কলকাতা: হাঁসখালির ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য অনভিপ্রেত। এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন আইনজীবী। আদালত যাতে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে, সে ব্যাপারে আবেদন জানিয়েছেন আইনজীবী। গোটা বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। হাঁসখালিতে কিশোরীকে গণধর্ষণ, অতঃপর তাঁর মৃত্যু এবং তাতে প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার ছেলের নাম জড়ানো- গোটা বিষয়টিতে তপ্ত বাংলা। সোমবার এই ঘটনায় প্রথম প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পুলিশ এখনও বিষয়টাই জানতে পারেনি। এই যে বারবার দেখাচ্ছে, একটা বাচ্চা মেয়ে নাকি মারা গিয়েছে রেপড হয়ে। আপনি রেপড বলবেন? নাকি প্রেগন্যান্ট বলবেন? না লাভ অ্যাফেয়ার্স বলবেন? এটা ইনকোয়ারি করেছেন কি? আমি পুলিশকে বলেছি এটা।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও একটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “আমি যতটুকু খোঁজ পেয়েছি, মৃত্যু হয়েছে ৫ তারিখে, পুলিশ জেনেছে ১০ তারিখে। তাহলে বলুন, ৫ তারিখে যদি কারোর মৃত্যু হয়, আর তার মধ্যে যদি কোনওরকম কিন্তু থাকে, তাহলে ৫ তারিখেই অভিযোগ দায়ের হল না কেন? বডিটাকে পুড়িয়েও দিলেন!” মমতা সংযোজন করেছিলেন, “আমি অ্যাজ অ্যা লে ম্যান বলছি, সবটা না জেনেও, প্রমাণটা পাবে কোথা থেকে? ধর্ষণ না প্রেগন্যান্ট ছিল, নাকি অন্য কোনও কারণ ছিল নাকি কেউ দুটো চড় মেরেছে, শরীরটা খারাপ হয়েছে… লভ অ্যাফায়ার্স তো ছিলই। বাড়ির লোকেরা, পাড়ার সবাই জানত। এখন যদি কোনও ছেলেমেয়ে কেউ কারোর সঙ্গে প্রেম করে, সেটা আটকানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এটা ইউপি নয়।”
মুখ্যমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যে তীব্র নিন্দা করেছে বিরোধী শিবিরও। দিলীপ ঘোষও এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, “মাননীয়া সব ব্যাপারে হালকা করে নেন এর ফলে তার প্রশাসনও বুঝে গিয়েছে, তার কিছু করার দরকার নেই।” ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক হয়েছে আরও কয়েকজন। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই মেয়েটার দেহ দাহ করার দেওয়ার ক্ষেত্রে কি অভিযুক্তের বাবা অর্থাৎ প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার কোনও হাত ছিল না? তদন্ত কি এখানেই শেষ হয়ে যায়? দিলীপ ঘোষ বলেন, “যারা করছে তারা তাদের দলের সঙ্গে যুক্ত। এই ধরনের ঘটনা বন্ধ হবে বলে মনে হয় না। তবে বাংলার এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে সামান্য সমবেদনাটুকুও পাওয়া যাবে না, এমনটা আশা করা যায় না।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ভাষা এবং সহনশীলতা হারিয়েছেন। তার দলের শ্লোগান ছিল মা, মাটি, মানুষ। এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই ধরনের বক্তব্য কুরুচিকর।”