কলকাতা: ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে ক্রমেই জাল গুটিয়ে আনছে সিবিআই (CBI)। এ বার তদন্তে ফের কাঁকুড়গাছিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কাঁকুড়গাছির বিজেপি কর্মী অভিজিত্ সরকার খুনের ঘটনায় নিহতের বাড়িতে গেলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। পাশাপাশি, চার্জশিটে থাকা ৪ অভিযুক্তের বাড়িতেও সোমবার সকালেই হানা সিবিআইয়ের।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূ্ত্রে খবর, কাঁকুড়গাছির বিজেপি কর্মী (BJP Worker) হত্যা মামলায় ইতিমধ্যেই ২০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা করেছে সিবিআই। এরমধ্যে চার্জশিটে থাকা ৪ জনের বাড়িতে সোমবার সকালে তদন্তে যান সিবিআই কর্তারা। ওই চারজনেই নামই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জনের ঘর তালাবন্ধ ছিল।
এক অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারী অফিসাররা। যদিও মূল অভিযুক্ত ফেরার। অভিযুক্তের পরিবারের সঙ্গে কী কথা হল সে বিষয়ে যদিও মুখ খোলেননি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তদন্তের স্বার্থেই এই গোপনীয়তা বলে জানা গিয়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার শিয়ালদা আদালতে চার্জশিট জমা করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা। খুন, লুঠের ধারায় চার্জশিট জমা পড়েছে। তার আগে, সোমবারই অভিজিত সরকারের মা ও দাদাকে শিয়ালদা আদালতে নিয়ে যায় সিবিআই। অভিজিতের মায়ের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়।
ভোট গণনার পরের দিনই মৃত্যু হয় বেলেঘাটার বাসিন্দা বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের। তদন্তের স্বার্থে তাঁর দেহ সৎকার করা হয়নি। ১৩৬ দিন পর সৎকারের অনুমতি পায় পরিবার।
ভোটের দিন গলায় তার পেঁচানো উদ্ধার হয় অভিজিৎ সরকারের মৃতদেহ। তাঁর পরিবার প্রথম থেকেই দাবি তোলে, বিজেপি করার অপরাধে অভিজিৎকে খুন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে নিহতের পরিবার।
সম্প্রতি অভিজিৎ সরকারের এই মোবাইল ফোন নিয়ে সিবিআই দফতরে গিয়েছিলেন দাদা বিশ্বজিৎ। বিশ্বজিতের বক্তব্য, অভিজিৎ সম্ভবত আগেই বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি খুন হতে পারেন। সেই জন্যই নিজের মোবাইল ফোন লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে মনে করছেন বিশ্বজিৎ। সূত্রের খবর, মোবাইল ফোনে অভিজিতের মৃত্য়ুর আগের মুহূর্তের বেশ কিছু ভিডিয়ো রয়েছে। সেগুলি তদন্তকারীদের কাজে লাগতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্বজিৎ। সেই ভিডিয়ো নিয়েই সম্প্রতি সিবিআই দফতরে হাজির হন তিনি।
সিবিআই তদন্ত ভার নেওয়ার পর থেকেই এই ঘটনায় একাধিকবার অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। কখনও বিশ্বজিতের বাড়িতে গিয়েছেন তাঁরা। কখনও আবার নিজাম প্যালেস কিংবা সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হয়েছেন বিশ্বজিৎ নিজে।
সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখেই অভিজিতের বাড়িতে যান সিবিআই আধিকারিকরা। অভিজিতের মায়ের বয়ান রেকর্ড করা হয় বলে সূত্রের খবর। ফের সিবিআইয়ের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে বিশ্বজিৎ নালিশ জানান আধিকারিকদের কাছে।
দীর্ঘ কয়েক মাস লাশকাটা ঘরে পড়েছিল অভিজিতের দেহ। শেষে ডিএনএ রিপোর্টে দেখে ভাইয়ের শ্রাদ্ধের ব্যবস্থা করেছেন দাদা। চলতি মাসেই তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়। পরিবারেরও অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতেই খুন হয়েছেন অভিজিৎ। প্রমাণ ধামাচাপা দিতে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে বলেও অভিযোগ পরিবারের। এই টানাপোড়েনেই গত কয়েক মাস ধরে মর্গে পড়েছিল অভিজিতের দেহ। তবে শেষমেশ ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার পর দেহ দাহ এবং শ্রাদ্ধপর্ব সারেন অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে বলে আগেই অভিজিতের পরিবারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: ‘ওঁর মুখে যা আসে তাই বলেন’, কটাক্ষ দিলীপের, টিকাকরণে ‘জুমলাবাজি’-র অভিযোগ মমতার