AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

KMC: ৫ বছরে বেতন ৫৬ লক্ষ, জমেছে কোটি কোটি টাকা, জালে কলকাতা পৌরনিগমের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার

KMC assistant engineer arrested: ১৯৯৭ সালে কলকাতা পৌরনিগমের সড়ক এবং মেকানিক্যাল বিভাগের অ্যাসফল্টাম বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন পার্থ। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে একই বিভাগে প্রভাব খাটিয়ে রয়ে যান তিনি। বাম ও তৃণমূল নেতাদের হাত তাঁর মাথায় ছিল বলে অভিযোগ। অ্যাসফল্টাম বিভাগে মূলত কোটি কোটি টাকার কাজ হয়। কলকাতা পৌরনিগমের অন্দরে ওই বিভাগকে রীতিমতো 'মৌমাছির মধু' বলে দাবি করা হয়।

KMC: ৫ বছরে বেতন ৫৬ লক্ষ, জমেছে কোটি কোটি টাকা, জালে কলকাতা পৌরনিগমের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার
ধৃত কলকাতা পৌরনিগমের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পার্থ চোঙদারImage Credit: TV9 Bangla
| Edited By: | Updated on: Nov 07, 2025 | 4:46 PM
Share

কলকাতা: পাঁচ বছরে বেতন পেয়েছেন ৫৬ লক্ষ টাকা। আর ওই পাঁচ বছরে সম্পত্তির পরিমাণ ৫ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। কোটি কোটি টাকা হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির অভিযোগে কলকাতা পৌরনিগমের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করল রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা। ধৃত অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের নাম পার্থ চোঙদার।

সূত্রের খবর, ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ‍্যে তাঁর যে আয় হয়েছে, তার থেকে পাঁচ কোটি টাকা বেশি সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গিয়েছে। ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পাঁচ বছরে বেতন হিসেবে পেয়েছেন ৫৬ লক্ষ টাকা। কিন্তু, ওই ৫ বছরে তাঁর হিসেব বর্হিভূত সম্পত্তি ৫ কোটি ৮৬ লক্ষ। ধৃতকে এদিন আদালতে তোলা হয়। সেখানে কলকাতা পৌরনগিমের এই অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের সম্পত্তির তথ্য তুলে ধরে সরকারি আইনজীবী বলেন, “এটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। দুর্নীতি দমনের অনেক মামলা করেছি। এই মামলা অনেক বড়। যেন হিমালয়।”

আদালতে দুর্নীতি দমন শাখা অভিযোগ করে, ফিক্সড ডিপোজিট থেকে কারেন্ট অ‍্যাকাউন্ট, গোল্ড বন্ড থেকে বিমা, সব ক্ষেত্রেই লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ করেছেন পার্থ চোঙদার। নিউটাউনের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ২৮ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। একাধিক বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে কোথাও ১০ লক্ষ আবার কোথাও ২০ থেকে ২৫ লক্ষ করে টাকা বিনিয়োগ করেছেন পার্থ।

পার্থর শ্বশুর-শাশুড়ি মালদার বাসিন্দা। তাঁদের নামেও পার্থ ঠিকানা ও নথি দিয়ে কলকাতায় পাঁচ থেকে ছ’টি অ্যাকাউন্ট খুলে জমা করেছেন ১ কোটি টাকা। বোলপুরে তাঁর ৩৬ লক্ষ টাকার বাংলো রয়েছে। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় ছ’টি ফ্ল‍্যাটে লগ্নি করেছেন। স্ত্রীর নামে রিয়েল এস্টেট সংস্থা খুলে তাতেও বিনিয়োগ করেছেন KMC-র এই ইঞ্জিনিয়ার। সরকারি কর্মী হয়েও তিনি সেই সংস্থার অংশীদার বলে আদালতে অভিযোগ করেছে দুর্নীতি দমন শাখা।

দুর্নীতি দমন শাখার আরও অভিযোগ, এই অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বিনিয়োগ করেছেন সোনাতেও। ব্যাঙ্কের লকারে ৭৩৪.৮৫ গ্রাম সোনা রয়েছে। ফ্রিজ করা হয়েছে অ‍্যাকাউন্ট। বাদ নেই বিদেশ যাত্রাও। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বেশ কয়েকবার বিদেশে গিয়েছেন পার্থ। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় থেকে এল, তা জানতেই হেফাজতে প্রয়োজন বলে এদিন আদালতে সওয়াল করেন দুর্নীতি দমন শাখার আইনজীবী।

১৯৯৭ সালে কলকাতা পৌরনিগমের সড়ক এবং মেকানিক্যালের অ্যাসফল্টাম বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন পার্থ। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে একই বিভাগে প্রভাব খাটিয়ে রয়ে যান তিনি। বাম ও তৃণমূল নেতাদের হাত তাঁর মাথায় ছিল বলে অভিযোগ। অ্যাসফল্টাম বিভাগে মূলত কোটি কোটি টাকার কাজ হয়। কলকাতা পৌরনিগমের অন্দরে ওই বিভাগকে রীতিমতো ‘মৌমাছির মধু’ বলে দাবি করা হয়। এখানে দীর্ঘ বছর ধরে কাজ করার জেরে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ছিল পার্থ চোঙদারের বিরুদ্ধে।

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে ২০১৯ সালে পৌরনিগমের বোর্ড ফিরহাদ হাকিমের হাতে আসে। ২০২০ সালে অ্যাসফল্টাম বিভাগ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ হয় কেএমসি। তদন্তে পার্থর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি এবং সম্পত্তি করার অভিযোগ ওঠে। এরপরই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। শুরু হয় বিভাগীয় তদন্ত। ভিজিলেন্সের নির্দেশ দেওয়া হয়। সাসপেনশন কাটিয়ে কলকাতা পৌরনিগমে পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন বিভাগে যোগদান করেন পার্থ। কিন্তু বিভাগীয় তদন্ত চলতেই থাকে। তদন্তের রিপোর্ট মাসখানেক আগে দুর্নীতি দমন শাখার হাতে পৌঁছয় কলকাতা পৌরসভার তরফে। গতকাল কলকাতা পৌরনিগমের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদমর্যাদার এই আধিকারিককে গ্রেফতার করা হয়। এখন বড় কোনও মাথা সামনে আসে কি না, সেটাই দেখার।