কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রীর গোয়া সফর মিটেছে আগেই। তারপর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন। কিন্তু ফের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের টুইটে প্রবল হয়ে উঠল রাজভবন-নবান্ন সংঘাত। গোয়ায় দলের প্রচারে গিয়ে রাজ্যপালকে ‘রাজভবনের রাজা’ বলে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই নিয়েই এ বার টুইট করলেন ধনখড়। তৃণমূল সুপ্রিমোর ভাষাপ্রয়োগে তিনি ‘অপমানিত’, একথা স্পষ্টই জানালেন টুইটে।
কী অভিযোগ রাজ্যপালের?
পরপর তিনটি টুইট করেছেন রাজ্যপাল। টুইটে রাজ্যপাল লিখেছেন, “বিস্মিত! গত ১৬ ডিসেম্বর গোয়া সফরে গিয়ে এ কী ধরনের শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ‘রাজভবনের এক রাজা’ এটা কী ধরনের শব্দবন্ধ! মুখ্য়মন্ত্রী কি জানেন না, রাজ্যপালের পদ একটি সাংবিধানিক পদ এবং এই দায়িত্ব একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব! ”
Functionaries @AITCofficial and Ministers @MamataOfficial have publicly used most foul vituperative language defaming & insulting Governor.
Undeterred by these would continue to earnestly work to secure governance as per constitution & law. Present scenario alarmingly worrisome. pic.twitter.com/FDPJyXyjAS
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) December 29, 2021
অন্য আরেকটি টুইটে ধনখড় লিখেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালকে নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য করেছেন তা অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ও অপমানজনক। এ ধরনের মন্তব্য করে ওঁ কেবল অপমানই করেননি সাংবিধানিক পদমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছেন। এই ধরনের মন্তব্য সংবিধান বিরোধী।” আরও একটি টুইটে প্রায় অনুরূপ বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল।
Neither “law unto oneself”nor ‘state within state’ governance @MamataOfficial can be constitutionally sanctified. CM continually in breach of “duty”under Article 167 & politicized bureaucracy under Article 166.
Governance needs massive uplift to be in accord with constitution.
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) December 29, 2021
প্রশ্ন কোথায়?
এই মুহূর্তে প্রশাসনিক কাজে গঙ্গাসাগরে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোয়ায় রাজনৈতিক কারণে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যে গোয়াসফর অনেক আগে সম্পন্ন হয়েছে, সেই গোয়াসফরকে কেন্দ্র করে কেন ফের টুইট-যুদ্ধে জড়ালেন রাজ্যপাল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
কিছুদিন আগেই হাওড়া পুরভোট নিয়েও সংঘাতে জড়িয়েছে রাজ্য-রাজ্যপাল। ফলস্বরূপ, থমকে গিয়েছে হাওড়া পুরভোট। শুধু তাই নয়, রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য নিয়োগ নিয়েও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন ধনখড়। খোদ মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ, দীর্ঘদিন ফাইল আটকে রেখে কাজ হয় না। পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, “রাজ্যপালের কাজ তিনি করবেন, আমার কাজ আমি করব।” তৃণমূলের তরফ থেকে বারবারই অভিযোগ করা হয়েছে রাজ্যপাল কোনওভাবেই রাজ্যের পক্ষে কাজ করেন না।
তৃণমূলের মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, রাজ্যপালের আচরণ পক্ষপাতদুষ্ট। তিনি বিজেপির পক্ষেই কথা বলেন। কিন্তু রাজ্যপালের থেকে এরকম আচরণ কাম্য নয়। কুণালের কথায়, “রাজ্যপালের কথা শুনলে মনে হয়, টুলের উপর দাঁড়িয়ে কোনও বিজেপি নেতা স্ট্রিট কর্ণারে বক্তৃতা দিচ্ছেন।” তাঁর আরও সংযোজন, “রাজ্যপালকে এত অসহিষ্ণু হলে চলে না। তাঁর আচরণ কোনওভাবেই রাজ্যপাল-সুলভ নয়।”
‘রাজ্যপাল আমাকে হোয়াটস্যাপেও এসব বলেন…’
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে বরাবরই সরব তৃণমূল। এ বার, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় স্পষ্টই অভিযোগ করেন রাজ্যপাল যা করছেন তা তাঁর সাংবিধানিক এক্তিয়ারের বাইরে। কোনও রাজ্যপালই এভাবে টুইট করতে পারেন না। সৌগত কথায়, “সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর নামে ওঁ আমায় হোয়াটস্যাপ করে অভিযোগ করেন। এসব বলেন। এগুলো ঠিক হচ্ছে না। এসব বন্ধ করতে হবে। এটা কী ধরনের আচরণ? রাজ্যপাল কি এভাবে টুইট করে কিছু অভিযোগ করতে পারেন?”
গোয়া সফরে কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী?
গত ১৬ ডিসেম্বর গোয়া সফরে গিয়ে জনসভায় সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করার পাশাপাশি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কেও নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “রাজভবনে একজন রাজা বসে রয়েছেন। তিনি কেবল বিজেপির হয়ে কথা বলেন। বিজেপির প্রেসিডেন্টের থেকেও বড়। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির থেকেও বড় তিনি! কেবল বড় বড় কথা বলেন! আর কিছু করেন না!”
তৃণমূল সুপ্রিমোর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই বুধবার টুইট করেছেন রাজ্যপাল। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ, এই ধরনের টুইট করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রায় মাস পেরতে চলা সেই গোয়া সফরের মন্তব্যকে আচমকা কেন টেনে আনলেন ধনখড় তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh on Mamata Banerjee: ‘পুরনির্বাচনের পাপ ধুতে গঙ্গাসাগরে গিয়েছেন ওঁ’