Rajib Banerjee: ‘কাকে দালাল বলছেন, তিনি অন্য কোনও দলের দালাল নন তো?’
Dilip Ghosh: প্রথম থেকেই অন্য দল ভাঙিয়ে বিজেপিতে যোগদান করানো নিয়ে দিলীপ ঘোষ যে খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না, দিলীপ-ঘনিষ্ঠরা তেমনটাই দাবি করেন।
কলকাতা: রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee) দল ছাড়ার দিনই বিস্ফোরক ফেসবুক পোস্ট দিলীপ ঘোষের। দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘এখনও দলে কিছু দালাল রয়ে গিয়েছে। তারা উৎপাত করছে। তাদের বাদ দিতে হবে।’ তাঁর এই পোস্ট ঘিরেই শুরু রাজনৈতিক তরজা। সোমবার কলকাতায় ফেরার পরেই সরাসরি বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন রাজীব। পাল্টা, দিলীপকে (Dilip Ghosh) ‘দালাল’ বলে কটাক্ষ করলেন তিনি।
কলকাতা বিমানবন্দরে সোমবার রাজীব বলেন, “দিলীপবাবু কাকে দালাল বলছেন? তিনি অন্য কোনও দলের দালাল নন তো? কাকে দালাল বলছেন তা স্পষ্ট করুন। শুভেন্দুকে বলছেন, অর্জুন সিং-কে বলছেন সেটা স্পষ্ট করুন।” রাজীবের এই মন্তব্যের পাল্টা দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমি আমার পোস্টে কাকে দালাল বলেছি তা তো রাজীবের জানার কথা নয়। যাঁদের বলেছি, তাঁরা ঠিকই বুঝে গিয়েছেন।”
এখানেই না থেমে দিলীপের আরও সংযোজন, “আমরা ভুল করেছিলাম রাজীবকে ভরসা করে। ওঁ ভরসার যোগ্য ছিলেন না। তাই আজ তৃণমূলে গিয়েছেন। আমার পোস্টটা দলের সেইসব নেতা-কর্মীদের যাঁরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে নানা কথা বলে বেড়াচ্ছেন। যাঁদের বলেছি তাঁরা ঠিকই বুঝে গিয়েছেন। কে দালাল আর কে দালাল নয় তার জন্য আমাদের পরীক্ষা দিতে হবে না। ”
বস্তুত, বিতর্কের সূত্রপাত, রবিবার দিলীপ ঘোষের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে। রবিবার সন্ধ্যায় দিলীপ ঘোষ ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘অনেক দালাল নির্বাচনের আগে আমাদের দলে ঢুকে গিয়েছিলেন। কিছুজন গিয়েছেন, কিছু এখন রয়েছেন। তাঁরা উৎপাত করছেন। সবাইকে বাদ দেব। এরা চায় না বিজেপি শক্তিশালী হোক।’
প্রথম থেকেই অন্য দল ভাঙিয়ে বিজেপিতে যোগদান করানো নিয়ে দিলীপ ঘোষ যে খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না, দিলীপ-ঘনিষ্ঠরা তেমনটাই দাবি করেন। তিনি প্রথম থেকেই বলে এসেছেন, ক্ষমতার জন্য বিজেপিতে এলে তাঁদের টিকে থাকা মুশকিল। এদিনও তাঁর পোস্টে সে কথাই উঠে এল। কারও নাম করে কিছু না লিখলেও, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া যে সমস্ত নেতারা দলের কোনও কাজে আসেন না, দিলীপের লক্ষ্য তাঁরাই।
তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গেলেও এখনও এমন বহু নেতা আছেন, যাঁদের দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায় না। এমনকী মিটিং মিছিলেও থাকেন না তাঁরা। সংগঠনকে মজবুত করার পক্ষে এ ধরনের ঘটনা যে অন্তরায় তা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। তাঁরা ভিতরে ভিতরে দলের ক্ষতি করছেন বলেই দাবি বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের। তিনি পরিষ্কার এদিন হুঙ্কার দেন, এবার সেই সব নেতাদের তাড়ানোর সময় এসেছে।
বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার আবারও ফিরে গেলেন পুরনো দলেই। ত্রিপুরায় গিয়ে হাওড়ার নেতা হাতে তুলে নিলেন ঘাসফুল পতাকা। রাজীবের দলবদলের জল্পনা একুশের ফল প্রকাশের পর থেকেই। তবে চূড়ান্ত দিনক্ষণ যে অক্টোবরের শেষদিন হবে, তা নিশ্চিত ছিল না কেউই। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা রাজীবের এই ‘ঘরওয়াপসি’ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, “আমরা তো প্রথম থেকেই জানি। যেদিন ভারতীয় জনতা পার্টি সরকার গড়তে পারেনি জানি এরা চলে যাবে। কিন্তু যাচ্ছিল না কেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সেই হিসাব আমরা কষছিলাম।”
এদিন দমদমে বিজেপির এক অনুষ্ঠানে গিয়ে রাহুল সিনহা বলেন, “গিয়েছে পাপ বিদায় হয়েছে, আপদ বিদায় হয়েছে। তৃণমূলকে ধন্যবাদ। ভারতীয় জনতা পার্টির ময়লা সাফাইয়ের কাজটা তৃণমূল কংগ্রেস করে দিল। যারা কেবল মাত্র ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করে, কিছু পাওয়ার জন্য রাজনীতি করে, মানুষ সেবার জন্য বা দেশ সেবার জন্য রাজনীতি করে না তারা কোনও ভাবেই বিজেপিতে টিকতে পারবে না। সে কারণে এই জাতীয় ক্ষমতালোভী নেতাদের মানুষ চিনে রাখছে। ঠিক সময়মতো মানুষ তাদের জবাব দেবে।”
এদিকে রাজীবের দলে ফেরা নিয়ে যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব যেন কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টই তাঁর ‘অভিমান’ প্রকাশ করেছেন। রাজীবের দলে ফেরা নিয়ে বিশেষ কথা বলতে চাননি মদন মিত্র বা অনুব্রত মণ্ডলের মতো তৃণমূলের আদি নেতারা। অন্যদিকে, তৃণমূল নেত্রী সুজাতা মণ্ডল খাঁ-র দাবি, যাঁরা দলের দুর্দিনে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের খুব দ্রুত বিশ্বাস করা উচিত নয়। সময় নিয়ে ভেবেচিন্তেই দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: Soumitra Khan: ‘আপনি তো বিজনেসম্যান, কিছুই বোঝেননি…সেরেল্যাক খান মাঝে মাঝে’