড়ে পড়ছে!

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, ‌‌‌‌‌”নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে টিকা কাজ করবে কি না বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণ এই ভ্যারিয়েন্টই কি না, তা স্পষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে এই টিকাকে ফাঁকি দেওয়ার, আরও বেশি সংক্রামক হয়ে ওঠার সব রসদই নতুন ভ্যারিয়েন্টের রয়েছে। তাই আরও বেশি গবেষণা প্রয়োজন।” জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই বলেন, ‌”করোনা বারবার মিউটেশন ঘটাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেখতে হবে, এর ফলে করোনা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে কি না। একটা বিষয় স্পষ্ট, ভারত বা পশ্চিমবঙ্গে যে স্ট্রেনগুলি ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেগুলি সবই অতি সংক্রামক। যে ভ্যাকসিন দু’টি দেওয়া হচ্ছে, তাদের কার্যকারিতার হার যথেষ্ট ভাল। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও টিকা কাজ করতে পারবে কি পারবে না, সেটা বলার সময় এখনও আসেনি।”

আরও পড়ুন: ‘যথেষ্ট প্রচার হয়েছে, এবার মানুষকে বিচার করতে দিন’, বললেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি