Durga Puja 2021: ‘বেঁচে থাকলে ওঁর দ্বিতীয় পুজো হত’, কলকাতার এই পুজোর থিম ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’!

Durga Puja: এই পুজো মণ্ডপে গেলে কোনও শিল্পসত্ত্বা বা আলোর কারসাজি দেখা যাবে না। গান-বাজনাও নেই পুজো মণ্ডপে। পুজো মণ্ডপটাকেই যেন ঢেকে রয়েছে অদ্ভুত নীরবতা। উদ্যোক্তারা বলছেন, এটাই হয়ত থিম আবার বাস্তবও বলা যেতে পারে। নির্বাক এই পুজো যেন কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। কারণ?

Durga Puja 2021: 'বেঁচে থাকলে ওঁর দ্বিতীয় পুজো হত', কলকাতার এই পুজোর থিম 'ভোট পরবর্তী হিংসা'!
পুজোর থিম ভোট পরবর্তী হিংসা। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 09, 2021 | 5:35 PM

সুজয় পাল: করোনা আবহে দ্বিতীয় দুর্গাপুজো (Durga Puja 2021)। নিত্যনতুন ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে থিম পুজো করছে বিভিন্ন ক্লাব। তবে এই পুজোয় কোনও থিম নেই। জৌলুস-ও নেই। কোনও শিল্পীর হাতের কারিগরি নেই। নেই সেরা পুজোর পুরস্কার জেতার দৌড়। তবু এই পুজো-ও থিমের। আর থিমের নাম ‘ভোট-পরবর্তী হিংসা’ (Post Poll Violence)।

কলকাতার কাঁকুড়গাছির এই পুজো মণ্ডপে গেলে কোনও শিল্পসত্ত্বা বা আলোর কারসাজি দেখা যাবে না। গান-বাজনাও নেই পুজো মণ্ডপে। পুজো মণ্ডপটাকেই যেন ঢেকে রয়েছে অদ্ভুত নীরবতা। উদ্যোক্তারা বলছেন, এটাই হয়ত থিম আবার বাস্তবও বলা যেতে পারে। নির্বাক এই পুজো যেন কিছু একটা বলার চেষ্টা রয়েছে। কারণ, এই পুজো মণ্ডপের বাইরে থাকছে সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের পরবর্তী হিংসায় ‘শহিদ’দের ছবি। ওই ছবি গুলি দিয়েই মণ্ডপের চারপাশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

ভোটের সময় কাঁকুড়গাছিতে মৃত্যু হয় বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের। আঙুল ওঠে শাসক শিবিরের দিকে। তাঁর হাতেই শুরু হয়েছিল এখানকার দুর্গাপুজো। ভাইয়ের অনুপস্থিতে এবার সেই পুজোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন বিশ্বজিৎ সরকার। নাম দিয়েছেন ‘স্মৃতির পুজো’। অভিজিৎ বেঁচে থাকলে এবছর তাঁর পুজো এবার দ্বিতীয় বছরে পড়ত। কিন্তু সেই সুযোগটা তিনি পেলেন না। কারণ গত ২ মে, ভোটের ফল প্রকাশের দিন দুষ্কৃতীদের হাতে নিহত হন এই বিজেপি কর্মী।

যেহেতু ভোট পরবর্তী হিংসায় অভিজিৎকে খুন হতে হয় বলে দাবি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের, তাই ‘স্মৃতির পুজো’-য় এবার সেটাই তুলে ধরা হচ্ছে। তাই থিম ‘ভোট-পরবর্তী হিংসা’। মণ্ডপ সজ্জায় কোনও কারুকাজ বা আলোকসজ্জার লড়াই নয়, ভোট-পরবর্তী হিংসায় গোটা রাজ্যে যে ৪০ জনের খুন করা হয়েছে বলে দাবি বিজেপির, তাঁদের ছবি দিয়েই কার্যত মুড়ে ফেলা হবে পুজো মণ্ডপের সংলগ্ন এলাকাও। দেওয়া থাকবে প্রত্যেকের ছবি ও নাম। এটাই পুজোর থিম, বলছেন অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার।

তাঁর কথায়, “এই পুজো ভাই শুরু করেছিল। তাকে ভোট পরবর্তী হিংসায় খুন হতে হয়েছে। রাজ্যজুড়ে আরও বহু মানুষকে খুন করা হয়েছে। তাই আমরা এই পুজোর মাধ্যমে মানুষের মনে আবার সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলাম। এটাই আমাদের পুজোর থিম। খুন হওয়া সেই মানুষগুলিকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি মানুষের সামনে ভোট-পরবর্তী হিংসার সেই ভয়ঙ্কর মুহূর্তটা তুলে আনার চেষ্টা করার জন্যই এরকম ফ্লেক্স দেওয়া হয়েছে। মা দুর্গার কাছে আমাদের প্রার্থনা যে অসুরগুলো প্রিয়জনদের কেড়ে নিয়েছে, তাদের যেন মা যোগ্য শাস্তি দেয়।”

কাঁকুড়গাছির এই পুজোয় অন্য পুজোর মতো সেই আনন্দ, উল্লাস নেই। আছে স্মৃতি। দুঃখের। ৩২ বছরের তরতাজা প্রাণকে শেষ করে দেওয়ার সেই দুঃখকে সঙ্গে নিয়েই পুজো চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অভিজিতের দাদা ও মা। পুজোর মাধ্যমেই অভিজিতের স্মৃতিটুকু আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চায় পরিবার। তাই পুজোর মাধ্যমে একদিকে যেমন অভিজিতের স্মৃতিকে ধরে রাখছেন তাঁরা, তেমনই ভোট-পরবর্তী হিংসাকে সামনে এনে বার্তা দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে। বার্তা তাঁদের উদ্দেশ্যে যারা রাজ্যজুড়ে ভোট পরবর্তী সময়ে হিংসা চালিয়েছে, মানুষের থেকে তাদের প্রিয়জনকে কেড়ে নিয়েছে। তাই এই পুজোর কোনও জৌলুস না থাকলেও বার্তাটা অত্যন্ত জোরাল বলেই দাবি তাঁদের।

আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: থিম পুজোয় জুতোর ব্যবহার, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে সরব শুভেন্দু, তথাগতরা