শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার আজ বড় দিন। SSC মামলার রায় ঘোষণা করলেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সাব্বির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। জানিয়ে দিল, বেআইনি ভাবে সমস্ত চাকরি বাতিল। বাতিল হল ২৩ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি। এতদিন ধরে বেআইনিভাবে পাওয়া চাকরিতে যে বেতন পাচ্ছিলেন, সে টাকাও সুদ সমেত ফেরত দিতে হবে। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে মামলার শুনানি চলে।
বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ এদিন ২০১৬ সালের পরীক্ষার প্যানেলের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের গোটা প্যানেলই বাতিল করে দেয়। একমাত্র সোমা দাস নামে এক শিক্ষিকার চাকরি থাকছে। তিনি ক্যানসারের রোগী। সবিস্তারে পড়ুন: SSC মামলার রায় নিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন…
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একাধিক বড় রায় দিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে গ্রুপ সি কর্মীদের চাকরিও বাতিল হয়। পরে বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি রাজনীতিতে যোগ দিলে, বিরোধী ও সমালোচকরা তাঁর রায় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ দিন এসএসসি দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা হতেই প্রমাণ হয়ে গেল, প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় ভুল ছিল না।
বিস্তারিত পড়ুন: প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় সঠিক, প্রমাণ হাইকোর্টের রায়েই!
নলহাটির মেয়ে সোমা দাস। ২০১৯ সাল থেকে চাকরির দাবিতে আন্দোলনে পথে নামেন তিনি। আর পাঁচজনের মতোই হকের দাবিতে লড়ছিলেন। এরইমধ্যে এক সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, তাঁর লড়াই শুধু চাকরির জন্যই নয়, আরও এক লড়াই লড়ে চলেছেন নিরন্তর। সবিস্তারে পড়ুন: ২২ হাজারের মধ্যে একমাত্র সোমা দাসেরই চাকরি থাকল, জানেন কে তিনি?
২০১৬ সালের এসএসসি মামলার রায় ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্ট। ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল, অর্থাৎ গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হল ২৩ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল হল। তবে প্রশ্ন উঠছে, গোটা ২০১৬ সালের চাকরিপ্রাপকদের মধ্যে অনেকেই তো যোগ্য রয়েছেন, তাহলে তাঁদের কী হবে? তাঁদের তো চাকরি গেল? সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট বলছে, ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিট পুর্নমূল্যায়ন হবে। সেক্ষেত্রে যোগ্য চাকরিপ্রাপকদের ওএমআর শিটও পুর্নমূল্যায়ন হবে। ফলে তাঁদেরও চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এবং হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, নতুন চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়া ১৫ দিনের মধ্যেই শুরু হবে।
বিস্তারিত পড়ুন: ১৫ দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে চাকরি, কীভাবে হবে যোগ্যদের বাছাই?
শূন্যপদ ছিল ২৪ হাজারের কিছু বেশি। এই নিয়োগে দেখা যায়, ২৫ হাজারেও বেশি চাকরি পেয়েছেন। ২৪ হাজার ৭৫৩ জনের মধ্যে হয়তো নিয়োগপত্র নেননি। সেক্ষেত্রে সংখ্যা ২২ হাজারের কিছু বেশি। এদিনের শুনানিতে বিচারপতি দেবাংশু বসাক দুটি কথা উল্লেখ করেছেন। বিচারপতি জানিয়েছেন, তাঁদের আর কোনও উপায় ছিল না, তাই এই গোটা প্যানেল বাতিল করা হয়েছে। দুই. রাজ্য সরকার কোথাও জানত, এই প্যানেলে কোথাও কোনও দুর্নীতি হয়েছে, তার জন্যই সুপার নিউমেরিক পোস্টের আবেদন তারা করেছিল। আইনজীবী সুদীপ্ত বসাক বলেন, “বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ উঠছিল, যে তিনি প্রভাবিত হয়ে এই ধরনের রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে এটাও স্পষ্ট, দুর্নীতি হয়েছিলই। তার পুরো প্যানেল বাতিল করল। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় অনেক দয়ালু, তাই পুরো প্যানেল বাতিল করেননি।” আইনজীবী আরও বলেন, “শুনানির সময়ে ডিভিশন বেঞ্চ বারবার রাজ্য সরকার ও এসএসসি-কে জিজ্ঞাসা করেছিল কারা প্রকৃত, তার হিসাবটা দিতে। এই হিসাব আদালতে জমা দিতে পারেনি। বরং দেখা গিয়েছে, যত রেকমেনডেশন এসএসসি দিয়েছিল, তার থেকে বেশি লোক চাকরি করছে। তাই বিচারপতি বলেন, প্যানেল বাতিল করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।”
মামলাকারীদের আইনজীবী বলেন, “২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করা হয়েছে। সবার মাইনে ফেরত দিতে হবে। ডিএম-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিআই সেটা ডিএম-কে দেবে চার সপ্তাহের মধ্যে। ২০১৬ সালের চারটে নিয়োগ প্রক্রিয়া- গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম- দশম, একাদশ-দ্বাদশ- সকলেরই প্যানেল বাতিল করা হয়েছে। সবাইকে বেতন ফেরত দিতে হবে। ৬ সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফিরত দিতে হবে। বেতন ফেরত হয়েছে কিনা, সেটা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ডিআই-কে দেওয়া হয়েছে।”
এখনও আদালতের রায়ের অর্ডার কপি আপলোড হয়নি। তবে ২৪ হাজার ৬৪০ শূন্যপদ ছিল গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে। তবে বোর্ড যে তথ্য দেয় তাতে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের নিয়োগপত্র ইস্যু করে। তবে নিয়োগপত্র ইস্যু হলেও সকলেই যে চাকরি পেয়েছেন তেমনটা নয়। ফলে সংখ্যাটা ২২ হাজারের মতো হতে পারে। রায়ের কপি সামনে এলে সংখ্যাটা স্পষ্ট হবে।
বেআইনিভাবে পাওয়া সমস্ত চাকরি বাতিল। সোমবার জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সাব্বির রশিদের ডিভিশন বেঞ্চ। যাঁরা এতদিন বেআইনিভাবে পাওয়া চাকরি করছিলেন, তাঁদের সুদ সমেত এতদিনের বেতন টাকা ফেরত দিতে হবে।
সোমবার সকালে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। কুণাল লেখেন, ” শিক্ষক চাকরি মামলা। যেখানে ভুল, অন্যায়, ব্যবস্থা হোক। দোষীরা শাস্তি পাক। কিন্তু, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি যেন বাধা না পায়।“
শিক্ষক চাকরি মামলা।
যেখানে ভুল, অন্যায়, ব্যবস্থা হোক। দোষীরা শাস্তি পাক।
কিন্তু, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি যেন বাধা না পায়। @MamataOfficial র সরকার আন্তরিক সদিচ্ছা নিয়ে তাদের চাকরির চেষ্টা করেছে। কিছু অন্যায়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যেন যোগ্যদের অনিশ্চয়তায় ফেলে না দেওয়া হয়।…— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) April 22, 2024
মামলাকারী এবং চাকরিপ্রার্থদের প্রবেশেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সকলকেই হাই কোর্টের দরজায় আটতে দিচ্ছে। প্রবেশের আগে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। প্রয়োজন বুঝলে তবেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
এসএসসি মামলার রায় ঘোষণার আগে হাই কোর্টে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা। আর পাঁচটা দিনের তুলনায় এদিন হাইকোর্ট চত্বরে বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সকলের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। যে ভবনে রায় ঘোষণা হবে, সেখানে সাধারণের ঢোকার ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
টেট (প্রাথমিক স্কুল) এবং এসএসসি-র (মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক) দুই ক্ষেত্রেই রয়েছে অভিযোগ। টেট মামলা আপাতত সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। সোমবার এসএসসির চাকরি বাতিলের মামলার রায় ঘোষণা হবে কলকাতা হাই কোর্টে।
গত তিন বছরে এই মামলা বাংলার রাজ্য রাজনীতিতে বিশাল আলোড়ন ফেলে। স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের ছবি প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগ, ওঠে শিক্ষক নিয়োগে হয়েছে দুর্নীতির খেলা। অশিক্ষক নিয়োগেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। কলকাতা হাইকোর্টের গণ্ডি পেরিয়ে মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশেই সাড়ে তিন মাস ধরে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে মামলার শুনানি চলেছে।